Sales Promotion কি? সেলস প্রমোশনের প্রকার এবংকৌশল সমূহ

দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়া বাজার ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে একটি ব্যবসাকে অনেক ভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়।  বাজারে টিকে থাকতে এবং ব্যবসার মূল উদ্দেশ্যকে সফল করতে পণ্য সম্পর্কে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি।  আর এই কাজটাকে সহজ করে তোলে কোনো ব্যবসার সেলস প্রমোশন।  

সেলস প্রমোশন বা Sales Promotion কি?

সেলস প্রমোশন বা বিক্রয় প্রচার হলো এক ধরনের বিপণন কৌশল ব কর্মকাণ্ড যা ক্রেতা বা গ্রাহককে কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয়ের জন্য প্রলুব্ধ করে এবং সর্বোপরি পণ্য বা সেবার বিক্রয় বাড়িয়ে দেয়।  

অর্থাৎ, পণ্য বিক্রয় বাড়ানোর জন্য নেয়া পদক্ষেপ গুলো হচ্ছে একটি ব্যবসার বিক্রয় প্রচার। কারণ প্রচার ছাড়া কোনো ব্যবসায়ই তার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ভোক্তাকে জানাতে সক্ষম হয় না।  

সেলস প্রমোশনের প্রাথমিক কিছু উদ্দেশ্য আছে।  এগুলোর মধ্যে পণ্য সম্পর্কে গ্রাহকে জানানো  এবং পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করা অন্যতম।  এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ক্রেতাগোষ্ঠীকে স্থায়ী ক্রেতায় রুপান্তর করার পাশাপাশি মুনাফা অর্জনের পথ তৈরি হয়।  

সেলস প্রমোশন ও মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্যঃ

সেলস প্রমোশন ও মার্কেটিং এই দুটি বিষয়ের উদ্দেশ্য হলো প্রচার করা।  প্রচারকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হলেও বিষয় দুটির মধ্যে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে।  স্পষ্টভাবে এটা বোঝা গেলে দুটি বিষয় সম্পর্কেই ধারণা শক্তিশালী হবে।  

নং

সেলস প্রমোশন

মার্কেটিং

দুই বা ততোধিক পক্ষ্যের মধ্যে নির্দিষ্ট পণ্যের বিক্রয় কৌশল হলো সেলস প্রমোশন

সম্পূর্ণ বাজার ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে কোম্পানির প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যকে তুলে ধরা হলো মার্কেটিং

 ক্ষুদ্র পরিসরে হয়ে থাকে

মার্কেটিং অনেকটা পরিকল্পনার মাধ্যমে বিস্তারিত হয়ে থাকে। 

Sales Promotion স্বল্পমেয়াদী হয়

Marketing একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল

এটি মার্কেটিং এর একটি অংশ হিসেবে কাজ করে

মার্কেটিং একটি বিশাল প্রচার প্রক্রিয়া

৫ 

এটি পণ্য, মূল্য, ক্রেতা এসব নিয়ে কাজ করে

এটি পরিকল্পনা, উন্নয়ন, লক্ষ্যমাত্রা এসব নিয়ে কাজ করে

Sales Promotion কখন করা হয়?

বিক্রয় প্রচার যেহেতু একটি নির্দিষ্টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করা হয় এবং এর মাধ্যমে ভোক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম।  তাই, সঠিক সময় ও পদ্ধতি অনুসরণ করেই সেলস প্রোমোশনে চালানো উচিত।  এখানে Sales Promotion কখন চালানো হয় তা আলোচনা করা হলো:

১. নতুন পণ্য বা পরিষেবা চালুর সময়ঃ 

নতুন পণ্য বা পরিষেবাকে পরিচয় করিয়ে দিতে একটি কোম্পানি সেলস প্রমোশন করে থাকে।  বাজারে নিয়ে আসার আগে পণ্যের ছোট খাটো যাচাই পর্ব আগেই সেরে ফেলা হয় এবং পণ্যটির সাথে মানানসই বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রমোশন করা হয়।  

২. নির্দিষ্ট উপলক্ষ্য এবং সিজলান বিক্রয় বৃদ্ধিতেঃ 

নির্দিষ্ট সিজন, উপলক্ষ্য এবং উৎসব কে কেন্দ্র করে সেলস প্রমোশন শুরু করা যায়। অনেক কোম্পানির উদ্দেশ্যই থাকে তাদের বেশিরভাগ পণ্যের বিক্রয় একটা নির্দিষ্ট সিজন বা উপলক্ষ্যকে ঘিরে তৈরি করা।  

৩. অতিরিক্ত মজুদ কমিয়ে আনতেঃ 

অতিরিক্ত পণ্য কোনো কোম্পানিতে জায়গা দখল করে থাকে। নতুন ইনভেন্টরির জন্য কিছু পণ্যকে মার্কেটে ছড়িয়ে দেওয়া আবশ্যক।  এরকম মুহূর্তে সেলস প্রমোশন করা হয়ে থাকে। এটাকে Stock Clearanceও বলা হয়ে থাকে।  

৪. প্রতিযোগীতার মোকাবেলা করতেঃ 

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো একটি পণ্যকে কেন্দ্র করে বিশাল প্রতিযোগীতা চলে এবং বিক্রয় বাড়াতে প্রতিটা কোম্পানিই ব্যস্ত থাকে।  এরকম সময় পণ্যের সেলস বাড়াতে প্রমোশন করা হয়ে থাকে।

৫. গ্রাহক ধরে রাখতেঃ 

একজন গ্রাহক যখন পণ্য ক্রয় করে তখন তাকে বারবার ফিরিয়ে আনতে অনেক ধরনের কৌশল একটি কোম্পানি অবলম্বন করে।  সেলস প্রমোশন এরকম পরিস্থিতে করা হয়ে থাকে যাতে গ্রাহকের দৃষ্টি সব সময় ওই কোম্পানির পণ্যের দিকে থাকে।  

আরো পড়ুন: মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কি? কিভাবে এটি তৈরি করা হয়? এর গুরুত্ব

সেলস প্রমোশনের বিভিন্ন প্রকার (Types of Sales Promotion)

সেলস প্রমোশন অনেক ধরনের হয়ে থাকে।  প্রতিটি ধরণের উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হলো ভোক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ ও বিক্রয় বৃদ্ধি। কিছু সাধারণ সেলস প্রমোশনের প্রকার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো-

  1. ডিসকাউন্ট বা ছাড়
  2. ফ্রি স্যাম্পল বা ফ্রি ট্রায়াল
  3. ফ্রি শিপিং বা বিনামূল্যে পরিবহণ
  4. কুপন  বা ভাইচার
  5. বান্ডেলিং (Bundling) অফার
  6. ক্রস প্রমোশন (Cross Promotion)
  7. সীমিত সময়ের অফার 
  8. রেফারেল অফার
  9. পণ্য প্রদর্শনী বা Product Demonstration
  10. Loyalty অফার
  11. ফ্ল্যাশ সেলস
  12. প্রথম-ক্রয় বা Early-bird অফার
  13. Buy One Get One বা BOGO অফার
  14. গিভ এওয়েস (Giveaways)
  15. Charitable Donations বা অর্থ-সাহায্য

নিচে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো-

১. ডিসকাউন্ট বা মূল্যছাড়

পণ্যের উপর কিছু ডিসকাউন্ট অফার করে সেলস প্রমোশন করা হয়ে থাকে।  এর মধ্যে থাকে পারসেন্টেজ অনুযায়ী ডিসকাউন্ট, একটা নির্দিষ্ট ভলিউমের উপর ডিসকাউন্ট।  

কখনো দেখা যায়, একটা কিনলে একটা ফ্রি অফার থাকে আবার দুই বা তার অধিক কিনলে বিভিন্ন ছাড় থাকে।  নির্দিষ্ট সময়সীমা ধরে দিয়েও ডিসকাউন্টের এই মাধ্যম চালানো হয়ে থাকে। 

২. Free Sample/Free Trial

নির্দিষ্ট পণ্যের সাথে কোনো পণ্য ফ্রি দেয়া এক ধরনের সেলস প্রমোশন।  এ ধরনের প্রোমোশনে একই পণ্য ফ্রি দেয়া হয়ে থাকে আবার এক ধরনের পণ্য কিনলে তার সাথে অন্য রমকম কোনো পণ্য দেয়া হয়ে থাকে।  

এতে করে মাঝে মাঝে যে পণ্যটি কমল্পিমেন্টারি হিসেবে দেওয়া হচ্ছে তারও প্রমোশন হয়ে যায়।  ওই পণ্য সম্পর্কে ভোক্তার ধারণা কেমন হচ্ছে সে সম্পর্কেও জানতে পারা যায়।  

যেমন, কোনো পারফিউম কোম্পানি তাদের এক ধরনের সুবাসের প্রোডাক্টের সাথে ছোট করে অন্য আরেক ধরনের সুবাসের প্রোডাক্ট কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে দিলো।  এমন হতে পারে যে, ভোক্তা ওই অন্য ধরনের ফ্রি পণ্যটিকে পছন্দ করতে শুরু করলো এবং পরবর্তীতে তার প্রসারও বৃদ্ধি পেল।  

৩. Free Shipping বা বিনামূল্যে পরিবহণ সুবিধা অফার

একটি পণ্য কিনলে তা সম্পূর্ণ ফ্রি ডেলিভারিতে দেয়া হবে এমন অফার প্রদান করা এক ধরনের সেলস প্রমোশন।  অনেক কোম্পানি এ ধরনের অফার কিছু সময় অন্তর অন্তর দিয়ে থাকে।  আবার কোনো একটি নির্দিষ্ট পণ্যের যাতে বিক্রি বেশি হয় সে লক্ষ্যেও দিয়ে থাকে।  এমন অফারে কখনো কখনো একসাথে কয়েকটি নিলেও ফ্রি শিপিং দেয়া হয়ে থাকে। 

৪. কুপন বা ভাউচার

বিভিন্ন রকম কুপন (Coupon) বা গিফট ভাউচার (Voucher) অফার করেও সেলস প্রমোশন করা যেতে পারে।  কোনো পণ্য যখন একজন ভোক্তা কিনে নেয় তখন তার সাথে কোনো কুপন দেয়া হয়।  সে কুপনে নানা রকম সারপ্রাইজিং গিফটের ব্যবস্থা থাকে।  কুপন দিয়ে প্রমোশনের ক্ষেত্রে গিফটের পাশাপাশি মূল্যছাড়ও অফার করা হয়।  

৫. বান্ডেলিং বা Bundling অফার

এক প্যাকেটে অনেক রকম পণ্য বিক্রয় করা বা একসাথে কয়েক রকম পণ্য বান্ডেল করার মাধ্যমে সেলস প্রমোশন করা যায়।  এক্ষেত্রে প্রত্যেকটা পণ্য আলাদা কিনলে যে খরচ হয় তার চেয়ে কম খরচে ভোক্তা পণ্য ক্রয়ের সুবিধা পায়। 

এমন প্রমোশনের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্টের প্রচার একবারে হয়ে যায়।  ভোক্তা যে প্রোডাক্টে অভ্যস্ত নয় তা সম্পর্কে তাকে ধারণা দেয়া যায়।  এতে করে, তার ওই নতুন পণ্যের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  

৬. ক্রস প্রমোশন (Cross Promotion)

অন্য ব্যবসার পণ্যের সাথে মিলিত হয়ে মাঝে মাঝে বিক্রয় প্রচার করা যেতে পারে।  এতে করে অন্য ব্যবসার অডিয়েন্সকে নিজের দিকে টেনে আনা সম্ভব হয়। 

যেমন, কোনো এক শাড়ির কোম্পানি তার শাড়ির সাথে অন্য কোনো কসমেটিক কোম্পানির পণ্য ফ্রি দিলো।  এতে করে যারা ওই ধরনের কসমেটিক ব্যবহার করে থাকে তারা সেই শাড়ির অফারটি নিতে আগ্রহী হতে পারে।  

৭. সীমিত সময়ের অফার (Limited Time Offer)

নির্দিষ্ট সময়কে কাজে লাগিয়ে এক ধরনের সেলস প্রমোশন করা যায়।  কোনো নির্দিষ্ট তারিখ থেকে আরেক তারিখ পর্যন্ত সেলস এ নানান ধরনের অফার প্রদান করে এই প্রমোশন চালানো যায়। 

এ ধরনের অফারের ফলে ভোক্তার মধ্যে এক রকম তাড়াহুড়া দেখা যায় অফারটি শেষ হবার আগেই পণ্যটি কেনার জন্য।  আবার কবে এমন ধরনের অফার পাওয়া যাবে এমন শঙ্কা থেকে বেশ সেলস বৃদ্ধি হয়ে থাকে। 

৮. রেফারেল অফার (Referral Offer)

কিছু সময় দেখা যায় যে, কোনো পণ্যকে যদি কোনো ভোক্তা কাউকে সাজেস্ট করে তবে সেই ভোক্তা কিছুটা আলাদা অফার পেয়ে থাকে।  এ ধরনের সেলস প্রমোশনকে রেফারেল অফার বলে। 

যেমন, কিছু রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় অফার দিলো যে, কেউ যদি তাদের ওয়েসাইটে ৫ জন বন্ধুকে ট্যাগ করে তবে সে প্রতিটি খাবারের উপর ৫০ শতাংশ ছাড় পাবে।  

ভোক্তার জন্য এ ধরনের অফার বেশ লোভোনীয় হয়ে থাকে।  তারা তাদের পরিমণ্ডলের মানুষকে ওই কোম্পানির পণ্য সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতে থাকে। 

৯. পণ্য প্রদর্শনী বা Product Demonstration

পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত ভোক্তাকে জানানোর জন্য এক ধরনের ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এই Sales Promotion চালানো যেতে পারে।  শুধু পরিচিতি বাড়ানোর কথা মাথাইয় রেখে এ ধরনের ক্যাম্পেইন চালানো হলেও আসলে তা বিক্রয় বাড়াতে সাহায্য করে। 

অনেক সময় দেখা যায়, আইস্ক্রিম জাতীয় লোভোনীয় পণ্যের প্রচার করার জন্য নানান রকম সাজসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।  রাস্তার মোড়ে বা বড় কার্ট সাজিয়ে পণ্য সম্পর্কে প্রচার করা হচ্ছে।  এতে ভোক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় খুব সহজে। 

আরো পড়ুন: ব্র্যান্ডিং কাকে বলে? কিভাবে শিখবেন এবং সফল ব্র্যান্ডিং কিভাবে করবেন

১০. Loyalty  অফার 

একটা দোকান থেকে কিছু নির্দিষ্ট ভোক্তা সব সময়ের জন্য পণ্য ক্রয় করে।  তাদের কথা মাথায় রেখে এমন সেলস প্রমোশন করা হয়।  যারা রেগুলার কাস্টমার তারা প্রতি সেলসে নির্দিষ্ট ছাড় পেয়ে থাকে। 

এমন প্রোমোশনে স্থায়ী কাস্টমার উত্তেজনা বসত নিজেই ওই কোম্পানির প্রচার করে থাকে তার পরিচিতদের মাঝে।  আবার এমন অফার পাওয়া যায় দেখে অনেকেই স্থায়ী কাস্টমার হতে শুরু করে। 

১১. ফ্ল্যাশ সেলস (Flash Sales)

কোনো পণ্যের উপর হঠাত করে অল্প সময়ের জন্য কিছু ছাড় প্রদান করে ফ্ল্যাশ সেলস করা হয়ে থাকে।  সাধারণত, এটি কোম্পানির নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের প্রতি গ্রাহকদের তৎক্ষণাৎ আকর্ষণ তৈরি করতে দিয়ে থাকে। 

মনে করুন, এক সপ্তাহজুড়ে ক্রিসমাসের আগে কিছু পণ্য ঢালাওভাবে মূল্যছাড়ে বিক্রির অফার দেয়া হলো।  ভোক্তা এ ধরনের অফার সীমিত সময়ের জন্য হওয়ায় দ্রুত তা কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।  

১২. প্রথম-ক্রয় বা Early-bird অফার

কিছু সময় কোম্পানিগুলো আগে আসলে আগে পাবেন এমন অফারে তাদের পণ্য বিক্রির প্রতি গুরুত্ব দেয়। First-time Purchase বা Early-bird অফার সেরকমই এক ধরনের বিক্রয় প্রচার।  

এমন প্রোমোশনে সবার আগে যে ভোক্তা পণ্যটি ক্রয় করতে পারবে তার জন্য বিশেষ সুবিধা থাকে।  আগে থেকে ক্যাম্পেইন করে এমন তথ্য প্রচার করা হয়ে থাকে, যা অবিশ্বাস্যরকম কার্যকরী প্রচেষ্টা। 

১৩. একটি কিনলে একটি ফ্রি অফার বা BOGO অফার

একটি কিনলে একটি ফ্রি, এই প্রমোশন খুব প্রচলিত এক ধরনের সেলস প্রমোশন।  একটা পণ্য ক্রয় করার দামে আরেকটি পণ্য যখন ক্রেতা পেয়ে যায় তখন আলাদা রকম আগ্রহ ভোক্তাদের মাঝে দেখা যায়।  

সাধারণত, প্যাকেট পণ্যের বান্ডেল তৈরি করে এমন ধরনের অফার দেয়া হয়ে থাকে।  আবার খাবারের ব্যবসাগুলোও এমন অফার দিয়ে তাদের অডিয়েন্সকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।  কখনো কখনো এতে কিছুটা নতুনত্ব এনে যেমন কাপল অফার বা ফ্যামিলি অফার প্রদান করেও গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ হয়ে থাকে। 

১৪. গিভ এওয়েস (Giveaways)

কখনো কখনো নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের প্রোমোশনে কিছু জিনিস গিফট হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে।  যেমন কোনো পণ্যের প্রচারণা সেমিনারে অংশ নিয়ে ফ্রি টি-শার্ট পাওয়া গেল।  অথবা একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে পণ্য প্রচার করা হচ্ছে যেখানে উপস্থিত হলে কিছু খাবার দেয়া হলো।  এ ধরনের প্রমোশনকে বলে গিভ এওয়েস। 

এমন প্রমোশনের প্রতি ভোক্তার এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করে।  নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দে তারা এ ধরনের প্রোমোশনাল ইভেন্ট এটেন্ড করে এবং বন্ধুদের মাঝেও তা প্রচার করে থাকে।  

১৫. অর্থ-সাহায্য বা Charitable Donations

চ্যারিটেবল ডোনেশন এমন এক ধরনের সেলস প্রমোশন যেখানে পণ্য কেনার মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়ে থাকে।  

মনে করুন, একটি ফার্নিচার কোম্পানি তাদের পণ্যের বিক্রি বাড়াতে এমন একটি টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করলো যারা প্রকৃতিপ্রেমী।  ফার্নিচার বিক্রির একটি অংশ প্রকৃতির উন্নয়নে যেমন বৃক্ষ রোপনের কাছে লাগানো হবে বলা হলো।  এমতাবস্থায়, ওই ধরনের ভোক্তা এই প্রোমোশনে আগ্রহ পাবে।   

এতিমদের খাওয়ানো বা পোষা প্রাণীদের সহায়তায় বিভিন্ন কাজ করা এই ধরনের প্রমোশনের অংশ হয়ে থাকে।  এতে একটা গ্রুপ অব পিপুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ হয়। 

সেলস প্রমোশনের কিছু কৌশল

Sales Promotion ব্যবসার বিক্রয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।  তবে এই প্রমোশন যদি কিছু কৌশল মেনে করা হয় তাহলে বিষয়টা বেশি ফলপ্রসূ হয়ে থাকে।  সেলস প্রমোশনের তিনটি মূল কৌশল প্রচলিত রয়েছে, তা হলো- 

  1. পুশ স্ট্রাটেজি (Push Strategy)
  2. পুল স্ট্রাটেজি (Pull Strategy)
  3. হাইব্রিড স্ট্রাটেজি (Hybrid Strategy)

এই তিন ধরনের স্ট্রাটেজি সম্পর্কে অল্প কিছু জেনে নেয়া যাক- 

১।  পুশ স্ট্রাটেজি (Push Strategy)

পুশ স্ট্রাটেজি এমন এক ধরনের সেলস স্ট্রাটেজি যেখানে প্রচারণার জন্য পণ্যকে বিভিন্ন মাধ্যমে পুশ করা হয়ে থাকে।  সাধারণত, এই কৌশলটি হোলসেলার, ডিস্ট্রিবিউটর ও রিটেইলারের উপরে এপ্লাই করা হয়।  তাদেরকে বোঝানো হয় পণ্যের সব দিক সম্পর্কে যাতে তারা ভোক্তাদের কাছে সেটি বিক্রি করতে সক্ষম হয়। 

মনে করুন, একটি মুদি দোকানে কিছু পণ্য দেয়া হলো যার সর্বোচ্চ বিক্রি আশা করা হচ্ছে।  এর জন্য সেই পণ্য সম্পর্কেই বেশিবার করে বলা হয়ে থাকে এবং সেই পণ্য বিক্রির মাধ্যমে দোকানিকে কিছু সুবিধা দেয়া হয়।  এমন পরিস্থিতিতে দোকানি আপনার কোম্পানির পণ্য বিক্রি করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। 

২।  পুল স্ট্রাটেজি (Pull Strategy)

এই ধরনের স্ট্রাটেজি সরাসরি কাস্টমারকে ফোকাস করেই করা হয়।  বিভিন্ন বিক্রির কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে পুল স্ট্রাটেজিতে কাস্টমারকে নিজস্ব পণ্যের দিকে টেনে নেয়া হয়। 

প্রচারণার বিভিন্ন ধরনের কৌশল এই স্ট্রাটেজির অংশ হিসেবেই কাজ করে।  এর মূল লক্ষ্য থাকে কিভাবে ভোক্তার দৃষ্টি নির্দিষ্ট পণ্যের প্রতি আনা যায়।  বিজ্ঞাপন প্রচার করা, নানা রকম অফার প্রদান করা বা সঠিক চ্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানো এই পুল স্ট্রাটেজির কাজ।    

৩।  হাইব্রিড স্ট্রাটেজি (Hybrid Strategy)

হাইব্রিড স্ট্রাটেজি পুশ এবং পুল এই দুই ধরনের স্ট্রাটেজির সমন্বয়ে গঠিত।  পণ্য, মার্কেট ও সময়ের উপর ভিত্তি করে কোন ধরনের কৌশলকে অনুসরণ করতে হবে সে বিষয়ে হাইব্রিড স্ট্রাটেজি সাহায্য করে। 

হোলসেলার বা ডিস্ট্রিবিউটর থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে এ ধরনের স্ট্রাটেজি কাজে লাগে।  একটি ব্যবসায় তার পণ্যকে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রচারণার উদ্যোগে নামতে হাইব্রিড স্ট্রাটেজি অবলম্বন করে থাকে। 

মোটকথা, একটা কোম্পানির পণ্যকে শুধু প্রচার করলেই চলবে না; তার বিক্রয় বৃদ্ধি করতে হবে।  আর তার জন্যে উপরোল্লিখিত কৌশল অবলম্বন করে দেখতে হবে।  কোন কোম্পানির জন্য কোন ধরনের কৌশল কার্যকর তা এপ্লাই করে দেখার বিষয়।  

কারণ, যতটা পণ্য বাজারে বিক্রয় করা যাবে কোম্পানির ততটাই প্রসার হবে।  ভোক্তার সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে, সর্বোপরি প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে।