
একসময় প্রিন্টার ছিল কেবল বড় অফিস বা সাইবার ক্যাফের এক অপরিহার্য যন্ত্র। কিন্তু ডিজিটাল যুগে আমরা যখন দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব কাজে কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল, তখন ঘরের কোণে একটি প্রিন্টারের প্রয়োজনীয়তাও ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ি, অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান - প্রায় সবক্ষেত্রেই এই ডিভাইস ব্যবহার অপরিহার্য। এটি কেবল ডকুমেন্ট বা ছবি প্রিন্ট করার জন্য নয়, বরং কাজের দক্ষতা বাড়াতে, সময় বাঁচাতে এবং পেশাদার মান বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বাজারে বিভিন্ন প্রযুক্তি, ফিচার এবং দামের printer পাওয়া যায়, তাই সঠিক পছন্দ করা কিছুটা জটিল হতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা প্রিন্টারের ধরন, প্রযুক্তি, ব্যবহারিক দিক এবং কেনার আগে যা জানা জরুরি, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
প্রিন্টার কী এবং কেন এটি আপনার জীবনকে সহজ করে?
সহজ ভাষায়, প্রিন্টার হলো একটি আউটপুট ডিভাইস যা কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিজিটাল সোর্স থেকে টেক্সট ও গ্রাফিক্সকে কাগজের মতো ভৌত মাধ্যমে মুদ্রণ করে। এর গুরুত্ব কেবল ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আরও অনেক বিস্তৃত:
- তাত্ক্ষণিক অ্যাক্সেস: গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, টিকিট বা ফর্ম প্রিন্ট করে তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলোর ভৌত কপি হাতের কাছে পাওয়া যায়।
- সৃজনশীলতা প্রকাশ: ফটোগ্রাফার, ডিজাইনার বা শৌখিন ব্যবহারকারীরা তাদের কাজকে বাস্তব রূপ দিতে পারেন, যা ডিজিটাল স্ক্রিনে দেখার চেয়ে অনেক বেশি সন্তোষজনক।
- ব্যাকআপ ও সংরক্ষণ: ডিজিটাল ফাইলের পাশাপাশি ভৌত কপি তৈরি করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা স্মৃতি সংরক্ষণ করা যায়।
- শিক্ষাক্ষেত্রে অপরিহার্য: শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট, নোট বা গবেষণাপত্র প্রিন্ট করার জন্য printer একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রিন্টারকে শুধু একটি যান্ত্রিক যন্ত্র ভাবলে ভুল হবে; এটি আমাদের ডিজিটাল কাজকে বাস্তব জগতে নিয়ে আসার একটি সেতু।
প্রিন্টারের ধরন ও ব্যবহার
১. ইঙ্কজেট Printer (Inkjet Printer):
ইঙ্কজেট প্রিন্টার সূক্ষ্ম নজলের মাধ্যমে তরল কালি কাগজের উপর ছিটিয়ে ছবি বা টেক্সট তৈরি করে। ছবি প্রিন্টের জন্য এটি সবচেয়ে উপযোগী, কারণ এটি বিভিন্ন ধরনের কাগজে প্রিন্ট করতে সক্ষম, যেমন ফটো পেপার বা গ্লসি পেপার। দাম সাধারণত কম হলেও এর কালি তুলনামূলক বেশি খরচ হয়। এই ধরনের printer ফটোগ্রাফার, গ্রাফিক ডিজাইনার, বা বাড়িতে যারা ছবি প্রিন্ট করতে চান কিংবা অল্প সংখ্যক ডকুমেন্ট প্রিন্ট করেন তাদের জন্য আদর্শ।
২. লেজার Printer (Laser Printer):
লেজার প্রিন্টার লেজার রশ্মি দিয়ে ড্রামকে চার্জ করে, যা টোনার পাউডার আকর্ষণ করে এবং তাপ ও চাপের মাধ্যমে কাগজে স্থায়ী করে। এটি দ্রুত গতিতে প্রিন্ট করতে সক্ষম এবং প্রতি পৃষ্ঠার খরচ তুলনামূলকভাবে কম। টেক্সট প্রিন্টের মান অত্যন্ত উন্নত হওয়ার পাশাপাশি এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রচুর পরিমাণে প্রিন্টের জন্য উপযোগী। অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা যারা নিয়মিতভাবে বড় পরিমাণে কালো-সাদা ডকুমেন্ট প্রিন্ট করেন তাদের জন্য লেজার প্রিন্টার সবচেয়ে ভালো সমাধান।
৩. ইঙ্কট্যাঙ্ক Printer (Ink Tank Printer):
ইঙ্কট্যাঙ্ক প্রিন্টার মূলত ইঙ্কজেট প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি, তবে ছোট কালির কার্তুজের পরিবর্তে বড়, রিফিলযোগ্য কালির ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো প্রতি পৃষ্ঠার খরচ অত্যন্ত কম, তাই এটি উচ্চ পরিমাণে প্রিন্ট করার জন্য দারুণ সাশ্রয়ী। বারবার কার্তুজ পরিবর্তন করার ঝামেলা না থাকায় ব্যবহারকারীরা এটি সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন। ছোট অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা যারা ঘন ঘন প্রিন্ট করেন এবং খরচ বাঁচাতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ পছন্দ।
৪. মাল্টিফাংশন Printer (All-in-One/MFP):
মাল্টিফাংশন প্রিন্টার এমন একটি ডিভাইস, যেখানে প্রিন্ট, স্ক্যান, কপি এবং অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাক্স করার সুবিধা একইসাথে থাকে। এটি ইঙ্কজেট এবং লেজার উভয় প্রযুক্তিতেই পাওয়া যায়। স্থান সাশ্রয়ী এবং খরচ সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে আলাদা আলাদা যন্ত্র কেনার প্রয়োজন হয় না। একাধিক কাজ একসাথে করার জন্য ছোট অফিস বা বাড়িতে ব্যবহারকারীদের কাছে এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর সমাধান। যারা শুধু প্রিন্ট নয়, স্ক্যান ও কপির কাজও নিয়মিতভাবে করেন, তাদের জন্য মাল্টিফাংশন প্রিন্টার সেরা বিকল্প।
৫. পোর্টেবল Printer (Portable Printer):
পোর্টেবল প্রিন্টার ছোট আকারের এবং হালকা ওজনের হওয়ায় সহজে বহন করা যায়। এটি ব্যাটারিচালিত এবং সাধারণত ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটির মাধ্যমে কাজ করে। ভ্রমণের সময় বা চলন্ত অবস্থায় ডকুমেন্ট বা ছবি প্রিন্ট করার জন্য এটি আদর্শ। বিশেষ করে ফটোগ্রাফাররা ইভেন্টে সাথে সাথেই ছবি প্রিন্ট করতে এই ধরনের প্রিন্টার ব্যবহার করে থাকেন। একইসাথে যারা ভ্রমণে থাকাকালীন ডকুমেন্ট প্রিন্টের প্রয়োজন অনুভব করেন, তাদের জন্যও এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি সমাধান।
প্রিন্টার কেনার আগে যা যা জানা জরুরি
বাংলাদেশের বাজারে এখন নানা ব্র্যান্ড, প্রযুক্তি ও দামের প্রিন্টার সহজলভ্য। এত বৈচিত্র্যের কারণে নতুন ক্রেতাদের জন্য সঠিক মডেল বেছে নেওয়া অনেক সময় ঝামেলাপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগে থেকে জেনে রাখলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয় এবং সঠিক printer কেনা সম্ভব হয়।
আপনার প্রিন্টিংয়ের ধরণ ও পরিমাণ জানুন
প্রথমেই ভেবে দেখুন আপনার প্রিন্টিংয়ের ধরন কী এবং আপনি কতটা প্রিন্ট করবেন। যদি ছবি বা রঙিন ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার প্রয়োজন বেশি হয়, তাহলে ইঙ্কজেট বা ইঙ্কট্যাঙ্ক প্রিন্টারই হবে সেরা পছন্দ। এগুলো রঙের গভীরতা ও ডিটেইলস নিখুঁতভাবে তুলে ধরে। অন্যদিকে যদি শুধু কালো-সাদা টেক্সট প্রিন্ট করতে হয় এবং পরিমাণও বেশি হয়, তবে লেজার printer হবে সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী সমাধান।
প্রিন্টিংয়ের খরচ বুঝে নিন
প্রিন্টার কেনার সময় শুধু প্রাথমিক দামের দিকে তাকানো উচিত নয়। অনেক সময় সস্তা মডেলের ক্ষেত্রে কালি বা টোনারের খরচ এত বেশি হয় যে দীর্ঘমেয়াদে মোট ব্যয় বেড়ে যায়। তাই প্রতিটি কার্টিজ বা টোনার দিয়ে কত পৃষ্ঠা ছাপানো যাবে এবং প্রতি পাতার খরচ কত দাঁড়াবে, তা আগে থেকেই হিসাব করা জরুরি। সাধারণভাবে ইঙ্কট্যাঙ্ক প্রিন্টারের খরচ সবচেয়ে কম।
কানেক্টিভিটি কীভাবে হবে
প্রিন্টার কেনার আগে ভেবে দেখুন আপনি কোন ধরনের কানেক্টিভিটি চান। USB সংযোগ সবচেয়ে সাধারণ হলেও আধুনিক ব্যবহারের জন্য Wi-Fi যুক্ত printer অনেক বেশি সুবিধাজনক। এতে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট থেকেও সহজে প্রিন্ট করা যায়। অফিস ব্যবহারের জন্য Ethernet সংযোগ বেশ কার্যকর। এছাড়া এখন অনেক প্রিন্টারে মোবাইল অ্যাপ সাপোর্ট থাকে যার মাধ্যমে সরাসরি স্মার্টফোন থেকে প্রিন্ট করা যায়।
প্রিন্ট স্পিড বা গতি
প্রিন্টারের গতি নির্ধারণ করে এটি প্রতি মিনিটে কত পৃষ্ঠা প্রিন্ট করতে পারে। বাসা বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সাধারণত ১০ থেকে ১৫ পৃষ্ঠা প্রতি মিনিট যথেষ্ট। তবে অফিসে প্রচুর ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার প্রয়োজন হলে ২০ বা তার বেশি স্পিডের প্রিন্টার দরকার হতে পারে। ছবি প্রিন্টের ক্ষেত্রে গতি ততটা জরুরি নয়, সেখানে গুণগত মানটাই মুখ্য।
প্রিন্ট রেজোলিউশন বা ছবির মান
টেক্সট ডকুমেন্টের জন্য ৬০০x৬০০ DPI রেজোলিউশন যথেষ্ট। কিন্তু রঙিন ডকুমেন্ট বা সাধারণ ছবির জন্য কমপক্ষে ১২০০ DPI থাকা দরকার। যদি হাই-কোয়ালিটি ফটো প্রিন্ট করতে চান, তবে ৪৮০০ DPI বা তার বেশি রেজোলিউশন সমৃদ্ধ প্রিন্টার বেছে নেওয়াই ভালো।
কাগজ ব্যবস্থাপনা
কোন ধরনের কাগজে আপনি প্রিন্ট করবেন এবং কত পরিমাণে প্রিন্ট করবেন সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অফিস ব্যবহারের জন্য বড় ধারণক্ষমতার কাগজ ট্রে দরকার হয় যাতে একসাথে অনেক কাগজ রাখা যায়। আবার ফটো পেপার, কার্ডস্টক বা এনভেলপ ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে নিশ্চিত হতে হবে আপনার প্রিন্টার এসব সাপোর্ট করে।
ডুপ্লেক্স প্রিন্টিংয়ের সুবিধা
ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং মানে হলো একসাথে কাগজের দুই পাশে প্রিন্ট করা। এটি কাগজ সাশ্রয় করে এবং পরিবেশবান্ধব। একই সঙ্গে বারবার হাতে কাগজ উল্টে দেওয়ার ঝামেলাও থাকে না। যারা নিয়মিত অনেক ডকুমেন্ট প্রিন্ট করেন তাদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা।
ব্র্যান্ড এবং ওয়ারেন্টি
সঠিক ব্র্যান্ড নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে Canon, HP, Epson, Brother, Samsung এবং Pantum বেশ জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য। কেনার সময় অবশ্যই ওয়ারেন্টি শর্তগুলো দেখে নেওয়া উচিত, বিশেষ করে প্রিন্ট হেড বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের জন্য ওয়ারেন্টি থাকলে তা বাড়তি নিশ্চয়তা দেয়।
অতিরিক্ত ফিচার
অনেক প্রিন্টারে এখন বাড়তি ফিচার থাকে যা ব্যবহার আরও সহজ করে তোলে। যেমন মাল্টিফাংশন মডেলে ADF থাকলে একসাথে অনেকগুলো পৃষ্ঠা স্ক্যান বা কপি করা যায়। টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে থাকলে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ আরও সহজ হয়। এমনকি কিছু মডেলে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কমান্ড নেওয়ার সুবিধাও দেয় যা স্মার্ট অফিস পরিবেশে বেশ কার্যকর।
ব্যবহারকারীর রিভিউ এবং গবেষণা
পণ্য কেনার আগে ব্যবহারকারীর রিভিউ পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রিভিউ থেকে আপনি জানতে পারবেন একটি নির্দিষ্ট মডেল তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করছে কি না এবং অন্য ব্যবহারকারীরা এর ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা কেমন পেয়েছেন। এছাড়াও, পণ্য সম্পর্কে সঠিক গবেষণা করলেও আপনি আরও তথ্যভিত্তিক এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এতে আপনার বিনিয়োগ সার্থক হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো প্রিন্টার বেছে নেওয়া সহজ হবে।
Best Printer in Bangladesh - বাংলাদেশের বাজারে Printer-এর শীর্ষ মডেল ও ব্র্যান্ড
বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে অসংখ্য ব্র্যান্ড ও মডেলের প্রিন্টার পাওয়া যায়। এত বিকল্পের ভিড়ে বাড়ি, অফিস কিংবা দোকানের জন্য সঠিকটি বেছে নেওয়া সহজ নয়। আপনার সিদ্ধান্তকে সহজ করতে, এখানে ২০২৫ সালের সেরা কিছু মডেল নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. HP
HP-র প্রিন্টারগুলো, বিশেষ করে DeskJet, LaserJet এবং Smart Tank সিরিজ, নির্ভরযোগ্যতা, প্রফেশনাল ডিজাইন এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্সের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট অফিস এবং সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়।
HP Printer-এর মডেলসমূহ
HP Color Laserjet Pro M479DW All-in-One Printer |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳৭৯,৫০০ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ প্রিন্ট, স্ক্যান, কপি, ফ্যাক্স, দ্রুত প্রিন্ট স্পিড, স্মার্ট ফীচার, স্বয়ংক্রিয় ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং, উন্নত নিরাপত্তা, টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে। প্রসেসর স্পিড: 1200 MHz প্রিন্ট স্পিড (রঙিন): 27 PPM (কাগজ/মিনিট) প্রিন্ট স্পিড (সাদা-কালো): 27 PPM (কাগজ/মিনিট) ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং: স্বয়ংক্রিয় কানেক্টিভিটি: USB, Ethernet, Wi-Fi, Wi-Fi Direct ADF ক্ষমতা: 50 শীট মডেল: HP 415A (ব্ল্যাক), HP 416A (রঙিন) HP Color LaserJet Pro M479DW একটি মাল্টিফাংশনাল প্রিন্টার যা ছোট থেকে মাঝারি আকারের অফিসের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর দ্রুত প্রিন্ট স্পিড, স্বয়ংক্রিয় ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং এবং উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলি এটিকে একটি নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর সমাধান করে তোলে। ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি এবং মোবাইল প্রিন্টিং সুবিধা এটিকে আরও ব্যবহারকারী-বান্ধব করে তোলে। |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳১৮,০০০ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ প্রিন্ট, স্ক্যান, কপি, উচ্চ ধারণক্ষমতার ইঙ্ক ট্যাঙ্ক, ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি, সহজে কালি রিফিল। প্রিন্ট স্পিড (রঙিন): 5 PPM (কাগজ/মিনিট) প্রিন্ট স্পিড (সাদা-কালো): 8 PPM (কাগজ/মিনিট) রেজোলিউশন (প্রিন্ট): 4800 x 1200 DPI রেজোলিউশন (স্ক্যান): 1200 x 1200 DPI কানেক্টিভিটি: USB, Wi-Fi কালি ট্যাঙ্ক: ইন্টিগ্রেটেড, উচ্চ ক্ষমতা কালি মডেল: HP GT51 (ব্ল্যাক), HP GT52 (রঙিন) HP Ink Tank Wireless 419 একটি অল-ইন-ওয়ান ইঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রিন্টার যা উচ্চ ভলিউম প্রিন্টিংয়ের জন্য উপযুক্ত। এর ইঙ্ক ট্যাঙ্ক সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য কালি খরচ কমায় এবং ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি বাড়িতে বা ছোট অফিসের জন্য সুবিধাজনক প্রিন্টিং সরবরাহ করে। এটি সাশ্রয়ী মূল্যে নির্ভরযোগ্য এবং গুণগত মান সম্পন্ন প্রিন্টিংয়ের জন্য একটি চমৎকার পছন্দ। |
HP (Hewlett-Packard) হলো একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি, যা ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। HP বিশ্বজুড়ে প্রিন্টার, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এবং অন্যান্য পেরিফেরাল ডিভাইস বিক্রি করে। প্রায় ১৭০টির বেশি দেশে এর অফিসিয়াল সেল এবং সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। HP-এর টেকনোলজি, গুণমান এবং বৈশ্বিক সাপোর্ট এটিকে ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডে পরিণত করেছে।
২. Canon
Canon প্রিন্টারগুলি তাদের উন্নত প্রযুক্তির জন্য পরিচিত, বিশেষ করে Canon i-SENSYS এবং Pixma সিরিজগুলি। এই মডেলগুলি চমৎকার প্রিন্ট কোয়ালিটি, স্থায়িত্ব এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।
Canon Printer-এর মডেলসমূহ
Canon একটি জাপানিজ বহুজাতিক কোম্পানি, যা ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। Canon ক্যামেরা, প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন এবং অন্যান্য অপটিক্যাল পণ্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এর পণ্যগুলি তাদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, নির্ভরযোগ্যতা এবং গুণমানের জন্য সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্বজুড়ে এর বিস্তৃত সার্ভিস নেটওয়ার্ক এটিকে গ্রাহকদের কাছে একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডে পরিণত করেছে।
৩. EPSON
EPSON প্রিন্টারগুলো তাদের উদ্ভাবনী EcoTank প্রযুক্তি এবং চমৎকার প্রিন্ট কোয়ালিটির জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই প্রিন্টারগুলি উচ্চ ভলিউম প্রিন্টিংয়ের জন্য সাশ্রয়ী সমাধান প্রদান করে।
EPSON Printer-এর মডেলসমূহ
Epson EcoTank L6270 A4 Wi-Fi All-in-One Ink Tank Printer with ADF |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳৫০,০০০ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ প্রিন্ট, স্ক্যান, কপি, ফ্যাক্স, দ্রুত প্রিন্ট স্পিড, স্বয়ংক্রিয় ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং, ওয়াই-ফাই কানেক্টিভিটি, ADF (Automatic Document Feeder)। প্রিন্ট স্পিড (সাদা-কালো): 33 PPM (কাগজ/মিনিট) প্রিন্ট স্পিড (রঙিন): 20 PPM (কাগজ/মিনিট) ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং: স্বয়ংক্রিয় কানেক্টিভিটি: USB, Ethernet, Wi-Fi, Wi-Fi Direct ADF ক্ষমতা: 30 শীট Epson EcoTank L6270 একটি অল-ইন-ওয়ান ইঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রিন্টার, যা ছোট থেকে মাঝারি আকারের অফিসের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর উচ্চ ধারণক্ষমতার ইঙ্ক ট্যাঙ্ক সিস্টেম কালি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়, এবং দ্রুত প্রিন্ট স্পিড ও স্বয়ংক্রিয় ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং এটিকে অত্যন্ত কার্যকর করে তোলে। ওয়াই-ফাই কানেক্টিভিটি এবং ADF এর ব্যবহারযোগ্যতা আরও বাড়ায়। |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳১৯,৫০০ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ প্রিন্ট, উচ্চ ধারণক্ষমতার ইঙ্ক ট্যাঙ্ক, ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি, সহজে কালি রিফিল, মনোক্রোম প্রিন্টিং। প্রিন্ট স্পিড (সাদা-কালো): 32 PPM (কাগজ/মিনিট) রেজোলিউশন (প্রিন্ট): 1440 x 720 DPI কানেক্টিভিটি: USB, Wi-Fi কালি ট্যাঙ্ক: ইন্টিগ্রেটেড, উচ্চ ক্ষমতা Epson EcoTank M1050 একটি মনোক্রোম ইঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রিন্টার যা সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চ ভলিউম সাদা-কালো প্রিন্টিংয়ের জন্য আদর্শ। এর ইঙ্ক ট্যাঙ্ক সিস্টেম কালি খরচ অনেক কমিয়ে দেয়, এবং ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি এটিকে বাড়িতে বা ছোট অফিসের জন্য সুবিধাজনক করে তোলে। এটি নির্ভরযোগ্য এবং গুণগত মান সম্পন্ন ডকুমেন্ট প্রিন্টিংয়ের জন্য একটি চমৎকার পছন্দ। |
Epson একটি জাপানিজ প্রযুক্তি কোম্পানি, যা ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। Epson প্রিন্টার, প্রোজেক্টর, স্ক্যানার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বিশেষ করে এর EcoTank সিরিজ, যা কালি ট্যাঙ্ক সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের জন্য প্রিন্টিং খরচ কমিয়ে এনেছে, সেটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। Epson তার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং উচ্চ-মানের পণ্যের জন্য বিশ্বব্যাপী একটি স্বনামধন্য ব্র্যান্ড।
সেরা প্রিন্টারের মডেলের তুলনা
মডেল |
HP Ink Tank Wireless 419 All-in-One Color Printer |
Canon Pixma G3010 Refillable Ink Tank Wireless All-In-One Printer |
Epson EcoTank M1050 Monochrome Wi-Fi Ink Tank Printer |
ব্র্যান্ড |
HP |
Canon |
Epson |
দাম (টাকা) |
প্রায় ৳১৮,০০০ |
প্রায় ৳২০,০০০ |
প্রায় ৳১৯,৫০০ |
মূল বৈশিষ্ট্য |
প্রিন্ট, স্ক্যান, কপি, উচ্চ ধারণক্ষমতার ইঙ্ক ট্যাঙ্ক, ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি, সহজে কালি রিফিল। |
প্রিন্ট, স্ক্যান, কপি, উচ্চ ধারণক্ষমতার ইঙ্ক ট্যাঙ্ক, ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি, সহজে কালি রিফিল। |
প্রিন্ট, উচ্চ ধারণক্ষমতার ইঙ্ক ট্যাঙ্ক, ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি, সহজে কালি রিফিল, মনোক্রোম প্রিন্টিং। |
প্রিন্ট স্পিড (সাদা-কালো) |
8 PPM |
8 PPM |
32 PPM |
প্রিন্ট স্পিড (রঙিন) |
5 PPM |
5 PPM |
তথ্য নেই |
রেজোলিউশন (প্রিন্ট) |
4800 x 1200 DPI |
4800 x 1200 DPI |
1440 x 720 DPI |
কানেক্টিভিটি |
USB, Wi-Fi |
USB, Wi-Fi |
USB, Wi-Fi |
কালি ট্যাঙ্ক |
ইন্টিগ্রেটেড |
ইন্টিগ্রেটেড |
ইন্টিগ্রেটেড |
উৎপত্তি |
যুক্তরাষ্ট্র |
জাপান |
জাপান |
বাংলাদেশের জন্য সেরা Printer সুপারিশ
অফিস বা ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য HP Ink Tank Wireless 419 All-in-One Color Printer সেরা পছন্দ হতে পারে। এর অল-ইন-ওয়ান কার্যকারিতা (প্রিন্ট, স্ক্যান, কপি) এবং উচ্চ ধারণক্ষমতার ইঙ্ক ট্যাঙ্ক সিস্টেম ব্যবসায়িক পরিবেশে উচ্চ ভলিউম প্রিন্টিংয়ের জন্য অত্যন্ত সাশ্রয়ী। ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি এটিকে অফিসের একাধিক ব্যবহারকারীর জন্য সুবিধাজনক করে তোলে।
পরিবারের জন্য বা যারা মাঝে মাঝে রঙিন প্রিন্ট করতে চান, তাদের জন্য Canon Pixma G3010 Refillable Ink Tank Wireless All-In-One Printer একটি দুর্দান্ত সমাধান। এর সহজে কালি রিফিল করার সুবিধা এবং ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি এটিকে পারিবারিক ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী করে তোলে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টিং প্রয়োজন হয়।
যারা শুধুমাত্র সাদা-কালো প্রিন্টিং করেন এবং উচ্চ ভলিউম প্রিন্টিংয়ের প্রয়োজন, তাদের জন্য Epson EcoTank M1050 Monochrome Wi-Fi Ink Tank Printer অসাধারণ একটি পছন্দ। এর অত্যন্ত সাশ্রয়ী মনোক্রোম প্রিন্টিং এবং উচ্চ ধারণক্ষমতার ইঙ্ক ট্যাঙ্ক শিক্ষার্থীদের এবং ছোট অফিসের জন্য সেরা অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
পরিশেষে, HP Ink Tank Wireless 419 All-in-One Color Printer বাংলাদেশের জন্য সেরা সুপারিশ কারণ এটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে অল-ইন-ওয়ান কার্যকারিতা, উচ্চ ধারণক্ষমতার ইঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটির মতো আধুনিক সব প্রয়োজনীয় ফিচার প্রদান করে, যা বেশিরভাগ সাধারণ ব্যবহারকারীর বাজেট এবং দৈনন্দিন প্রিন্টিংয়ের প্রয়োজনের সাথে পুরোপুরি মানানসই।
বাংলাদেশে প্রিন্টারের এর জনপ্রিয় ব্র্যান্ডসমূহের তুলনা
বাংলাদেশে প্রিন্টার বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নিজস্ব মান, প্রযুক্তি এবং মূল্যমান অনুযায়ী আলাদা গ্রাহকশ্রেণি রয়েছে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
ব্র্যান্ড |
পরিচিতি |
গুণগত মান |
বাজারমূল্য |
HP |
HP হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড, যা নির্ভরযোগ্যতা, ব্যবহার বান্ধব ইন্টারফেস এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রিন্টারের জন্য পরিচিত। |
স্থিতিশীল পারফরম্যান্স, সহজ সেটআপ এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রিন্টার জীবন। |
বাজেট থেকে উচ্চ মূল্য |
Canon |
Canon হলো জাপানি ব্র্যান্ড, যা উচ্চমানের রঙিন প্রিন্ট, ফটোগ্রাফি এবং প্রফেশনাল ব্যবহারকারীদের জন্য বিশ্বখ্যাত। ফটো প্রিন্ট ও উচ্চমানের অফিস ডকুমেন্টে Canon প্রিন্টার জনপ্রিয়। |
উন্নতমানের হার্ডওয়্যার, উজ্জ্বল রঙ এবং উদ্ভাবনী সফটওয়্যার ফিচার। |
বাজেট থেকে উচ্চ মূল্য |
Epson |
Epson একটি জাপানি ব্র্যান্ড, যা সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের প্রিন্টিং প্রযুক্তি প্রদান করে। এটি বাজেট সচেতন হোম ব্যবহারকারী ও ছোট অফিসের জন্য জনপ্রিয়। |
দামের তুলনায় ভালো মান, দৈনন্দিন প্রিন্টিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব ফিচার সমৃদ্ধ। |
বাজেট থেকে উচ্চ মূল্য |
কাস্টমার রিভিউ ও ফিডব্যাক
"আমি আমার ছোট ব্যবসার জন্য HP Ink Tank Wireless 419 কিনেছি। আগে প্রতি মাসে কার্টিজ কিনতে কিনতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম, এখন ইঙ্ক ট্যাঙ্ক হওয়ায় খরচ অনেক কমে গেছে। প্রিন্ট, স্ক্যান, কপি সবই দারুণ কাজ করে এবং ওয়্যারলেস হওয়ায় অফিসে যেখান থেকে খুশি প্রিন্ট দিতে পারি। কালির দামও খুব সাশ্রয়ী। তবে রঙিন প্রিন্টের গতিটা আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো।"
– সাকিব আহমেদ, চট্টগ্রাম
Source: Ryans Computers
"বাড়িতে ব্যবহারের জন্য Canon Pixma G3010 নিয়েছি। আমার বাচ্চারা স্কুলের প্রজেক্টের জন্য প্রায়ই রঙিন প্রিন্ট করে, আর আমি নিজেও কিছু ছবি প্রিন্ট করি। এর প্রিন্ট কোয়ালিটি অসাধারণ, বিশেষ করে কালারগুলো খুব সুন্দর আসে। কালি রিফিল করাও খুব সহজ এবং নোংরা হয় না। ওয়াইফাই থাকায় মোবাইল থেকে সরাসরি প্রিন্ট করা যায়, যা আমার খুব পছন্দের একটি ফিচার। দামটা এইচপি-র থেকে কিছুটা বেশি হলেও মানের দিক থেকে আমি সন্তুষ্ট।"
– আশিকুর রহমান, খুলনা
Source: Star Tech
উপসংহার
প্রিন্টার কেনার আগে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন, প্রিন্টিংয়ের পরিমাণ, বাজেট এবং প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি, প্রিন্ট স্পিড, রেজোলিউশন, পেপার হ্যান্ডলিং, কানেক্টিভিটি এবং খরচের দিক বিবেচনা করে সঠিক পছন্দ করলে প্রিন্টিং অভিজ্ঞতা অনেক বেশি সুবিধাজনক, স্মুথ এবং সাশ্রয়ী হয়। ব্যবহারকারীর রিভিউ এবং পণ্য গবেষণা আরও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। সঠিক প্রিন্টার নির্বাচন করা শুধু মানসম্মত প্রিন্টিং নিশ্চিত করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে সময়, খরচ এবং ঝামেলাও বাঁচায়।