
বর্তমান সময়ে ভিডিও এডিটিং শুধু ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বা ফিল্ম মেকারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট তৈরি, ফ্রিল্যান্সিং এবং বিভিন্ন প্রফেশনাল কাজেও এর গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। ভিডিও এডিটিং এখন একটি জনপ্রিয় এবং উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা, যা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য ডেস্কটপ পিসি।
এই নিবন্ধে আমরা ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য সেরা পিসি তৈরির ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত, প্রয়োজনীয় কম্পোনেন্ট এবং এর আনুমানিক দাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কেন সাধারণ পিসি ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য যথেষ্ট নয়
অনেকেই মনে করেন, যেকোনো ডেস্কটপ দিয়েই ভিডিও এডিটিং সম্ভব। বাস্তবে বিষয়টা তেমন নয়। ভিডিও এডিটিং একটি হাই-রিসোর্স টাস্ক, যেখানে CPU, RAM, GPU এবং স্টোরেজ একসাথে চাপের মুখে কাজ করে। একটি সাধারণ পিসিতে ভিডিও এডিটিং করা প্রায়শই হতাশাজনক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়, কারণ এতে ল্যাগ, ক্র্যাশ এবং রেন্ডারিংয়ে দীর্ঘ সময় লাগার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে কাজের গতি কমে যায় এবং মানসিক চাপও বেড়ে যায়।
তাই মসৃণ কর্মপ্রবাহ, দ্রুত প্রসেসিং এবং উচ্চ মানের আউটপুট নিশ্চিত করতে উপযুক্ত কনফিগারেশনের ডেস্কটপ পিসি নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক কনফিগারেশন বেছে নিলে ভিডিও এডিটিং হবে আরও দ্রুত, সহজ এবং কার্যকর।
ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য পিসির মূল কম্পোনেন্টসমূহ
১. প্রসেসর (CPU - Central Processing Unit)
প্রসেসর হলো পিসির মস্তিষ্ক এবং ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য এর ভূমিকা অপরিসীম। ভিডিও রেন্ডারিং এবং এনকোডিংয়ের ক্ষেত্রে CPU হলো প্রধান শক্তি। বেশি কোর এবং উচ্চ ক্লক-স্পিডের প্রসেসর ব্যবহার করলে রেন্ডারিং টাইম অনেক কমে যায় এবং মাল্টিটাস্কিং আরও সহজ হয়। ৬ থেকে ১২ কোরের প্রসেসর ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য সবচেয়ে উপযোগী, আর হাই-এন্ড কাজের জন্য আরও বেশি কোরের CPU আরও ভালো ফলাফল দেয়।
২. মাদারবোর্ড (Motherboard)
মাদারবোর্ড হলো পুরো সিস্টেমের ভিত্তি। ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য এমন মাদারবোর্ড বেছে নিতে হবে যা সর্বশেষ প্রসেসর, হাই-স্পিড RAM এবং NVMe SSD সাপোর্ট করে। এছাড়া একাধিক PCIe স্লট থাকলে GPU আপগ্রেড সহজ হয়। ভবিষ্যতে RAM বা স্টোরেজ বাড়ানোর সুযোগও থাকতে হবে। তাই নির্ভরযোগ্য চিপসেট (যেমন B550, B650, Z690, Z790 বা সমমানের) মাদারবোর্ড ভালো অপশন।
৩. গ্রাফিক্স কার্ড (GPU - Graphics Processing Unit)
ভিডিও এডিটিংয়ে GPU বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রিয়েল-টাইম প্রিভিউ, ইফেক্ট প্রসেসিং এবং কালার গ্রেডিং অনেক দ্রুত করে। একটি ডেডিকেটেড NVIDIA RTX সিরিজ বা সমমানের GPU ব্যবহার করলে হাই-রেজোলিউশন ভিডিও এবং জটিল ভিজ্যুয়াল এফেক্টও সহজে প্রসেস করা যায়।
৪. র্যাম (RAM - Random Access Memory)
RAM হলো আপনার পিসির শর্ট-টার্ম মেমরি, যা এডিটিং সফটওয়্যার, ফুটেজ এবং ইফেক্ট ফাইলগুলোকে দ্রুত অ্যাক্সেস করতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত RAM না থাকলে এডিটিংয়ের সময় ল্যাগ বা হ্যাং হওয়ার সমস্যা হতে পারে। যত বেশি RAM থাকবে, বড় প্রজেক্টও তত মসৃণভাবে চালানো সম্ভব হবে। ন্যূনতম ১৬GB RAM অপরিহার্য, তবে ৩২GB RAM থাকলে 4K ভিডিও, মাল্টিপল টাইমলাইন ও হেভি ইফেক্টসহ কাজ আরও দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত হয়।
৫. স্টোরেজ (Storage - SSD/HDD)
ভিডিও ফাইলগুলো অনেক বড় হয়, তাই দ্রুত এবং পর্যাপ্ত স্টোরেজ থাকা অত্যন্ত জরুরি। NVMe SSD ব্যবহার করলে সফটওয়্যার লোডিং, ভিডিও ইমপোর্ট ও এক্সপোর্ট অনেক দ্রুত হয়। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ডেটা সংরক্ষণের জন্য অন্তত ১TB বা তার বেশি HDD রাখা ভালো। এভাবে SSD গতি দেবে, আর HDD দেবে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি।
৬. পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট (PSU - Power Supply Unit)
একটি নির্ভরযোগ্য এবং পর্যাপ্ত ওয়াটের PSU সমস্ত কম্পোনেন্টকে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এটি পিসির স্থায়িত্ব এবং কর্মক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ডের উপর নির্ভর করে 750W থেকে 1000W বা তার বেশি ওয়াটের PSU প্রয়োজন হতে পারে। 80 Plus Gold বা Platinum সার্টিফাইড PSU বেছে নেওয়া উচিত।
৭. কুলিং সিস্টেম (Cooling System)
প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ড ভারী লোডের সময় প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। একটি কার্যকর কুলিং সিস্টেম (এয়ার কুলার বা AIO লিকুইড কুলার) পিসির কর্মক্ষমতা স্থিতিশীল রাখতে এবং কম্পোনেন্টগুলির আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. কেস (Case)
পিসি বিল্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কেস। ভিডিও এডিটিংয়ের মতো হেভি টাস্কে ভালো এয়ারফ্লো এবং ক্যাবল ম্যানেজমেন্ট সহ একটি প্রশস্ত কেস বেছে নেওয়া উচিত। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ভবিষ্যতে GPU বা অতিরিক্ত স্টোরেজ যোগ করাও সহজ হবে। গ্লাস প্যানেল বা RGB লাইটিং ডিজাইন সৌন্দর্য বাড়ালেও, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত কুলিং সাপোর্ট এবং কম্পোনেন্ট ফিটমেন্ট-এ।
৯. মনিটর (Minitor)
ভিডিও এডিটিংয়ে একটি মানসম্মত মনিটর অত্যন্ত জরুরি। সঠিক কালার রিপ্রোডাকশন ও ডিটেইল দেখার জন্য IPS প্যানেল মনিটর বেছে নেওয়া উচিত। অন্তত ফুল এইচডি বা 4K রেজোলিউশন এবং sRGB/AdobeRGB উচ্চ কালার কভারেজ থাকলে কালার গ্রেডিং আরও নিখুঁত হয়। বড় স্ক্রিন (২৭ ইঞ্চি বা তার বেশি) হলে টাইমলাইন ও একাধিক উইন্ডো একসাথে ব্যবহার করাও সহজ হয়।
Best PC for Video Editing - ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য সেরা পিসির দাম এবং কনফিগারেশন
ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য পিসির বাজেট নির্ভর করবে আপনার প্রয়োজনীয়তা এবং নির্বাচিত কম্পোনেন্টগুলির উপর। এখানে কয়েকটি সম্ভাব্য বাজেট রেঞ্জ এবং তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কনফিগারেশনের একটি ধারণা দেওয়া হলো:
১. এন্ট্রি-লেভেল/বাজেট ফ্রেন্ডলি (৭০,০০০ - ১,০০,০০০ টাকা)
ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য বাজেট-বান্ধব পিসি তাদের জন্য উপযুক্ত যারা হালকা থেকে মাঝারি মানের প্রজেক্ট তৈরি করেন, যেমন ইউটিউব কন্টেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও এবং ছোট ফ্রিল্যান্স প্রজেক্ট। এই রেঞ্জের পিসিতে যথেষ্ট RAM, SSD স্টোরেজ এবং মৌলিক GPU থাকার কারণে ভিডিও এডিটিংয়ে মসৃণ পারফরম্যান্স নিশ্চিত হয়।
AMD Ryzen 5 7500F |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳ ৮৬,৯৯৯ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ হালকা-মাঝারি ভিডিও এডিটিং, 4K রেন্ডারিং সক্ষম, দ্রুত SSD স্টোরেজ, শক্তিশালী GPU, পর্যাপ্ত RAM, ভবিষ্যত-আপগ্রেডের সুযোগ প্রসেসর (CPU): AMD Ryzen 5 7500F, ৬ কোর, ১২ থ্রেড, বেস ক্লক ৩.৭GHz, বুস্ট ক্লক ৫.০GHz মাদারবোর্ড: MSI PRO B650M-B DDR5 AMD AM5 m-ATX র্যাম (RAM): Corsair Vengeance RGB ১৬GB DDR5 ৬০০০MHz স্টোরেজ: Team CLASSIC C47 ১TB NVMe SSD গ্রাফিক্স (GPU): MSI GeForce RTX 3050 VENTUS 2X ৬GB GDDR6 কুলিং সিস্টেম: Gamdias ST-BOREAS E1-411 EX ARGB CPU Air Cooler পাওয়ার সাপ্লাই: Corsair CX650 ৬৫০W 80 PLUS Bronze ATX কেসিং: GIGABYTE C102G GLASS Mid Tower Gaming Casing এই পিসিটি ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য খুব ভালো ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দেয় ১৬GB DDR5 RAM ও দ্রুত NVMe SSD রেন্ডার ও প্রিভিউ সময় কমিয়ে আনে, RTX 3050 GPU ভিডিও ও গ্রাফিক্স কাজে যথেষ্ট সক্ষম। এই সেটআপ 1080p থেকে হালকা-4K ভিডিও কাজে লাগবে এবং মাল্টিটাস্কিংও ভালো হবে। সামনে GPU বা RAM আপগ্রেড করার সুযোগও রয়েছে। |
AMD Ryzen 5 7500F |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳ ৯৩,৩০০ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ হাই-পারফরম্যান্স প্রসেসর, 16GB DDR5 RAM, দ্রুত গেমিং GPU, মাঝারি মানের ভিডিও এডিটিং, ভবিষ্যতে গ্রাফিক্স ও অন্যান্য অংশ আপগ্রেড করার সুযোগ প্রসেসর (CPU): AMD Ryzen 5 7500F, ৬ কোর, ১২ থ্রেড, বেস ক্লক ৩.৭GHz, বুস্ট ক্লক ৫.০GHz মাদারবোর্ড: Asus PRIME A620M-K AM5 mATX র্যাম (RAM): Corsair Vengeance RGB ১৬GB DDR5 ৬০০০MHz CL30 স্টোরেজ: Team MP44L ৫০০GB M.2 PCIe Gen4 NVMe SSD গ্রাফিক্স (GPU): MSI GeForce RTX 3060 VENTUS 2X OC ১২GB GDDR6 কুলিং সিস্টেম: DeepCool AG400 ARGB CPU Cooler পাওয়ার সাপ্লাই: Antec CSK 650DC ৬৫০W 80 PLUS Bronze Non-Modular কেসিং: MSI MAG FORGE M100A Micro ATX Tower Gaming Case পাওয়ার সাপ্লাই: ২০০W PSU এই পিসিটি একটু বেশি বাজেটে হলেও ভিডিও এডিটিং এবং গেমিং দুই ক্ষেত্রেই উঁচু পারফরম্যান্স দেয়। RTX 4060 GPU থাকায় 4K ভিডিও এডিটিং ও প্রিভিউ দ্রুত করা যায়। SSD ও RAM-এর গুরুত্ব বুঝে স্টোরেজ ও মেমরি ভালো রাখা হয়েছে, যা কাজকে আরও মসৃণ করে তোলে। |
২. মিড-রেঞ্জ/পেশাদারদের জন্য (১,০০,০০০ - ১,৫০,০০০ টাকা)
এই রেঞ্জের পিসিগুলো গেমিং, ভিডিও এডিটিং, 3D মডেলিং এবং অন্যান্য পেশাদার কাজের জন্য আদর্শ। এই স্তরের পিসি গুলোতে শক্তিশালী প্রসেসর, আধুনিক গ্রাফিক্স কার্ড, দ্রুত RAM এবং SSD স্টোরেজ রয়েছে, যা মসৃণ মাল্টিটাস্কিং এবং হাই-এন্ড অ্যাপ্লিকেশন চালানোর সক্ষমতা প্রদান করে। এগুলো দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য নির্ভরযোগ্য এবং আপগ্রেডযোগ্য।
Intel Core i7 14700K 14th Gen Desktop PC |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳ ১,৪৫,৯৯৯ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ মাঝারি থেকে উচ্চমানের ভিডিও এডিটিং, 4K রেন্ডারিং, ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, মাল্টিটাস্কিং প্রসেসর (CPU): Intel Core i7 14700K 14th Gen Raptor Lake Processor মাদারবোর্ড: MSI PRO Z790-P WIFI DDR5 ATX Motherboard র্যাম (RAM): Corsair VENGEANCE RGB 16GB DDR5 6000MHz CL30 Desktop RAM স্টোরেজ: Team CLASSIC C47 ১TB NVMe SSD গ্রাফিক্স (GPU): MSI GeForce RTX 3060 VENTUS 2X OC ১২GB GDDR6 কুলিং সিস্টেম: Arctic Liquid Freezer III 240MM RGB Liquid CPU Cooler পাওয়ার সাপ্লাই: Antec CSK 650DC 650W 80+ Bronze Non-Modular Power Supply কেসিং: Antec CX300 ARGB Full-View ATX Mid Tower Gaming Casing এই পিসি কনফিগারেশনটি হাই-এন্ড গেমিং এবং মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে Intel Core i7 14700K প্রসেসর, 16GB DDR5 RAM, 1TB SSD, RTX 3060 GPU এবং লিকুইড কুলিং সিস্টেম রয়েছে। এটি 1440p গেমিং এবং প্রফেশনাল ওয়ার্কলোড সামলাতে সক্ষম। |
AMD Ryzen 7 7700 Desktop PC |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳ ১,৪১,৯৯৯ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ মাঝারি থেকে উচ্চমানের ভিডিও এডিটিং, 4K রেন্ডারিং, প্রসেসর (CPU): AMD Ryzen 7 7700 Gaming Processor মাদারবোর্ড: Asus PRIME B840M-A WIFI-CSM AM5 mATX Motherboard র্যাম (RAM): 2 x Corsair VENGEANCE RGB 16GB DDR5 6000MHz CL36 Desktop RAM স্টোরেজ: Corsair MP600 PRO NH 1TB PCIe Gen4 NVMe M.2 SSD With DRAM Cache গ্রাফিক্স (GPU): MSI GeForce RTX 4060 VENTUS 2X BLACK 8GB OC GDDR6 Graphics Card কুলিং সিস্টেম: Corsair NAUTILUS 360 RS ARGB 360mm Liquid CPU Cooler পাওয়ার সাপ্লাই: Corsair CX750 750W 80 PLUS Bronze ATX Power Supply কেসিং: MSI MAG FORGE 120AAIRFLOW Mid-Tower Gaming Case পাওয়ার সাপ্লাই: ২০০W PSU এই পিসি কনফিগারেশনটি AMD Ryzen 7 7700 প্রসেসর, 32GB DDR5 RAM, 1TB NVMe SSD, RTX 4060 GPU এবং 360mm লিকুইড কুলার সহ ভিডিও এডিটিং এবং ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কের জন্য অপ্টিমাইজড, যা উচ্চ ফ্রেম রেট এবং দ্রুত পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। |
৩. হাই-এন্ড/প্রিমিয়াম (১,৫০,০০০ টাকা বা তার বেশি)
এই রেঞ্জের পিসি গুলো এমন ব্যবহারকারীদের জন্য যারা ভিডিও এডিটিং, 3D রেন্ডারিং, মোশন গ্রাফিক্স, এবং AAA গেম/গ্রাফিক কাজগুলো করেন। দ্রুত রেন্ডার টাইম, উচ্চ র্যাম, শক্তিশালী GPU এবং অপূর্ব স্টোরেজসহ এমন কনফিগারেশন দরকার যা ভবিষ্যৎ-প্রমাণ (future-proof)।
Intel Core Ultra 7 265K Desktop PC |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳ ১,৬৭,৯৯৯ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ উচ্চ পারফরম্যান্স, 4K ভিডিও এডিটিং, মাল্টিটাস্কিং, RTX 3060 GPU, দ্রুত SSD, বিশাল RAM, ভালো কুলিং, প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা প্রসেসর (CPU): Intel Core Ultra 7 265K Arrow Lake Processor মাদারবোর্ড: ASUS Z890 AYW GAMING WIFI ATX Motherboard র্যাম (RAM): Kingston FURY Beast 32GB DDR5 6000MHz CL30 RGB স্টোরেজ: Corsair MP600 PRO NH 1TB PCIe Gen4 x4 NVMe M.2 SSD With DRAM Cache গ্রাফিক্স (GPU): MSI GeForce RTX 3060 VENTUS 2X OC 12GB GDDR6 কুলিং সিস্টেম: Corsair NAUTILUS 360 RS ARGB 360mm Liquid CPU Cooler পাওয়ার সাপ্লাই: Antec CSK 650DC 650W 80+ Bronze Non-Modular PSU কেসিং: Antec CX300 ARGB Full-View ATX Mid Tower Gaming Casing এই পিসিটি ভিডিও এডিটিং, 4K রেন্ডারিং, এবং উচ্চ মানের ক্রিয়েটিভ কাজের জন্য উপযুক্ত। 32GB RAM ও দ্রুত NVMe SSD মিলে কাজ দ্রুত হয়, RTX 3060 গ্রাফিক্স কার্ড গ্রাফিক্স ইনটেন্সিভ কাজও সহজে হ্যান্ডেল করতে পারে। ভালো কুলিং ও যথেষ্ট PSU থাকায় দীর্ঘ কাজের সময়ও সিস্টেম স্থিতিশীল থাকবে। |
AMD Ryzen 7 7800X3D Desktop PC |
![]() |
মূল্য: প্রায় ৳ ১,৭৯,৫০০ |
মূল বৈশিষ্ট্যঃ দ্রুত রেন্ডারিং, 3D V-Cache প্রযুক্তি, উচ্চমানের ভিডিও এডিটিং ও মাল্টিটাস্কিং, RX 7800 XT গ্রাফিক্স, বিশাল RAM ও SSD স্টোরেজ প্রসেসর (CPU): AMD Ryzen 7 7800X3D - ৮ কোর, ১৬ থ্রেড, উচ্চ কর্মক্ষমতা সহ 3D V-Cache প্রযুক্তি মাদারবোর্ড: MSI B850 GAMING PLUS WIFI ATX, WiFi সংযুক্তিসহ র্যাম (RAM): Kingston Fury Beast 32GB DDR5 6000MHz স্টোরেজ: Kimtigo G7000 ১TB NVMe PCIe Gen4x4 গ্রাফিক্স (GPU): PowerColor Radeon RX 7800 XT ১৬GB GDDR6 কুলিং সিস্টেম: DeepCool LS720 SE Liquid Cooler পাওয়ার সাপ্লাই: Antec G750 ৭৫০W 80 Plus Gold Semi-Modular কেসিং: Gamdias ATHENA M3 ARGB Mid-Tower (4 ARGB ফ্যানসহ) এই পিসি ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য একটি প্রিমিয়াম অপশন। 7800X3D প্রসেসর এবং RX 7800 XT GPU মিলিয়ে 4K ভিডিও, উচ্চ কোয়ালিটির রেন্ডারিং ও কালার গ্রেডিং দ্রুত ও মসৃণভাবে সম্ভব। ৩২GB DDR5 র্যাম ও দ্রুত NVMe SSD স্টোরেজ ভিডিও প্রজেক্ট লোড, প্রিভিউ ও এক্সপোর্ট করার সময় পারফরম্যান্সের ঘাটতি ঘটতে দেয় না। শক্তিশালী লিকুইড কুলিং ও ৭৫০W PSU থাকায় দীর্ঘ সময় কাজ করলেও সিস্টেম স্থিতিশীল থাকবে। |
সেরা ভিডিং এডিটিং পিসির তুলনা
মডেল |
AMD Ryzen 5 7500F + RTX 3060 Build |
Intel Core i7 14700K 14th Gen + RTX 3060 |
AMD Ryzen 7 7800X3D + RX 7800 XT |
ব্র্যান্ড |
Ryzen |
Intel |
Ryzen |
দাম (টাকা) |
প্রায় ৳ ৯৩,০০০ |
প্রায় ৳ ১, ৪১, ৯৯৯ |
প্রায় ৳ ১,৭৯,৫০০ |
মূল বৈশিষ্ট্য |
হাই-পারফরম্যান্স প্রসেসর, 16GB DDR5 RAM, দ্রুত গেমিং GPU, মাঝারি মানের ভিডিও এডিটিং, ভবিষ্যতে গ্রাফিক্স ও অন্যান্য অংশ আপগ্রেড করার সুযোগ |
মাঝারি থেকে উচ্চমানের ভিডিও এডিটিং, 4K রেন্ডারিং, ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, মাল্টিটাস্কিং |
দ্রুত রেন্ডারিং, 3D V-Cache প্রযুক্তি, উচ্চমানের ভিডিও এডিটিং ও মাল্টিটাস্কিং, RX 7800 XT গ্রাফিক্স, বিশাল RAM ও SSD স্টোরেজ |
প্রসেসর (CPU) |
Ryzen 5 7500F (6C/12T, 3.7-5.0GHz) |
Intel Core i7 14700K (20C/28T, Boost 5.6GHz) |
Ryzen 7 7800X3D (8C/16T, 3D V-Cache) |
মাদারবোর্ড (Motherboard) |
Asus PRIME A620M-K mATX |
MSI Z790 DDR5 |
MSI B850 Gaming Plus WIFI ATX |
র্যাম (RAM) |
16GB DDR5 6000MHz |
16GB DDR5 6000MHz |
32GB DDR5 6000MHz |
স্টোরেজ (SSD) |
500GB NVMe SSD |
1TB NVMe Gen4 SSD |
1TB NVMe Gen4 SSD |
গ্রাফিক্স কার্ড (GPU) |
RTX 3060 12GB |
RTX 3060 12GB |
RX 7800 XT 16GB |
কুলিং সিস্টেম (CPU Cooler) |
DeepCool AG400 ARGB Air |
240mm Liquid Cooler |
DeepCool LS720 Liquid |
পাওয়ার সাপ্লাই (PSU) |
650W Bronze |
||
কেসিং (Case) |
1080p–হালকা 4K |
||
ব্যবহারের ধরণ |
বিগিনার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর |
প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর |
হাই-এন্ড স্টুডিও, ফিল্মমেকার |
বাংলাদেশের জন্য সেরা Video Editing Desktop PC সুপারিশ
যারা নতুনভাবে ভিডিও এডিটিং শুরু করছেন বা মূলত ইউটিউব কনটেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও কিংবা ছোটখাটো ফ্রিল্যান্স কাজ করেন, তাদের জন্য এই কনফিগারেশন একদম উপযুক্ত। Ryzen 5 প্রসেসর আর RTX 3060 গ্রাফিক্স কার্ড মিলে হালকা থেকে মাঝারি মানের প্রোজেক্টগুলো সহজে হ্যান্ডেল করতে পারে। 1080p এডিটিং এবং হালকা 4K কাজেও ভালো পারফরম্যান্স দেবে, আর ভবিষ্যতে চাইলে RAM বা GPU আপগ্রেড করে আরও শক্তিশালী করে নেওয়া সম্ভব।
যারা নিয়মিতভাবে পেশাদার ভিডিও এডিটিং করেন, বিশেষ করে 4K প্রোজেক্ট, কালার গ্রেডিং, এবং মাল্টিটাস্কিংয়ের মতো জটিল কাজ করেন, তাদের জন্য এই সেটআপ নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী সমাধান। Intel i7 14700K প্রসেসর আর দ্রুতগতির NVMe SSD একসাথে কাজের সময় মসৃণ অভিজ্ঞতা দেয়। এছাড়া RTX 3060 গ্রাফিক্স কার্ড ভিডিও প্রিভিউ, রেন্ডারিং ও ইফেক্টস প্রসেসিং দ্রুত করে দেয়, ফলে এডিটররা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
যারা 8K Video Editing, জটিল মোশন গ্রাফিক্স, VFX বা বড় বাজেটের প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য Ryzen 7 7800X3D বিল্ড হলো সবচেয়ে আদর্শ সমাধান। শক্তিশালী প্রসেসর, RX 7800 XT গ্রাফিক্স কার্ড, 32GB DDR5 RAM এবং হাই-স্পিড NVMe SSD মিলে যে কোনো ভারী কাজ সহজেই সম্পন্ন করা যায়। উন্নত কুলিং সিস্টেম ও শক্তিশালী PSU থাকায় দীর্ঘসময় ধরে কাজ করলেও সিস্টেম স্থিতিশীল থাকে। এ কারণে এটি ভবিষ্যৎ-প্রুফ একটি প্রিমিয়াম বিল্ড, যা পেশাদারদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠবে।
তিনটির মধ্যে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অপশন হলো মিড-রেঞ্জ বিল্ড (Intel Core i7 14700K)। এটি 4K ভিডিও এডিটিং, মাল্টিটাস্কিং ও কালার গ্রেডিংয়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী, আবার বাজেট বা হাই-এন্ডের মতো সীমাবদ্ধতা ও অতিরিক্ত খরচও নেই। দীর্ঘমেয়াদে পেশাদারদের জন্য এটাই স্মার্ট চয়েস।
বাংলাদেশে ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য Desktop PC ব্র্যান্ডের তুলনা
বাংলাদেশে Video Editing, ক্রিয়েটিভ কাজ এবং প্রফেশনাল প্রজেক্টের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত ব্র্যান্ড হলো Intel, AMD এবং Apple। প্রতিটি ব্র্যান্ডের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, পারফরম্যান্স এবং বাজেট অনুযায়ী সুবিধা রয়েছে। নিচে তাদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
ব্র্যান্ড |
পরিচিতি |
গুণগত মান |
বাজারমূল্য |
Intel |
বিশ্বখ্যাত প্রসেসর নির্মাতা, উচ্চ একক-কোর এবং মাল্টি-কোর পারফরম্যান্সের জন্য পরিচিত। |
শক্তিশালী প্রসেসর এবং নির্ভরযোগ্য সিস্টেম, হাই-রেজোলিউশন ভিডিও রেন্ডারিং, মাল্টিটাস্কিং ও 4K/8K এডিটিংয়ে উপযুক্ত। |
মিড-রেঞ্জ থেকে হাই-এন্ড |
AMD |
গেমার ও ক্রিয়েটিভ পেশাজীবীদের মধ্যে জনপ্রিয়, বিশেষ করে উচ্চ কোর কাউন্ট এবং দ্রুত গ্রাফিক্স পারফরম্যান্সের জন্য। |
বাজেটের মধ্যে শক্তিশালী মাল্টিটাস্কিং, হাই-রেজোলিউশন ভিডিও এডিটিং, 3D ও VFX কাজের জন্য ভালো সমাধান। |
বাজেট থেকে হাই-এন্ড |
Apple |
প্রিমিয়াম ক্রিয়েটিভ ব্র্যান্ড, বিশেষ করে Mac সিরিজ ভিডিও এডিটিং ও গ্রাফিক্সের জন্য পরিচিত। |
macOS ভিত্তিক স্থিতিশীল এবং দ্রুত কর্মপ্রবাহ, প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং, কালার গ্রেডিং ও 4K/8K প্রজেক্টের জন্য অনন্য পারফরম্যান্স। |
তুলনামূলক বেশি দামি |
কাস্টমার রিভিউ ও ফিডব্যাক
"আমি Intel Core i7 14700K মিড-রেঞ্জ ডেস্কটপ পিসি কিনেছি মূলত ভিডিও এডিটিং ও মোশন গ্রাফিক্সের কাজের জন্য। 4K ফুটেজে টাইমলাইন স্ক্রাব করা একদম স্মুথ, আর এক্সপোর্ট টাইমও অনেক কমে গেছে। যারা প্রফেশনালি কাজ করেন, তাদের জন্য এটা সত্যিই ভ্যালু ফর মানি।"
– তানভীর হোসেন, ঢাকা
Source: Startech
"Ryzen 5 + RTX 3060 বাজেট বিল্ডটি আমি ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েশনের জন্য ব্যবহার করছি। 1080p আর হালকা 4K এডিটিংয়ে দারুণ পারফরম্যান্স পাচ্ছি। SSD আর 16GB DDR5 RAM থাকার কারণে প্রিভিউ ল্যাগ করে না। বাজেটের মধ্যে ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য একদম বেস্ট অপশন।"
– আরিফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
Source: Ryans
"আমি AMD Ryzen 7 7800X3D হাই-এন্ড ডেস্কটপ পিসি ব্যবহার করছি ফিল্ম কালার গ্রেডিং আর 3D রেন্ডারিংয়ের জন্য। 32GB RAM আর RX 7800 XT GPU থাকার কারণে বড় প্রজেক্টেও একটুও স্লো হয় না। এটা একদম ফিউচার-প্রুফ সেটআপ, হাই-এন্ড কাজের জন্য ভরসাযোগ্য।"
– নিশাত রহমান, ঢাকা
Source: Skyland
উপসংহার
ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য উপযুক্ত ডেস্কটপ পিসি বেছে নেওয়া মানে শুধু একটি শক্তিশালী প্রসেসর বা গ্রাফিক্স কার্ড কেনা নয় এটি হলো সঠিক ব্যালান্সড কনফিগারেশন নির্বাচন করা। কারণ ভিডিও এডিটিংয়ে একসাথে CPU, GPU, RAM এবং স্টোরেজ সবকিছুর সমান ভূমিকা থাকে। বাজেট বিল্ড থেকে শুরু করে হাই-এন্ড ওয়ার্কস্টেশন পর্যন্ত, প্রত্যেক ধরনের ব্যবহারকারীর জন্যই বর্তমানে বাংলাদেশে ভালো অপশন পাওয়া যায়।
যারা নতুন শুরু করছেন বা হালকা ভিডিও এডিট করেন তারা বাজেট-বান্ধব পিসি দিয়েও কাজ চালাতে পারবেন। তবে যারা প্রফেশনাল, নিয়মিত 4K বা 8K ফুটেজ নিয়ে কাজ করেন কিংবা মোশন গ্রাফিক্স/কালার গ্রেডিং করেন, তাদের জন্য মিড-রেঞ্জ বা হাই-এন্ড বিল্ড বিনিয়োগ করা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
অতএব, সঠিক প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী ভিডিও এডিটিং পিসি নির্বাচন করলে শুধু মসৃণ এডিটিং নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে সময় ও পরিশ্রম দুটোই বাঁচবে। একটি ভালো কনফিগারেশনে বিনিয়োগ করাই সফল ভিডিও এডিটরের অন্যতম চাবিকাঠি।