ব্যবসা কত প্রকার ও কি কি? কিভাবে সঠিক ধরণটি নির্বাচন করবেন?

একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করে, ব্যবসা পরিচালনার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা কতটুকু, ব্যবসা সম্প্রসারণের ধরণ কীরূপ হবে, সম্প্রসারণের সম্ভাবনা বা সুযোগ কতখানি- তা অনেকাংশীই ব্যবসার কাঠামোর উপর নির্ভর করে থাকে। একই সাথে ব্যবসার ধরন, মালিকানার ধরন, ট্যাক্স, ঝুঁকি, সুবিধা- অসুবিধা ব্যবসার গঠন কাঠামোর উপর নির্ভর করে। 

এখানে আমরা মালিকানার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক কাঠামো, তাদের সুবিধা, অসুবিধা, ঝুঁকি এবং বাস্তব উদাহরণ সম্পর্কে জানবো। 

মালিকানা, কাঠামো এবং গঠন অনুযায়ী  উপর ভিত্তি করে ব্যবসার প্রকারভেদ:

১. একক মালিকানা (Sole Proprietorship)

২. অংশীদারিত্ব (Partnership)

  • সাধারণ অংশীদারিত্ব
  • সীমিত অংশীদারিত্ব
  • সীমিত দায়বদ্ধতা অংশীদারিত্ব (LLP)

৩. কর্পোরেশন (Corporation)

  • সি-কর্পোরেশন
  • এস-কর্পোরেশন

৪. সীমিত দায় কোম্পানি (LLC)

৫. সমবায় 

৬. অলাভজনক সংস্থা

৭. ফ্র্যাঞ্চাইজি

৮. যৌথ উদ্যোগ

৯. হোল্ডিং কোম্পানি

১০. সরকারী মালিকানাধীন কর্পোরেশন

নিচে এই ব্যবসায়িক কাঠামোগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল। 

যা আপনাকে ব্যবসার বিভিন্ন ধরনের কাঠামো, মালিকানা, সুবিধা, অসুবিধা, ঝুঁকি, বিশেষ লক্ষ্যনীয় দিকগুলো সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হবে। 

১. একক মালিকানা বা Sole Proprietorship

ব্যবসা গঠন বা পরিচালনার ক্ষেত্রে একক মালিকানা হল সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজতর একটি কাঠামো। যেখানে একজন ব্যক্তি ব্যবসার মালিক হয়ে থাকেন এবং ব্যবসার সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন।

এই কাঠামোটি ছোট আকারের ব্যবসা বা যারা স্বাধীনভাবে নতুন কোন ব্যবসা শুরু করছেন তাদের জন্য একটি আদর্শ ব্যবস্থা। এই কাঠামো ব্যবস্থা একজন মালিককে ব্যবসার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিয়ে থাকে এবং তুলনামূলক সহজতর কাঠামোতে ব্যবসা গঠন এবং পরিচালনা করার সুযোগ দেয়।

মালিকানা:

একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত দ্বারা ব্যবসা পরিচালিত- নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এক ব্যক্তির মালিকানাধীন।

সুবিধা:

  • সেটআপ খরচ কম। 
  • ব্যবসা পরিচালনার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
  • সরলীকৃত কর ব্যবস্থা।

অসুবিধা:

  • সীমাহীন ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা।
  • তহবিল বা ফান্ড সংগ্রহে সীমিত সুযোগ। 
  • মালিকের মৃত্যুর পর ব্যবসার ধারাবাহিকতায় অভাব দেখা দিতে পারে।

কর ব্যবস্থা: মালিকের ব্যক্তিগত আয় অনুযায়ী- লাভের উপর কর দিতে হয়।

ঝুঁকি: আর্থিক এবং আইনি ঝুঁকি সরাসরি মালিককে প্রভাবিত করে।

বাস্তব উদাহরণ: ফ্রিল্যান্সার বা একক মালিকানাধীন খুচরা দোকান।

ব্যবসা করার ক্ষেত্রে যারা তুলনামূলক কম জটিলতা, ঝুঁকি পছন্দ করেন এবং একই সাথে যারা ব্যবসার পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখতে চান, এমন উদ্যোক্তাদের জন্য একক মালিকানা কাঠামো ব্যবস্থা একটি চমৎকার উপায়। তবে, বৃহত্তর উদ্যোগের ক্ষেত্রে মালিকের উপর ব্যবসার সীমাহীন দায় এবং নির্ভরতা একধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা আবশ্যক। 

২. অংশীদারিত্ব বা Partnership

ব্যবসার ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব হল একটি সহযোগী ব্যবসায়িক মডেল। যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা সংস্থা জড়িত থাকেন। যারা মালিকানা, দায়িত্ব এবং লাভ ভাগ করে নেয়। এধরনের ব্যবসায়িক কাঠামো পারস্পরিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়।

অংশীদারি মালিকদের দায়িত্ব এবং ভূমিকা একটি অংশীদারিত্ব চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং এই চুক্তির মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিক হয়ে থাকে।

অংশীদারিত্ব মূলত ৩ ধরনের হয়ে থাকে। 

  • সাধারণ অংশীদারিত্ব
  • সীমিত অংশীদারিত্ব (LP) 
  • সীমিত দায়বদ্ধতা অংশীদারিত্ব (LLP)

সাধারণ অংশীদারিত্ব (General Partnership)

একটি সাধারণ অংশীদারিত্বের মাঝে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যৌথভাবে একটি ব্যবসা পরিচালনা করে।

মালিকানা: অংশীদারদের মধ্যে মালিকানার সমান বা নির্দিষ্ট অংশ থাকে।

সুবিধা:

  • দায়িত্ব এবং মালিকানার পরিমাণ ভাগ করা থাকে।
  • কর্পোরেশনের চেয়ে গঠন করা তুলনামূলক সহজতর।

অসুবিধা:

  • সমস্ত অংশীদারদের জন্য ব্যবসায় ব্যক্তিগত দায় সীমাহীন থাকে।
  • অংশীদারদের মধ্যে মতানৈক্যের জন্য ব্যবসায়িক কার্যকলাপ বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

কর ব্যবস্থা: পাস-থ্রু ট্যাক্সেশন; মুনাফা, অংশীদারদের ব্যক্তিগত আয়ের উপর ট্যাক্স করা হয়।

* ‘পাস-থ্রু ট্যাক্সেশন’ - একক সত্তা হিসেবে ব্যবসা কোন ট্যাক্স দেয় না বরং মালিকগণ তাদের নিজ নিজ আয়ের উপর ট্যাক্স দেবার সুবিধা উপভোগ করে থাকে।

ঝুঁকি: দায়বদ্ধতা প্রতিটি অংশীদারের ব্যক্তিগত সম্পদ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে, অর্থাৎ ব্যবসায়িক ঋণ এর কারণে ব্যক্তিগত সম্পদ ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।

বাস্তব উদাহরণ: স্থানীয় আইন সংস্থা, পারিবারিক মালিকানাধীন ব্যবসা।

সীমিত অংশীদারিত্ব (Limited Partnership বা LP )

একটি সীমিত অংশীদারিত্বে অন্তত একজন সাধারণ অংশীদার এবং এক বা একাধিক সীমিত অংশীদার থাকে যারা মূলধন বিনিয়োগ করে কিন্তু ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে সীমিতভাবে জড়িত থাকে।

মালিকানা: সাধারণ অংশীদার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, যেখানে সীমিত অংশীদাররা মূলত আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।

সুবিধা:

  • সীমিত অংশীদারদের জন্য দায়বদ্ধতা সীমিত থাকে।
  • বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সহজ।

অসুবিধা:

  • সাধারণ অংশীদার সীমাহীন দায়বদ্ধতার সম্মুখীন হন।
  • সীমিত অংশীদারদের ব্যবসা পরিচালনার উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

কর ব্যবস্থা: সমস্ত অংশীদারদের জন্য পাস-থ্রু ট্যাক্সেশন বলবৎ হয়।

ঝুঁকি: ব্যবসার ঝুঁকি সাধারণ অংশীদাররা বহন করেন।

বাস্তব উদাহরণ: রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব। 

সীমিত দায়বদ্ধতা অংশীদারিত্ব (Limited Liability Partnership বা LLP)

একটি সেয়ার্ড ম্যানেজমেন্টের অনুমতির সাহায্যে LLP’র সমস্ত অংশীদারদের দায় সুরক্ষিত হয়ে থাকে।  বাংলাদেশে Limited Liability Partnership Act, 2015 অনুযায়ী এই ধরণের ব্যবসায়িক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা যায়। 

মালিকানা: ব্যবসায়িক ঋণ সহায়তার মাধ্যমে সীমিত দায় সহ অংশীদারগন ব্যবসার মালিকানা প্রাপ্ত হন এবং তাদের একটি সেয়ার্ড ম্যানেজমেন্টের সাহায্য ব্যবসা পরিচালিত হয়ে থাকে। 

সুবিধা:

  • সমস্ত অংশীদারদের দায় সুরক্ষিত থাকে।
  • নমনীয় ব্যবস্থাপনা কাঠামো।

অসুবিধা:

  • অংশীদারদের সম্মতির প্রয়োজনীয়তা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে জটিল করতে পারে।
  • সমস্ত ধরনের বিচার ব্যবস্থায় এ কাঠামো উপলব্ধ হয় না।

কর ব্যবস্থা: পাস-থ্রু ট্যাক্সেশন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: স্থানীয় আইনের সাথে সম্মতি নিশ্চিত করা আবশ্যক।

বাস্তব উদাহরণ: অ্যাকাউন্টিং এবং আইনি সংস্থাগুলির মতো পেশাদার পরিষেবা সংস্থাগুলি৷

অংশীদারিত্ব কাঠামো পদ্ধতি সম্পদ বণ্টন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি। তবে, এ ধরনের কাঠামোর সাফল্য- অংশীদারদের মাঝে কার্যকর যোগাযোগ, দ্বন্দ্ব এড়াতে প্রতিটি অংশীদারের ভূমিকা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারনা এবং এর যথোপযোগী প্রয়োগের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে।

LLP বর্তমানে জনপ্রিয় কাঠামো, কারণ এখানে অংশীদারদের ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যবসার দায় থেকে সুরক্ষিত থাকে।

৩. কর্পোরেশন বা Corporation

একটি কর্পোরেশন হল আইনগত একটি স্বতন্ত্র সত্তা যা ব্যবসা পরিচালনা করার উদ্দ্যেশ্যে গঠিত হয়। এখানে মালিকদের (শেয়ারহোল্ডারদের) ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক দায় আলাদা থাকে। ব্যবসায়িক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য এই কাঠামো ব্যবস্থা ব্যবসাকে একটি কাঠামোগত এবং মাপযোগ্য পদ্ধতির আওতায় আনে। 

বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এবং বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করার জন্য কর্পোরেশনগুলি প্রায়শই বড় কোন উদ্যোগদের (কোম্পানি/ ব্যবসা/ বিনিয়োগকারীর) দ্বারা কিনে নেয়া হয়। 

Corporation (কোম্পানি) এর প্রকারভেদ:

বাংলাদেশভিত্তিক কর্পোরেট কাঠামো:

বাংলাদেশের কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনুযায়ী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কাঠামো নিম্নরূপ:

  • প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (Private Limited Company) 
  • পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (Public Limited Company)

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কর্পোরেট কাঠামো:

  • সি-কর্পোরেশন (C-Corporation)
  • এস-কর্পোরেশন (S-Corporation)

ক. Private Limited Company (প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি)

এটি এমন একটি কোম্পানি, যার শেয়ার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয় এবং সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শেয়ার ধারণ করতে পারে।

মালিকানা: এই ধরণের কোম্পানির মালিকানা কোম্পানির অধীনস্থ  Directors বা পরিচালকদের কাছে থাকে। এই ধরণের কোম্পানির মূলধনের পরিমাণ তুলনামূলক কম হয় এবং পরিচালনা অপেক্ষাকৃত সহজ। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার বাজারে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয় তাই জনসাধারণের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করা যায় না।

উদাহরণ: বাংলাদেশে অনেক আইটি কোম্পানি ও স্টার্টআপ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত।

খ. Public Limited Company (পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি)

এটি এমন একটি কোম্পানি, যার শেয়ার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং শেয়ারগুলো স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়। যে কারণে জনসাধারণ শেয়ার কিনতে পারে এবং মূলধন সংগ্রহের সুযোগ থাকে। 

পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ বা Board of Directors দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এই জন্য এই ধরণের কোম্পানি কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মনীতি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।

উদাহরণ: বাংলাদেশে গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ ইত্যাদি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি।

. সি-কর্পোরেশন (C-Corporation)

একটি সি-কর্পোরেশন শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানাধীন একটি স্বাধীন আইনি সত্তা।  এই ধরণের কর্পোরেশন সাধারণত বড় ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত একটি কাঠামো, যেখানে কোম্পানি কর দেয় এবং শেয়ারহোল্ডাররাও লভ্যাংশের ওপর কর দেয়। তার মানে ডাবল ট্যাক্সেশন এর আওতাভুক্ত থাকে।

মালিকানা: এ ধরনের ব্যবসা কোম্পানি পরিচালনার জন্য পরিচালক নিয়োগকারী শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানাধীন হয়ে থাকে।

সুবিধা:

  • শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সীমিত দায়বদ্ধতা।
  • ব্যবসার চিরস্থায়ী অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে।
  • শেয়ারহোল্ডারদের সংখ্যা সীমাহীন।
  • মূলধন সংগ্রহের সীমাবদ্ধতা নেই।

অসুবিধা:

  • ডাবল ট্যাক্সেশন।
  • ব্যবসা পরিচালনার খরচ তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। 

কর ব্যবস্থা: কর্পোরেট সত্তা হিসেবে কর্পোরেট কর ধার্য হয়, এবং লভ্যাংশের উপর শেয়ারহোল্ডারদের কর দিতে হয়। 

ঝুঁকি: ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ এর পাশাপাশি বাজারের ঝুঁকি বিদ্যমান।

বাস্তব উদাহরণ: গুগল, মাইক্রোসফট এর মতো কোম্পানি গুলো এর আদর্শ উদাহরণ।

. এস-কর্পোরেশন (S-Corporation)

একটি এস-কর্পোরেশন ডবল ট্যাক্সেশন এড়িয়ে পাস-থ্রু ট্যাক্সেশন অফার করে। তার মানে কোম্পানি নিজে সরাসরি কর দেয় না। শেয়ারহোল্ডারদের ব্যক্তিগত আয়ের সঙ্গে কোম্পানির লাভ-ক্ষতি যোগ করা হয়।

মালিকানা: সীমিত সংখ্যক শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানাধীন।

সুবিধা:

  • পাস-থ্রু ট্যাক্স সুবিধা।
  • শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সীমিত দায়বদ্ধতা।

অসুবিধা:

  • মালিকানার উপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ হবার সম্ভাবনা থাকে।
  • জটিলতর যোগ্যতার (এলিজিবিলিটির) প্রয়োজনীয়তা।
  • সর্বোচ্চ ১০০ জন শেয়ারহোল্ডার থাকতে পারে।

কর ব্যবস্থা: শেয়ারহোল্ডারদের ব্যক্তিগত আয়ের উপর কর আরোপিত হয়।

ঝুঁকি: ব্যবসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যোগ্যতা/ এলিজিবিলিটির  সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

IRS (The Internal Revenue Service) যোগ্যতার মানদণ্ড অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
* The Internal Revenue Service - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের জন্য রাজস্ব পরিষেবা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্যাক্স সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে।

উদাহরণ: মার্কিন ভিত্তিক ছোট কোম্পানি। 

ব্যবসার উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, বিকাশ এবং বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততার জন্য কর্পোরেশন একটি শক্তিশালী এবং কার্যকরি কাঠামো। সীমিত দায়বদ্ধতার সুবিধা এবং ফান্ডিং অ্যাক্সেস এর সুযোগ এই কাঠামোর অন্যতম প্রধান এবং শক্তিশালী দুটি কারণ, যা ব্যবসা পরিচালনা- সম্প্রসারণে ইতিবাচক এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

৪. সীমিত দায় কোম্পানি (LLC)

একটি সীমিত দায় কোম্পানি (LLC) একটি বহুমুখী ব্যবসায়িক কাঠামো ব্যবস্থা। এলএলসি একটি নমনীয় কাঠামো যা উভয় অংশীদারিত্ব এবং কর্পোরেশনের সুবিধা প্রদান করে। 

এই কাঠামোটি তার সদস্যদের সীমিত দায় সুরক্ষা প্রদান করে, ব্যবস্থাপনায় নমনীয়তা এবং সরলীকৃত ট্যাক্সেশন পন্থাগুলি বিদ্যমান রাখে। এই কাঠামো ছোট এবং মাঝারি আকারের ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোর ক্ষেত্রে জনপ্রিয় একটি ব্যবস্থা।

বাংলাদেশে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মাধ্যমে সীমিত দায় কাঠামো ব্যবহার করা হয়।

মালিকানা: সীমিত দায় বিশিষ্ট সদস্যদের মালিকানাধীন।

সুবিধা:

  • নমনীয় ব্যবস্থাপনা।
  • সীমিত দায় সুরক্ষা।

অসুবিধা:

  • বিভিন্ন স্তরের সম্মতি প্রয়োজন। 
  • অংশীদারিত্বের পরিমাণ অনুযায়ী খরচ তুলনামূলক বেশি।

কর ব্যবস্থা: পাস-থ্রু ট্যাক্সেশন।

ঝুঁকি: সদস্যের মধ্যকার বিরোধ ব্যবসায়িক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে। 

বাস্তব উদাহরণ: এয়ারবিএনবি।

ব্যবসায়িক কাজে যারা নমনীয়তা এবং দায় সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয় তাদের জন্য এলএলসি একটি আদর্শ হতে পারে। এই ব্যবস্থায় নানা স্তরের সম্মতি প্রয়োজন হলেও, প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার নমনীয়তা এই কাঠামোকে বিভিন্ন শিল্পের জন্য একটি পছন্দের কাঠামো করে তোলে।

৫. সমবায় (Co-operative Society)

সমবায় একটি সদস্য-মালিকানাধীন ব্যবসায়িক মডেল।যেখানে ব্যবসায়িক লভ্যাংশের পরিবর্তে সদস্যদের পারস্পরিক সুবিধার জন্য কাজ করা হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক নীতি এবং সম্প্রদায়ের সহযোগিতার উপর জোর দিয়ে, প্রত্যেক সদস্যের বিনিয়োগ এর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সকলের সমান অংশগ্রহণ থাকে।

এটি এমন একটি ব্যবসায়িক সত্তা যেখানে বিস্তর সদস্য এবং মালিকপক্ষ তাদের পারস্পরিক সুবিধার জন্য ব্যবসা পরিচালনার জন্য একদল ব্যক্তি নিয়োগ করেন এবং যাদের দ্বারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সদস্যরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব, লাভ এবং সুবিধাগুলি ভাগ করে নেয়।

সমবায় কাঠামো বাংলাদেশে Co-operative Societies Act, 2001 এর অধীনে নিবন্ধিত করা হয় ।

মালিকানা: বিস্তৃত সদস্য এবং মালিকানাধীন পক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যারা ব্যবসার পরিষেবাগুলি ব্যবহার করেন এবং কার্যকলাপেও অবদান রাখেন৷

সুবিধা:

  • সমান ভোটাধিকার (এক সদস্য, এক ভোট)।
  • মুনাফা সর্বাধিকীকরণের পরিবর্তে পারস্পরিক সুবিধার দিকে মনোনিবেশ করে।
  • সেয়ার্ড রিসোর্সের কারণে কম অপারেশনাল খরচ।

অসুবিধা:

  • গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ধীরগতির হতে পারে।
  • বিনিয়োগ সদস্যদের কাছ থেকে আসে, সেকারনে মূলধন সীমিত থাকে। 

কর ব্যবস্থা:

সদস্যদের মধ্যে মুনাফা বিতরণ বা পুনরায় বিনিয়োগ করা হলে কিছু পরিমাণ কর থেকে অব্যাহতি লাভের সুবিধা থাকে।

ঝুঁকি:

  • বড় আকারের সম্প্রসারণের জন্য তহবিল সংগ্রহে অসুবিধা।
  • সদস্য বিচ্ছিন্নতা ব্যবসায়িক কর্মদক্ষতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। 

বাস্তব উদাহরণ: মিল্ক ভিটা

সমবায়, সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সুবিধার সমবণ্টনের প্রতীক। যদিও গণতান্ত্রিক প্রকৃতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে। তবুও পারস্পরিক সুবিধার্থে সম্পদ সংগ্রহ এবং ব্যবহার করার লক্ষ্যে নির্দিস্ট কোন গোষ্ঠীর জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত একটি ব্যবস্থা।

৬. অলাভজনক সংস্থা (Non-Profit Organization)

একটি অলাভজনক সংস্থা হল একটি ব্যবসায়িক কাঠামো যা মুনাফা অর্জনের পরিবর্তে সামাজিক বা সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাবার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করে। এই সংস্থাগুলি তাদের লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নিতে তাদের আয়ের উদ্বৃত্ত অংশ পুনঃবিনিয়োগ করে, প্রায়ই ট্যাক্স বিরতি এবং পাবলিক ফান্ডিং উপভোগ করে।

একটি অলাভজনক সংস্থা মালিকদের জন্য মুনাফা অর্জনের পরিবর্তে একটি জনসাধারণ বা সামাজিক সুবিধা-সেবা পরিবেশন করে।

বাংলাদেশে Non-Profit Organization সোসাইটি, ট্রাস্ট বা সেকশন ২৮ কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। 

মালিকানা: কোন মালিক নেই; পরিচালনা পর্ষদ বা ট্রাস্টি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

সুবিধা:

  • গুরুত্বপূর্ণ- যোগ্যতাসম্পন্ন কার্যক্রমের জন্য কর ছাড়।
  • অবদান রাখা ব্যক্তিবর্গের জন্য কর-ছাড়যোগ্য হতে পারে।
  • সামাজিক প্রভাবের উপর গুরুত্বারোপ করে। 

অসুবিধা:

  • মূলধন বাড়াতে সীমিত সুযোগ।
  • অনুদানের উপর ব্যাপক নির্ভরশীলতা।

কর ব্যবস্থা: যদি এটি যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করে তবে ফেডারেল এবং রাষ্ট্রীয় কর থেকে অব্যাহতি লাভ হয়।

ঝুঁকি:

  • তহবিলের ওঠা নামার কারণে আর্থিক অস্থিতিশীলতা।
  • কোন বিষয়ে নিয়ন্ত্রক পর্ষদের সম্মতি পাওয়া কঠিন হতে পারে।

বাস্তব উদাহরণ: রেড ক্রিসেন্ট, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড।

অলাভজনক সংস্থাগুলি সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও তারা অনুদানের উপর খুব বেশি নির্ভর করে, তাদের কর-মুক্ত অবস্থা এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তাদেরকে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান করে তোলে।

৭. ফ্র্যাঞ্চাইজ (Franchise)

ফ্র্যাঞ্চাইজ এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল যেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজার (প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড) তার ব্র্যান্ড, অপারেশন এবং প্রক্রিয়াগুলি ফ্র্যাঞ্চাইজির (অধীনস্থ ছোট ব্যবসা) কাছে লাইসেন্স বিক্রি করার মাধ্যমে ব্যবসা করার অনুমোদন দিয়ে থাকে।

এটি এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল যেখানে একজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের (ফ্র্যাঞ্চাইজার) অধীনে একটি ব্যবসা পরিচালনা করে। এখানে পারষ্পারিক লাভ এবং দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার মাধ্যমে (ফ্র্যাঞ্চাইজার-ফ্র্যাঞ্চাইজি) উভয়পক্ষ উপকৃত হয়ে থাকে।

মালিকানা: ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানাধীন কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজারের নির্দেশিকা অনুসারে পরিচালিত হয়।

সুবিধা:

  • প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড (ফ্র্যাঞ্চাইজার) স্বীকৃতি। 
  • ফ্র্যাঞ্চাইজার (প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড) থেকে অব্যাহত সমর্থন লাভ করে থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি (অধীনস্থ ছোট ব্যবসা)।
  • একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম ঝুঁকি ফ্র্যাঞ্চাইজির (অধীনস্থ ছোট ব্যবসা) জন্য।

অসুবিধা:

  • ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের উপর সীমিত নিয়ন্ত্রণ।
  • উচ্চ প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং চলমান রয়্যালটি।

কর ব্যবস্থা: ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলিকে স্বাধীন ব্যবসা হিসাবে ট্যাক্স করা হয়।

ঝুঁকি:

  • অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজির কর্মের কারণে খ্যাতি ঝুঁকিতে পারে ।
  • ফ্র্যাঞ্চাইজারের সাফল্যের উপর ব্যবসায়িক সফলতা নির্ভর করে।

বাস্তব উদাহরণ: ম্যাকডোনাল্ডস, পিৎজাহাট, কেএফসি। 

কম ঝুঁকি এবং প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল একটি চমৎকার উপায়। তবে, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের অবশ্যই ফি’র ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দিতে হয় এবং ফ্র্যাঞ্চাইজারের নিয়মগুলি অনুসরণ করতে হবে, যা তাদের স্বায়ত্তশাসনকে অনেকাংশেই সীমিত করতে পারে।

৮. যৌথ উদ্যোগ (Joint Venture)

একটি যৌথ উদ্যোগ হল একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক প্রকল্প গ্রহণের জন্য দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে একটি অস্থায়ী অংশীদারিত্ব। যেখানে দুই বা ততোধিক পক্ষ একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প বা ব্যবসায়িক কার্যকলাপের জন্য একত্রিত হয়। 

এই ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার ভেতর পারস্পরিক সুবিধার্থে অভীষ্ট লক্ষ্যের সাথে জড়িত সকল পক্ষের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সক্ষমতাকে একত্রিত করে কাজ করে।

এই ধরণটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য যৌথ উদ্যোগ এর মাধ্যমে প্রচলিত।

মালিকানা: অংশীদারিত্ব চুক্তির ভিত্তিতে সেয়ার্ড মালিকানা।

সুবিধা:

  • অংশীদারদের সম্পদ এবং দক্ষতা একত্রিত করে।
  • সার্বিক ঝুঁকি এবং খরচ ভাগ করা হয়। 
  • নতুন বাজার এবং প্রযুক্তির অ্যাক্সেস থাকে। 

অসুবিধা:

  • সম্পদ বরাদ্দ বা মুনাফা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ দেখা দিতে পারে।
  • সময়কাল এবং সুযোগ সীমিত থাকে।

কর ব্যবস্থা: একটি অংশীদারিত্ব বা একটি পৃথক আইনি সত্তা হিসাবে গঠিত হয় এবং সে অনুযায়ে কর ধার্য হয়। 

ঝুঁকি:

  • অংশীদারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকল্পটিকে লাইনচ্যুত করতে পারে।
  • প্রকল্প ব্যর্থ হলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

বাস্তব উদাহরণ: Sony Ericsson, BMW-Toyota (collaboration on hydrogen fuel cells)

যৌথ উদ্যোগগুলি নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি ফোকাসড এবং সহযোগিতামূলক পদ্ধতি। যদিও এক্ষেত্রে উভয় পক্ষ সম্ভাব্য দ্বন্দ্বের ঝুঁকি নিয়ে থাকে, তাদের সম্পদ এবং দক্ষতা সঠিকভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতা প্রায়শই তাদেরকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।

. হোল্ডিং কোম্পানি (Holding Company)

হোল্ডিং কোম্পানি হল একটি ব্যবসায়িক সত্তা যা অন্য কোম্পানির শেয়ার কেনার মাধ্যমে সেই কোম্পানির মালিকানার জন্য গঠিত হয়। এধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সরাসরি কোন পণ্য বা পরিষেবা উৎপাদনে জড়িত নয়, বরং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগের সুযোগগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এই ধরণটি বাংলাদেশে মাল্টি-লেভেল কোম্পানি স্ট্রাকচার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মালিকানা: সাবসিডিয়ারি কোম্পানীতে (একটি ব্যবসায়িক সত্তা বা কর্পোরেশন যা সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে অন্য কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা মালিকানাধীন) কন্ট্রোলিং স্টেকের মালিক।

সুবিধা:

  • সাবসিডিয়ারিদের মধ্যে দায় আলাদা করার মাধ্যমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করা যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ পরিচালনা করা সহজ হয়।

অসুবিধা:

  • ব্যবস্থাপনার একাধিক স্তর থাকে বিধায় তুলনামূলক জটিল একটি কাঠামো।
  • সাবসিডিয়ারি কোম্পানির কর্মক্ষমতার উপর সাফল্য নির্ভর করে। 

কর ব্যবস্থা: সাবসিডিয়ারি থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর কর দেওয়া হয়েছে।

ঝুঁকি:

  • সাবসিডিয়ারিগুলো কম পারফর্ম করলে আর্থিক ঝুঁকি।
  • সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলো থেকে সম্ভাব্য আইনি দায়বদ্ধতা।

বাস্তব উদাহরণ: বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে, এলফাবেট ইনক। 

হোল্ডিং কোম্পানিগুলি বিনিয়োগ পরিচালনা এবং ঝুঁকি বৈচিত্র্যের জন্য একটি কৌশলগত উপায় অফার করে। তাদের কাজের জটিলতা থাকা সত্ত্বেও, তাদের নিরাপত্তা এবং সম্পদের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতা তাদের একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক হাতিয়ার হিসেবে গড়ে করে তোলে।

১০. সরকারী মালিকানাধীন কর্পোরেশন (Government-Owned Corporation)

সরকারী মালিকানাধীন কর্পোরেশন (জিওসি) হল সরকারী সেবা প্রদানের জন্য সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত সত্ত্বা। এটি এমন একটি সংস্থা যা সরকার দ্বারা অত্যাবশ্যকীয় জনসেবা প্রদানের জন্য পরিচালিত হয়। এই কর্পোরেশনগুলি ব্যক্তিগত ব্যবসার মতো কাজ করলেও, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, রাজস্ব উৎপন্ন করে এবং জনকল্যাণ নিশ্চিত করে।

মালিকানা: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং সরকার দ্বারা পরিচালিত।

সুবিধা:

  • সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান করে।
  • সরকারের কাছ থেকে স্থিতিশীল তহবিল প্রাপ্ত হয়।

অসুবিধা:

  • আমলাতন্ত্রের কারণে কাজে অদক্ষতার সম্ভাবনা থাকে।
  • সীমিত মুনাফা প্রণোদনা স্থবিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

কর ব্যবস্থা: কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে বা নির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় নিয়ম সাপেক্ষে কর মওকুফ করা হয়।

ঝুঁকি:

  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর নির্ভরশীল।
  • অব্যবস্থাপনা ফলে করদাতাদের উপর আর্থিক বোঝা তৈরি করতে পারে।

বাস্তব উদাহরণ: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সোনালী ব্যাংক ইত্যাদি সরকারি মালিকানাধীন।

সরকারী মালিকানাধীন কর্পোরেশনগুলি জনসেবা এবং ব্যবসায়িক দক্ষতার মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনে। যদিও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতায় ভুগতে পারে, তবুও জনকল্যাণে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সেবা সমাজে তাদের গুরুত্ব নিশ্চিত করে।

কিভাবে সঠিক ধরণটি নির্বাচন করবেন? 

ব্যবসার ধরণ বা কাঠামো নির্ধারণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আপনার ব্যবসার আকার, প্রকৃতি, ঝুঁকি, কর কাঠামো, মালিকানা, এবং পরিচালনার পরিকল্পনা ইত্যাদি বিবেচনা করে সঠিক ধরণটি নির্বাচন করতে হয়।

নিচের টেবিলটি দেখুন যা থেকে আপনি একটি ধারণা পেতে পারেন:

ব্যবসার ধরণ

কাদের জন্য উপযুক্ত?

কী ধরনের ব্যবসা?

Sole Proprietorship

ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য

দোকান, ফ্রিল্যান্সিং, ছোট সার্ভিস

Partnership

দুই বা ততোধিক মালিক

আইনজীবী ফার্ম, ছোট ব্যবসা

LLP (Limited Liability Partnership)

ঝুঁকি কমাতে চান এমন পার্টনারশিপ

আইটি ফার্ম, কনসাল্টিং ফার্ম

Private Limited Company (Ltd)

মাঝারি ও বড় ব্যবসা

স্টার্টআপ, ম্যানুফ্যাকচারিং

Public Limited Company (PLC)

বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন

বড় কর্পোরেশন, ব্যাংক

Non-Profit Organization

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান

এনজিও, চ্যারিটি

Franchise

ব্র্যান্ডের অধীনে ব্যবসা করতে চাইলে

কেএফসি, পিজা হাট

Joint Venture

বিদেশি বা স্থানীয় অংশীদার

প্রকল্প ভিত্তিক কোম্পানি


আপনি যদি আপনি ছোট ব্যবসা করতে চান তাহলে Sole Proprietorship বা একক মালিকানা সবচেয়ে উপযুক্ত।

যদি দুইজন পার্টনার নিয়ে ফার্ম দিতে চান তা হলে সঠিক কাঠামো হবে LLP বা Private Ltd.

আর যদি আপনি বড় বিনিয়োগ করে ব্যবসা করতে চান তাহলে Public Limited Company সঠিক ধরণ হতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক কাঠামো বুঝতে পারলে আপনি আপনার লক্ষ্য, সামর্থ্য এবং ঝুঁকি সহনশীলতা অনুযায়ী সঠিক ব্যবসায়িক মডেলটি নির্বাচন করতে পারবেন। একটি ছোট ব্যবসা শুরু করা হোক কিংবা একটি গ্লোবাল কর্পোরেশনে স্কেল করা হোক না কেন, একটি উপযুক্ত ব্যবসায়িক কাঠামো নির্বাচন করতে পারলে আপনার ব্যবসার অপারেশনাল দক্ষতা এবং ব্যবসায়িক বিকাশের ভিত্তি তৈরিতে উপকৃত হবেন।