অপার সম্ভাবনা ও বিপুল জনশক্তির দেশ বাংলাদেশ। একটা সময় বাংলাদেশকে কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে ধরা হলেও প্রতিযোগীতা মূলক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে বিশ্ব মানের অসংখ্য ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থান শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য দেশের শ্রমশক্তি ও জনশক্তি একত্রে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই কোম্পানি গুলো। এতে করে যেমন তৈরি হচ্ছে বিশাল কর্মসংস্থান, দক্ষ জনশক্তি তেমনি উন্নত হচ্ছে বিশ্ব ব্যাপী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা।
এই কোম্পানিগুলো শুধু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়; তারা উদ্ভাবন, সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতির স্তম্ভ। গার্মেন্টস শিল্প, ইলেক্ট্রনিক্স, টেকনোলজি, টেলিকমিউনিকেশন, খাদ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল থেকে শুরু করে গ্রামীণ উন্নয়নে অগ্রগামী, এমন গড়ে ওঠা বিভিন্ন কোম্পানি গুলো বাংলাদেশের চলমান রূপান্তরের পিছনে চালিকা শক্তি। এই কোম্পানি গুলোর প্রসার শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, দেশের জনগণের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশের মাটিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। আমরা এখানে বাংলাদেশের সেরা কোম্পানি গুলোর তালিকা নিয়ে আলোচনা করবোঃ
বাংলাদেশের ৭ টি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি
১. এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি
দেশের বেসরকারি খাতে নেতৃত্ব দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বছরে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি আয় করছে এমন কোম্পানি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার্ষিক আয় এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের। বর্তমানে কোম্পানিটির বার্ষিক আয় ১৭০ কোটি ডলার। ১৯৪৫ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ তালিকাও বৈচিত্র্যপূর্ণ। টেলিকম, বস্ত্র, অতিথি সেবা, লজিস্টিক, কন্টেইনার টার্মিনাল, ফিশিং ও আবাসন খাতেও ব্যবসা রয়েছে কোম্পানিটির।
ব্যবসার ধরনঃ
- টেলিকম
- বস্ত্র
- অতিথি সেবা
- লজিস্টিক
- কন্টেইনার টার্মিনাল
- ফিশিং
- আবাসন
২. বসুন্ধরা গ্রুপ
বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৭ সালে যাত্রা করা সিমেন্ট, আবাসন, কাগজ ও ইস্পাত খাতের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের অন্যতম পুরনো ও সফল আবাসন প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নতুন নতুন ব্যবসায় যুক্ত হওয়া এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছে প্রায় ৫৬, ০০০ এরও অধিক কর্মী। ১৫০ কোটি ডলারের বার্ষিক আয় করা কোম্পানিটির রয়েছে বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগের খাত।
ব্যবসার ধরনঃ
- সিমেন্ট
- আবাসন
- ইস্পাত
- পেপার
- এলপিজি
- খাদ্য
৩. মেঘনা গ্রুপ
বাংলাদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় শিল্প গ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)। ১৯৭৬ সালে ছোট একটি ট্রেডিং কোম্পানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা কোম্পানিটির বর্তমান বার্ষিক আয় ১৫০ কোটি ডলার। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানে কর্মগত আছেন প্রায় ৩২,০০০ কর্মী।
ব্যবসার ধরনঃ
- ভোজ্যতেল
- গুঁড়া দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
- চিনি
- রাসায়নিক
- সিমেন্ট
- কাগজ ও প্রিন্টিং
৪. যমুনা গ্রুপ
১৮৭৪ সালে যমুনা ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু যমুনা গ্রুপের, যা বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী গুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে যমুনা গ্রুপের আওতায় আছে ২৪টি প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ১৩০ কোটি ডলার। যমুনা গ্রুপের রয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে বড় শপিংমল - যমুনা ফিউচার পার্ক।
ব্যবসার ধরনঃ
- আবাসন
- বস্ত্র
- ইলেকট্রনিক্স
- চামড়া
- মিডিয়া
- বিজ্ঞাপন
- প্রিন্ট
৫. স্কয়ার গ্রুপ
স্কয়ার ঔষধ শিল্পের জন্য খুবই পরিচিতি লাভ করলেও স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, মিডিয়া, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের বড় প্রতিষ্ঠান স্কয়ার। ১৯৫৮ সালে ছোট একটি ঔষধ কোম্পানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কাজ করেন ২৮ হাজারের বেশি মানুষ। বর্তমানে স্কয়ার গ্রুপের বার্ষিক আয় ১২০ কোটি ডলার।
ব্যবসার ধরনঃ
- ঔষুধ
- স্বাস্থ্যসেবা
- পোশাক
- খাদ্য
- টেক্সটাইল
- মিডিয়া
৬. টি কে গ্রুপ
১৯৭২ সালে দুই ভাইয়ের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ১০০ কোটি ডলার। ভোগ্যপণ্য আমদানির মধ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করা গ্রুপটির বর্তমানে রয়েছে ৪৩টিও বেশি কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের।
ব্যবসার ধরনঃ
- ভোগ্যপণ্য
- রাসায়নিক
- সিমেন্ট
- চামড়া
- কাগজ
- প্যাকেজিং এবং পাত্র
- টেক্সটাইল
৭. আকিজ গ্রুপ
আকিজ গ্রুপ হচ্ছে বাংলাদশের পুরাতন কোম্পানি গুলোর মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। ১৯৪০ সালের শেষ দিকে পাট বাণিজ্যের মাধ্যমে শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এখন নির্মাণ ও তামাক খাতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ১০০ কোটি ডলার।
ব্যবসার ধরনঃ
- নির্মাণসামগ্রী
- দুগ্ধজাত পণ্য
- সিমেন্ট
- পাট
- পানীয়
- এলপিজি
- সিগারেট
বাংলাদেশের সেরা কোম্পানি গুলোর তালিকাঃ
কোম্পানি |
আয়(ডলারে) |
ব্যবসার ধরন |
কোম্পানির পরিচয় |
বেক্সিমকো গ্রুপ |
১০০ কোটি |
ঔষুধ, পোশাক ও বস্ত্র, আবাসন, সিরামিক পণ্য |
দেশের অন্যতম বড় শিল্প গ্রুপ। বাজার মূলধনের দিক থেকে শেয়ারবাজারের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি। |
ইউনিইটেড গ্রুপ |
১০০ কোটি |
ঔষুধ, শিক্ষা, নির্মাণ, আবাসন, বিদ্যুৎ |
প্রতিষ্ঠা ১৯৭৮ সালে। বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম বড় কোম্পানি। বাজার মূলধনের দিক থেকে শেয়ারবাজারের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান। |
সিটি গ্রুপ |
১০০ কোটি |
বিদ্যুৎ, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, ভোগ্যপণ্য |
১৯৭৮ সালে যাত্রা শুরু। ভোগ্যপণ্যের বাজারে অন্যতম বড় গ্রুপ। যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ব্যবসায়। |
পিএইচপি গ্রুপ |
১০০ কোটি |
ভোগ্যপণ্য, ইস্পাত ও নির্মাণসামগ্রী, গাড়ি |
সিটি অয়েল মিলের প্রতিষ্ঠা ছিল ১৯৭২ সালে। সেখান থেকে শুরু করে দেশের অন্যতম বড় গ্রুপ। |
প্রাণ |
১০০ কোটি |
খাদ্যপণ্য, প্লাষ্টিক, আবাসন, গৃহস্থালি পণ্য |
সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পণ্য উৎপাদনের কোম্পানি। নতুন নতুন ব্যবসায় যুক্ত। |
পারটেক্স গ্রুপ |
১০০ কোটি |
খাদ্যপণ্য, নির্মাণসামগ্রী, আসবাব, আবাসন |
পারিবারিক ব্যবসার সাফল্যের আরেক উদাহরণ। |
নোমান গ্রুপ |
৯০ কোটি |
বস্ত্র, হোম টেক্সটাইল |
পোশাক ও বস্ত্র খাতের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান। |
বিএসআরএম |
৯০ কোটি |
ইস্পাত ও নির্মাণসামগ্রী |
চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি দেশের ইস্পাত খাতের অন্যতম বড় কোম্পানি। |
কেডিএস গ্রুপ |
৮০ কোটি |
তৈরি পোশাক, তথ্যপ্রযুক্তি, ইস্পাত |
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রুপের উত্থান পোশাক খাত থেকে। |
হা-মীম গ্রুপ |
৭০ কোটি |
পোশাক, বস্ত্র ও গণমাধ্যম |
ডেনিম পোশাক রপ্তানির অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান । |
এসিআই |
৬৭ কোটি |
কৃষিভিত্তিক পণ্য, স্বাস্থ্যসেবা, ভোগ্যপণ্য, রিটেইল চেইন |
ওষুধ, ভোগ্যপণ্য দিয়ে শুরু হলেও এখন কৃষিভিত্তিক শিল্পে বেশি গুরুত্ব। |
ট্রান্সকম গ্রুপ |
৬০ কোটি |
ঔষুধ, ইলেকট্রনিকস, ভোগ্যপণ্য, খাদ্যপণ্য, বেভারেজ ও মিডিয়া |
১৯৭৩ সালে যাত্রা শুরু । বর্তমানে বহু শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতে যুক্ত। ১০ হাজারের বেশি মানুষ গ্রুপটিতে কাজ করেন। |
ভিয়েলাটেক্স |
৬০ কোটি |
পোশাক, বিদ্যুৎ ও কৃষিভিত্তিক শিল্প |
পোশাকশিল্পনির্ভর আরেক বড় গ্রুপ। |
প্যাসিফিক জিনস |
৫০ কোটি |
পোশাক ও অতিথি সেবা |
পোশাক রপ্তানিতে অন্যতম সেরা কোম্পানি। |
কনফিডেন্স গ্রুপ |
৫০ কোটি |
হালকা প্রকৌশল, সিমেন্ট, পেইন্ট, বিদ্যুৎ |
মধ্যপর্যায়ের প্রকৌশল খাতে ক্রমবর্ধমান গ্রুেপ। |
ওয়ালটন |
৫০ কোটি |
ইলেকট্রনিক পণ্য, মোবাইল |
দ্রুত জায়গা করে নেওয়া কোম্পানি, মূলত ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদক। |
এই কোম্পানি গুলো দেশের ইতিবাচক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি। যাদের মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে কর্মসংস্থান,উন্মুক্ত হচ্ছে সম্ভাবনা এবং শক্তিশালী হচ্ছে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থান। নিজেদের সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি কোম্পানি গুলো দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধিতেও রাখছে উল্লেখযোগ্য অবদান।