বাংলাদেশে সেরা Organic Food Store এবং বাছাই করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত
বর্তমানে আমরা যে সব শাক-সবজি, ফল-মূল, মাংস খাচ্ছি তাতে প্রয়োগ হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক। যা শরীরের পক্ষে কোনো ভাবেই নিরাপদ নয়। এরফলে নিজেদের অজান্তেই শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রকম ব্যাধি।
কর্মব্যস্ত মানুষ প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়াজাত করা খাবারে খাদ্যের সঠিক পুষ্টিমান থাকে না। পুষ্টিকর খাবারের খোঁজ পেলে মানুষ এখন সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। বিভিন্ন অর্গানিক খাবার যেমন,- ঢেঁকিছাঁটা চাল কিংবা গ্রামের বাড়িতে চষে বেড়ানো মুরগি খুঁজে খুঁজে নিজেদের পাতে তুলছেন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের কথা চিন্তা করেই বহু কম্পানি গড়ে উঠেছে অর্গানিক ফুডের।
Organic Food বা অর্গানিক ফুড কি?
অর্গানিক ফুড বা Organic Food বলতে আমরা যে ব্যবস্থায় শস্য উৎপাদনের জন্য কৃত্রিম সার এবং কীটনাশক ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কেমিক্যাল ও হরমোন মুক্ত শস্য উৎপাদন করা হয়।
"Organic Food" এই লেভেলটি গায়ে জড়ানোর জন্য একটি খাবারকে আরো কিছু জিনিস থেকে মুক্ত হতে হবে৷ এর ভিতরে রয়েছে নানা রকমের ক্যামিকেল প্রিজারভেটিভ, ফুড কালার, ফ্রেগরেন্স এবং কৃত্রিম সুইটনার।
অর্গানিক উপায়ে তৈরিকৃত শস্যে কৃত্রিম সার প্রয়োগ করা হয় না। জৈব্যসার, সবুজ সারসহ নানা রকমের প্রাকৃতিক পন্থা অবলম্বন করা হয়। কীটনাশক ব্যবহার না করে ফেরোমন ট্রাপ জাতীয় প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়।
যেমনঃ অর্গানিক ড্রেইরির মূল আকর্ষণ হলো এন্টিবায়োটিক এবং মোটা তাজাকরণের ট্যাবলেট ছাড়া গবাদিপশু। এতে করে আমরা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারছি।
অর্গানিক ফুড হওয়ার মানদণ্ড ও শর্তাবলী:
বিভিন্ন দেশে অর্গানিক ফুডের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও তাদের মানদণ্ড থাকে, যা অনুসরণ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে USDA (United States Department of Agriculture) এবং ইউরোপে EU Organic Logo ব্যবহার করে খাবারের অর্গানিক স্ট্যাটাস নির্ধারণ করা হয়।
অর্গানিক ফুডের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও শর্ত পূরণ করতে হয়, যার মধ্যে কিছু প্রধান শর্ত হলো:
- রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করা: অর্গানিক চাষে কৃত্রিম সার, কীটনাশক বা হরমোন ব্যবহার করা হয় না। এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক সার, কম্পোস্ট, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়।
- জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম (GMO) মুক্ত: অর্গানিক ফুডে Genetically Modified Organism ব্যবহার করা যায় না।
- প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতি: ফসল চাষের ক্ষেত্রে ফসলের crop rotation পদ্ধতি, গ্রীন ম্যানুর (green manure), এবং বায়োফার্টিলাইজার ব্যবহার করতে হবে। কোনো ধরনের কৃত্রিম সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।
- পশুপালনের ক্ষেত্রে: প্রাণিসম্পদের লালন পালনের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক বা গ্রোথ হরমোন দেওয়া যাবে না। প্রাণীদের মুক্তভাবে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে পালন করতে হবে।
- প্রাণিসম্পদের খাদ্য: প্রাণিসম্পদের খাদ্যেও অর্গানিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। তার মানে তাদের খাদ্যও অর্গানিক হতে হবে।
- প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ: অর্গানিক চাষে মাটি, পানি ও পরিবেশের স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাটির উর্বরতা রক্ষা এবং পানির দূষণ প্রতিরোধ করা হয়।
- প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে: অর্গানিক ফুড প্রক্রিয়াজাত করার সময় কৃত্রিম রং, স্বাদবর্ধক বা প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা যাবে না। এবং আলট্রা প্রসেসেড পদ্ধতি ও অনুসরণ করা যাবে না। প্রক্রিয়াজাত করার জন্য সাধারণত প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং উপাদান ব্যবহার করতে হবে।
এই শর্তগুলো পূরণ করার পরই কোনো খাবারকে অর্গানিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই ব্যবসার সাধারণ পরিসংখ্যান
ভোক্তাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অর্গানিক খাবার। ফলে বাড়ছে অর্গানিক ফুডের বাজার।
বাংলাদেশে, অর্গানিক খাদ্যের বাজার এখনও তুলনামূলকভাবে ছোট, তবে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালে এর আকার ছিল $১০০ মিলিয়ন।
প্রতিবছর অর্গানিক ফুডের চাহিদা প্রায় ২০-২৫% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ৫০,০০০+ কৃষক অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন।
অর্গানিক ফুড কোম্পানি বাছাইয়ের বিবেচ্য বিষয়সমূহ
অর্গানিক ফুড কোম্পানি বাছাই করার সময় নিম্নলিখিত দিকগুলো বিবেচনা করা উচিত:
সার্টিফিকেশন: কোম্পানিটির অর্গানিক সার্টিফিকেশন পেয়েছে কিনা তা যাচাই করুন। যা অর্গানিক কৃষি এবং খাদ্যের জন্য কঠোর মানদণ্ড নির্ধারণ করে।
পণ্যের মান এবং নিরাপত্তা: পণ্যের গুণগত মান এবং খাদ্য নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করুন। পণ্য উৎপাদণে অর্গানিক প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
গ্রাহক পর্যালোচনা এবং ফিডব্যাক: অন্যান্য গ্রাহকদের পর্যালোচনা এবং রিভিউ দেখে কোম্পানির সেবার মান সম্পর্কে ধারণা নিন।
প্রাপ্তির স্থিতি: কোম্পানি কিভাবে খাবার সরবরাহ করে তা বিবেচনা করুন। হোম ডেলিভারি, অনলাইন অর্ডারিং বাবস্থা আছে কিনা।
মূল্য এবং বাজেট: পণ্যের মূল্য এবং আপনার বাজেটের মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে কিনা তা বিবেচনা করুন। অতিরিক্ত দামি বা সস্তা পণ্যগুলি এড়িয়ে চলুন।
প্রকৃতি এবং পরিবেশবান্ধব উপকরণ: কোম্পানিটি পরিবেশবান্ধব উপকরণ এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
সেবা এবং সমর্থন: কোম্পানির গ্রাহক সেবা এবং সহায়তার মান পর্যালোচনা করুন। কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান পাওয়া যায় কিনা তা দেখুন।