একক মালিকানাধীন ব্যবসা বা Sole Proprietorship কাকে বলে? একক মালিকানা ব্যবসা গঠনের প্রক্রিয়া এবং সুবিধা অসুবিধা

ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে সহজতম এবং সর্বাধিক গৃহীত কাঠামোগুলোর একটি হল একক মালিকানা কাঠামো। কোন ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু করার ক্ষেত্রে এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয় বরং বিশ্বব্যাপীই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় একটি গঠন কাঠামো। এই ব্যবসায়িক কাঠামোতে একজন ব্যক্তি একটি ব্যবসার মালিক হন এবং ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত সমস্ত দিকগুলির পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

একক মালিকানা কাঠামো ব্যবস্থার সরলতা, খরচ অনুযায়ী কার্যকারিতা এবং ছোট-বড় ব্যবসার জন্য উপযুক্ত হবার সক্ষমতা থাকার কারণে বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্বজুড়ে বিশেষভাবে জনপ্রিয় একটি ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।

এখানে একক মালিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত একটি আলোচনা করা হবে। এছাড়াও বাংলাদেশে একটি একক মালিকানা ব্যবসার কার্যকারিতা কি ধরনের হতে পারে সে সম্পর্কে ব্যবহারিক ধারণা দেবার জন্য একটি বাস্তব উদাহরণও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।  

একক মালিকানা ব্যবসা কাকে বলে?

একক মালিকানা হল এমন একটি ব্যবসায়িক সত্তা যা একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন হয়ে থাকে এবং মালিকের  দ্বারাই সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত হয়। 

অক্সফোর্ড বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডিকশনারি অনুসারে:

"একক মালিকানাধীন ব্যবসা হলো এমন একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ যা একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রিত। এই ধরনের ব্যবসায়, মালিকের সীমাহীন দায়বদ্ধতা থাকে এবং সমস্ত ব্যবসায়িক ঋণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ হয়।"

এখানে ব্যবসা তার মালিকের থেকে আইনগতভাবে আলাদা নয়, অর্থাৎ ব্যবসায় সৃষ্ট সমস্ত ঋণ এবং বাধ্যবাধকতার জন্য মালিক ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ হয়ে থাকেন৷ একইভাবে ব্যবসার মালিকই ব্যবসার দ্বারা উৎপন্ন সমস্ত লাভ উপভোগ করার অধিকার রাখেন।

বাংলাদেশে, একক মালিকানা সাধারণত খুচরা ব্যবসা, ছোট আকারের উৎপাদন ভিত্তিক ব্যবসা, বেকারি, মুদির ব্যবসা, খাদ্য সংক্রান্ত ব্যবসা কিংবা পরিষেবা, টেইলারিং, পরামর্শ এবং অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসার মতো খাতে খুব বেশি পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়। 

এই ধরনের ব্যবসাতে প্রায়শই তাদের সহজতর- সরল সেটআপ প্রক্রিয়া, অল্প মূলধনে ব্যবসা শুরু করার সুবিধা, অপারেশনাল খরচ কম হওয়া এবং সার্বিক নিয়ন্ত্রন তুলনামূলক অনেক কম প্রয়োজন হওয়ার কারণে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এই কাঠামোটি নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে প্রথম পছন্দ এবং স্বাচ্ছন্দ্য হয়ে উঠেছে। 

বাংলাদেশে একক মালিকানা ব্যবসা গঠনের প্রক্রিয়া

একক মালিকানা ব্যবসার গঠন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে একটি একক মালিকানা বিশিষ্ট ব্যবসা গঠন করার জন্য কিছু সহজ কিন্তু অত্যাবশ্যক পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। যার মধ্যে অনেকগুলোই বাধ্যতা মূলক আইনি পদক্ষেপ, যা পরবর্তীতে নানা ধরনের আইনি জটিলতা বা বিড়ম্বনা থেকে ব্যবসা এবং ব্যবসার মালিককে রক্ষা করতে পারে। 

নিচে এসব সহজ পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করা হলঃ 

১. ব্যবসার একটি নাম নির্ধারণ করা 

প্রথম ধাপ হল ব্যবসার জন্য একটি উপযুক্ত নাম নির্বাচন করা। 

যদিও যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর এ নিবন্ধকের (Registrar of Joint Stock Companies And Firms) সাথে নাম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক নয়, তবে সম্ভাব্য বিরোধ এড়াতে একটি ইউনিক এবং অর্থপূর্ণ নাম নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামটি যাতে ব্যবসার প্রকৃতিকে প্রতিফলিত করে এবং টার্গেট মার্কেটে নিজের অবস্থান সম্পর্কে গ্রাহকদের ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা দিতে বা আকর্ষন করতে পারে।

২. ট্রেড লাইসেন্স

বাংলাদেশে যেকোনো ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি বাধ্যতামূলক। ব্যবসার ধরন এবং  অবস্থানের ভিত্তিতে এই লাইসেন্সটি স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়া যেতে পারে।

ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া:

ব্যবসার অবস্থান এবং ধরণ অনুযায়ী যথাযথ এবং নিকটস্থ স্থানীয় সরকারি অফিসে (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ) যেয়ে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনপত্র ফি বাবদ ফি (বর্তমান তথ্য অনুসারে ১০ টাকা) দিয়ে আবেদন পত্র নিন এবং পূরণ করুন। অথবা সরকারি তথ্য বাতায়নে প্রবেশ করে একটি একাউন্টে সাইন আপ করে ধাপ গুলো মেনে এগিয়ে যান।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র - 

  • মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) একটি ফটোকপি।
  • দুটি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • ব্যবসার ঠিকানার প্রমাণ (যেমন, ভাড়া চুক্তি বা ইউটিলিটি বিল)।

সহ পূরণকৃত আবেদনপত্র জমা দিয়ে প্রযোজ্য প্রদান করুন। ব্যবসার ধরন এবং অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ট্রেড লাইসেন্স এর ফি বাবদ ১০০ টাকা থেকে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

৩. ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN)

ব্যাংকে একটি ব্যবসায়িক একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে ট্যাক্স পরিশোধ সহ নানা ধরনের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের জন্য একটি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) একটি অপরিহার্য ডকুমেন্ট।

ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রাপ্তির প্রক্রিয়া:

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করুন ৷ মালিক এবং ব্যবসা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন, যেমন ট্রেড লাইসেন্স এবং NID.

টিআইএন সার্টিফিকেটটি একটি ইলেকট্রনিক প্রিন্টযোগ্য কপি হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে। এই সার্টিফিকেটটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করে রাখা অত্যন্ত জরুরী। 

৪. একটি ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলুন

ব্যবসা সংশ্লিষ্ট আর্থিক লেনদেনের জন্য একটি ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশে বেশিরভাগ ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে নিম্নলিখিত নথিগুলোর প্রয়োজন হয়ঃ

  • একটি বৈধ ট্রেড লাইসেন্স
  • টিআইএন সার্টিফিকেট
  • মালিকের জাতীয় পরিচয় পত্র, নমিনির পরিচয় পত্র
  • একাউন্ট ধারী এবং নমিনির পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • ব্যবসার ঠিকানার প্রমাণ

ব্যবসায়িক একাউন্ট হয়ে যাবার পর ব্যবসায়িক সকল প্রকার লেনদেন ব্যক্তিগত একাউন্ট এর পরিবর্তে ব্যবসায়িক একাউন্ট এর মাধ্যমে করা উচিৎ।

৫. ভ্যাট নিবন্ধন (যদি প্রযোজ্য হয়)

কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে যদি বার্ষিক টার্নওভার টাকার অংকে ৩০ লাখের বেশি হয় কিংবা যদি ব্যবসায়িক পণ্য বা পরিষেবাগুলো ভ্যাট সাপেক্ষে লেনদেন হয়, তাহলে মালিককে অবশ্যই NBR (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)- এ ভ্যাটের জন্য নিবন্ধন করতে হবে।

ভ্যাট নিবন্ধনের প্রক্রিয়া:

  • অনলাইনে বা নিকটস্থ ভ্যাট অফিসে একটি ভ্যাট নিবন্ধন আবেদন জমা দিন
  • টিআইএন সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স এবং ব্যবসার ঠিকানার প্রমাণ সহ নথি প্রদান করুন

একবার নিবন্ধিত হলে, মালিককে অবশ্যই ভ্যাট-প্রদান রেকর্ড বজায় রাখতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে হবে।

৬. অতিরিক্ত কিছু লাইসেন্স বা পারমিট 

ব্যবসার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, কিছু অতিরিক্ত লাইসেন্স বা পারমিটের প্রয়োজন হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ:

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে জড়িত ব্যবসার জন্য একটি আমদানি/রপ্তানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট। ভোগ্য পণ্য, খাদ্য এবং পানীয় জাতীয় পণ্যের ব্যবসার জন্য Bangladesh Standards and Testing Institution এর সার্টিফিকেট। কোন উৎপাদন ইউনিটের স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হতে পারে।

একক মালিকানা সংক্রান্ত বাংলাদেশের আইনি কাঠামো

যদিও শুধুমাত্র একক মালিকানা ব্যবসা নিয়ে বাংলাদেশে সুনির্ধারিত কোনো আইন নেই, তবে বিভিন্ন ধরনের বিধান এধরনের ব্যবসায়িক কাঠামো এবং এর কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ব্যবসায়িক লাইসেন্সিং

স্থানীয় সরকার আইন দ্বারা ট্রেড লাইসেন্স প্রদান এবং নবায়ন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। যেমন সিটি কর্পোরেশন অধ্যাদেশ এবং ইউনিয়ন পরিষদ আইন।

ট্যাক্সেশন বা আয়কর

একক মালিকদের জন্য আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪, প্রযোজ্য। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যবসায়িক আয় ব্যক্তিগত আয় হিসাবে বিবেচিত হয় এবং মালিককে সেই অনুযায়ী বার্ষিক ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)

মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২, অনুযায়ে ব্যবসার টার্নওভার নির্দিষ্ট থ্রেশহোল্ড (বছরে ৩০ লাখ) অতিক্রম করলে কিংবা করযোগ্য কার্যকলাপে জড়িতদের জন্য ভ্যাট প্রদান বাধ্যতামূলক করে৷

শ্রম আইন

একক মালিকানা বিশিষ্ট কোন ব্যবসায় মালিক যদি এক বা একাধিক শ্রমিক নিয়োগ করে, তবে সেটি অবশ্যই বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী হতে হবে। যা কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, নিরাপত্তা এবং অন্যান্য শ্রম অধিকার নিশ্চিত করে।

একক মালিকানা ব্যবসার সুবিধা

একক মালিকানার সুবিধা ও অসুবিধা

1. সহজতর সেটআপ বা গঠন প্রক্রিয়া

Sole Proprietorship Business গঠন করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম আমলাতান্ত্রিক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় বিধায় এ ধরনের ব্যবসা তুলনামূলক কম খরচে এবং দ্রুত সেট আপ করা যায়।

ব্যবসায়িক লাইসেন্স বা Trade Licence নিবন্ধন প্রক্রিয়া খুবই সহজ হওয়ায় ব্যবসা করতে ইচ্ছুক যে কেউ একটি ব্যবসা সেটআপ করে ফেলতে সক্ষম। 

2. ব্যবসায় সম্পূর্ণ এবং একক নিয়ন্ত্রণ

ব্যবসায়িক সমস্ত সিদ্ধান্তের উপর মালিকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং কার্যক্রমগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। 

3. ব্যবসায় লাভ এবং সম্প্রসারণের সুযোগ 

ব্যবসার সমস্ত লাভ একচেটিয়াভাবে মালিকের থাকে সেজন্য ব্যবসার লভ্যাংশ পুনঃবিনিয়োগের সাহায্যে দ্রুত সম্প্রসারণের সুযোগ থাকে। 

4. সরলতর ট্যাক্স বা কর ব্যবস্থা

ব্যবসায়িক আয়কে ব্যক্তিগত আয় হিসাবে দেখিয়ে কর দেওয়া যায়। যার মাধ্যমে কর্পোরেট ট্যাক্সের জটিলতা খুব সহজেই দূর করা যায়।

5. ব্যবসায়ীক কার্যকলাপে চাহিদাভিত্তিক নমনীয়তা

বাজারের চাহিদা বা ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী মালিক তার ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ গুলিকে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।

একক মালিকানা ব্যবসার অসুবিধা

1. এক ব্যক্তির উপর সীমাহীন দায়

ব্যবসায়িক সকল ধরনের ঋণের জন্য মালিক ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ থাকে যার ফলে আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পদ ঝুঁকিপূর্ণ।

2. সীমিত মূলধন এবং তহবিল সংগ্রহে বাঁধা

একক মালিকরা প্রায়শই বড় আকারের তহবিল সংগ্রহ করতে বাঁধা প্রাপ্ত হন, কারণ তারা শেয়ার ইস্যু করতে পারে না বা ইক্যুইটি অফারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে না।

3. ব্যবসার ধারাবাহিকতার অভাব, স্থায়িত্ব এবং অস্তিত্বের সংকট

যদি মালিক অবসর গ্রহণ করেন, অক্ষম হন বা মারা যান তবে ব্যবসার অস্তিত্ব হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

4. সম্পদের সীমাবদ্ধতা

সীমিত আর্থিক এবং মানব সম্পদের কারণে একক মালিকানায় অপারেশন স্কেলিং করা বা বিশেষায়িত কোন নিয়োগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা পারে।

5. অত্যাধিক কাজের পরিমাণ এবং চাপ

একক মালিকানা ব্যবসায় সমস্ত ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য মালিক সম্পূর্ণরূপে দায়ী হয়ে থাকেন, যা মালিককে অত্যাধিকভাবে কায়িক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত করতে পারে। 

বাংলাদেশে একক মালিকানার গুরুত্ব

একক মালিকানা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এ ধরনের ব্যবসা মূলত গ্রামীণ এবং মফস্বল এলাকায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, যেখানে এধরনের ক্ষুদ্র উদ্যোগ অসংখ্য মানুষের জীবিকার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে কাজ করে।

এই ব্যবসাগুলো প্রায়শই স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে থাকে, যেমন মুদি দোকান, টেইলরিং পরিষেবা, ছোট খাবারের দোকান, যার ফলে সম্প্রদায় ভিত্তিক উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতাকে প্রমোট করে। এছাড়াও একক মালিকানা সাহসী উদ্যোক্তাদেরকে ন্যূনতম আর্থিক ঝুঁকি নিয়েও ব্যবসায়িক ধারণাগুলি পরীক্ষা করার জন্য একটি সুযোগ প্রদান করে।

এই ব্যবসায়িক কাঠামোতে যে বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত

সকল প্রকার ট্রানজেকশনের রেকর্ড রাখা

নিয়মিত কর প্রদান, ঋণ প্রাপ্তি এবং ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতা ট্র্যাক করার জন্য সঠিকভাবে আর্থিক রেকর্ড বজায় রাখা অপরিহার্য। ব্যবসায়িক সকল প্রকার লেনদেন ব্যবসায়িক ব্যাংক একাউন্ট থেকে করা উচিৎ। একক মালিকদের সমস্ত আয়, ব্যয় এবং লেনদেনগুলি সাবধানতার সাথে নথিভুক্ত করা উচিত।

অন্যান্য ব্যবসায়িক কাঠামোতে রূপান্তর

যদি একটি একক মালিকানাধীন ব্যবসা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, তাহলে মালিক এই ব্যবসাকে একটি অংশীদারিত্ব বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। এই রূপান্তরের ফলে অধিকতর মূলধন প্রাপ্তি, সীমিত দায়বদ্ধতা এবং উন্নত অপারেশনাল দক্ষতার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।

নেটওয়ার্কিং এবং কমিউনিটি এনগেজমেন্ট

স্থানীয় ব্যবসায়িক সমিতি বা কমিউনিটি নেটওয়ার্কগুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ একক মালিকদের জন্য মূল্যবান সম্পদ, বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি এবং নানা ধরনের সহায়তা ব্যবস্থা উপলব্ধ করতে সহায়তা করতে পারে।

বাস্তব উদাহরণঃ

বাংলাদেশের একজন একক মালিক

কেস স্টাডি: স্থানীয় মুদি দোকানের মালিক

ঢাকার বাসিন্দা জনাব রহিম একক মালিক হিসেবে একটি ছোট মুদির দোকান চালান। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স করান এবং টিআইএন-এর জন্য নিবন্ধন করেন। স্থানীয় পাইকারী বিক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে আশেপাশের এলাকার চাহিদা পূরণ করে, তিনি একটি বিশ্বস্ত গ্রাহক বেস তৈরি করেছেন।

ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা এবং বাজার মূল্যের ওঠানামার মতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, জনাব রহিমের ব্যবস্থাপনা এবং গ্রাহক পরিষেবা তাকে লাভজনকভাবে তার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম করেছে। এই উদাহরণটি বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে একক মালিকানার ব্যবহারিক প্রয়োগ এবং সুবিধাগুলিকে সহজতর ভাবে চিত্রিত করে।

একক মালিকানা কাঠামোর সরলতা এবং নমনীয়তার কারণে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি আদর্শ ব্যবসায়িক কাঠামো। একইসাথে, এর সাথে সীমাহীন দায় এবং মূলধনে সীমিত অ্যাক্সেস এর মতো কিছু ঝুঁকিও বিদ্যমান থাকে, যা মালিকদের অবশ্যই সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হবে।

উপরে বর্ণিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে এবং প্রাসঙ্গিক আইনি পদক্ষেপগুলো মেনে চলার মাধ্যমে, উদ্যোক্তারা সফলভাবে বাংলাদেশে একক মালিকানা কাঠামোতে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা করতে পারেন। কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ ধরনের উদ্যোগগুলোর উল্লেখযোগ্য অবদানের পাশাপাশি, এই ব্যবসাগুলো  দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সাহসী উদ্যোক্তাদের জন্য, একক মালিক হিসাবে কোন উদ্যোগ, তাদেরকে ব্যবসা সংক্রান্ত নতুন একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করার, একটি গ্রাহক বেস তৈরি করার এবং ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক প্রচেষ্টার ভিত্তি স্থাপনের একটি চমৎকার সুযোগ দেয়।