আর্থিক ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? Financial Management এর প্রকারভেদ, নিয়ম এবং কার্যাবলী

ব্যবস্থাপনা বা Management বিষয়টি একটি ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে মৌলিক এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  ব্যবসায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাপনা যেমন মানব-সম্পদ ব্যবস্থাপনা (Human Resource Management), বিপণন ব্যবস্থাপনা (Marketing Management), বিক্রয় ব্যবস্থাপনা (Sales Management), কৌশলগত ব্যবস্থাপনা (Strategic Management) ইত্যাদির মধ্যে প্রথমে আসে আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি। 

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা কোনো ব্যবসার আর্থিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা, সংগ্রহ, ব্যবহার, নিয়ন্ত্রণ এবং তত্ত্বাবধান করে থাকে। 

আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা Financial Management কাকে বলে?

আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা Financial Management হলো ব্যবসার এমন একটি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ওই ব্যবসার আর্থিক বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা, দিকনির্দেশনা এবং তা কিভাবে সেই ব্যবসার আর্থিক উন্নতিতে সাহায্য করে সে সম্পর্কে সঠিক ধারনা প্রদান করে।

সহজ ভাষায়, আর্থিক ব্যবস্থাপনা হলো ব্যবসার নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য আর্থিক কৌশল তৈরি এবং বাস্তবায়ন করা।

উদাহরণ হিসাবে ধরুন, মাজারি আকারের একটি উৎপাদন কোম্পানি যেটি তার উৎপাদন প্রক্রিয়া বাড়াতে চায়। সেজন্য কোম্পানিটি একটি নতুন যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, যা উৎপাদন খরচ কমাতে এবং পণ্যের গুণমান বাড়াতে সাহায্য করবে। 

যন্ত্রটি কেনার জন্য কোম্পানিটি একটি বিশদ আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করে, যেখানে যন্ত্রের মূল্য, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং সম্ভাব্য লাভের পূর্বাভাস অন্তর্ভুক্ত থাকে। কোম্পানিটি ব্যাঙ্ক লোন এবং নিজস্ব সঞ্চয় উভয় মাধ্যমে থেকেই এই যন্ত্র কেনার অর্থ সংগ্রহ করে। যন্ত্রটি কেনার পর, কোম্পানিটি মাসিক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে যা যন্ত্রের ব্যবহার এবং এর মাধ্যমে অর্জিত লাভ পর্যবেক্ষণ করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোম্পানিটি নিশ্চিত হয় যে যন্ত্রটি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং প্রত্যাশিত লাভ প্রদান করছে। 

উপরের উদাহরণটি আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি স্পষ্ট দৃশ্য, যেখানে পরিকল্পনা, অর্থ সংগ্রহ, এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যবসার আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করা হয়।

আর্থিক ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যঃ

আর্থিক ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হল ব্যবসায়ের অর্থের কার্যকরী ও দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা, যাতে ব্যবসায়ের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।

এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল:   

১. মুনাফা সর্বাধিকীকরণ: বিনিয়োগের সুযোগ সনাক্তকরণ, আয় বৃদ্ধি, খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং ঝুঁকি মোকাবেলার মাধ্যমে ব্যবসায়ের সর্বোচ মুনাফা নিশ্চিতকরণ এই ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য।

২. অর্থের নগদ প্রবাহ বজায় রাখা: দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত নগদ অর্থের যোগান বা তারল্যের প্রবাহ বজায় রাখার মাধ্যমে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখা।

৩. আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং ভারসাম্য রক্ষা: বিভিন্ন আর্থিক বিষয় যেমন মূলধন, ঋণ এবং ইক্যুইটি এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। 

৫. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ব্যবসায় অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় আর্থিক ঝুঁকি চিহ্নিত করা এবং তা কমানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

৬. আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য: আয় ও খরচের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যার মাধ্যমে সম্পদের সর্বনিম্ন অপচয় নিশ্চিত করা যায় এবং অপ্রাসঙ্গিক ব্যয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়।

৭. ঋণ ব্যবস্থাপনাঃ ব্যবসায় পরিচালনায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থা করা এবং সময়মতো ঋণ পরিশোধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

৮. শেয়ারহোল্ডারদের সম্পদের সর্বাধিককরণ: শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগের মূল্য সর্বাধিক করা আর্থিক ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য যা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সর্বোচ্চ রিটার্ন নিশ্চিত করে এবং কোম্পানির প্রতি তাদের আস্থা বৃদ্ধি করে।

Financial Management এর প্রকারভেদ:

সাধারণত ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট কে নিম্নোক্ত কয়েক প্রকারে ভাগ করা যায়:

  • Working Capital বা চলতি মূলধন ব্যবস্থাপনা 
  • Revenue Cycle বা আয়ের চক্র ব্যবস্থাপনা
  • Capital Budgeting বা মূলধন বাজেট ব্যবস্থাপনা
  • Capital Structure বা মূলধন কাঠামো

চলতি মূলধন ব্যবস্থাপনা 

এটি সাধারণত দৈনন্দিন কার্যক্রম যেমন কর্মচারীদের বেতন প্রদান বা কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নিশ্চিত করার উপর মনোযোগ দেয়। এছাড়াও Working Capital এর মধ্যে নগদ টাকা, হাতে থাকা পণ্যসামগ্রী, বা অন্যান্য সম্পদ অন্তর্ভুক্ত থাকে যা জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে।

আয়ের চক্র ব্যবস্থাপনা

Revenue Cycle একটি কোম্পানি তার পণ্য ও পরিষেবা বিক্রি করে সময়ের সাথে সাথে যা আয় করে তা হিসাব করে। 

সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস হিসাবে যে রেভিনিউ আসে তা মাসিক বা ত্রৈমাসিক সময়কালের মধ্যে Recurring Revenue হিসাবে রাখা হয়।

মূলধন বাজেট ব্যবস্থাপনা

Capital Budgeting একটি কোম্পানির স্বল্প-মেয়াদী এবং দীর্ঘ-মেয়াদী আর্থিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়। এটি দ্বারা কোম্পানির বিনিয়োগ বা প্রকল্প গুলো কতটুকু লাভজনক হবে তার সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করা হয়। 

মূলধন কাঠামো ব্যবস্থাপনা

মূলধন কাঠামো বা Capital Structure হল ঋণ এবং ইক্যুইটির সমষ্টি যা একটি কোম্পানি তার  কার্যক্রম, অধিগ্রহণ, বিনিয়োগ এবং বড় করার জন্য ব্যবহার করে থাকে। এই কাঠামো সাধারণত ঋণ ও ইক্যুইটি অনুপাতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

কিভাবে ব্যবসায় আর্থিক ব্যবস্থাপনা করা হয়? নিয়ম:

আর্থিক ব্যবস্থাপনা একটি ব্যবসার খুঁটিকে শক্ত করে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবসার কোন খাতে কতটা খরচ হবে সেটা যেমন জানা যায়, তেমনি কোনো ধরনের আর্থিক হুমকি থেকেও সহজে বের হয়ে আসা যায়।  

ব্যবসার ধরণ বুঝে এই ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়ে থাকে।  যেমন, একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং একটি দোকানের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এক হবে না। আবার একেক দেশের নিয়ম অনুযায়ীও এই ব্যবস্থাপনার নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে।  

সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী এই ব্যবস্থাপনা কিভাবে করা যেতে পারে তার কিছু দিক তুলে ধরা হলো- 

  1. আর্থিক পরিকল্পনা 
  2. মূলধন সংগ্রহ এবং কাঠামো ব্যবস্থাপনা
  3.  বিনিয়োগের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন
  4. ক্যাশ বা নগদ অর্থ প্রবাহ ব্যবস্থাপনা
  5. বাজেট ব্যবস্থাপনা
  6. আর্থিক প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণ
  7. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

১. আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা

ব্যবসার অর্থ গুছিয়ে রাখতে আগেই ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা উচিত।  এতে করে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসায় পরিচালনা করা সহজ হয়।  আর্থিক পরিকল্পনা তৈরির শুরুতে তাই ব্যবসার স্থান, এর পণ্য বা সেবা, উৎপাদন প্রক্রিয়া, বাজারজাতকরণ বিবিধ বিষয়ে জ্ঞান রাখা প্রয়োজন।  

কী, কখন এবং কাকে পণ্য বিক্রি করবেন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরি।  তখন উৎপাদনের খরচ, সময়োপযোগী প্রচারণার খরচ এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য একত্রিত করা যায়।  এই তথ্য ব্যবসায় আর্থিক ব্যবস্থাপনার পরবর্তী ধাপগুলোর পরিষ্কার ধারণা দিতে সক্ষম।   

২. মূলধন সংগ্রহ, নির্ধারণ এবং কাঠামো ব্যবস্থাপনা

ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত মূলধনের সঠিক ব্যবস্থাপনা আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে গুছিয়ে আনতে সাহায্য করে।  অনেকে লোন করে ব্যবসায় অগ্রসর করে, অনেকে আবার নিজস্ব পুঁজি খাটিয়ে।  

এমতাবস্থায়, পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূলধনের সঠিক ব্যবহার করা গেলে কোথায় কোন খরচ হচ্ছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।  উৎপাদন কতটা বাড়াতে হবে, কতটা কমাতে হবে বা কোথায় কোন খরচটা উপরি হচ্ছে এ বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরি। 

মূলধনের বিষয়টা মাথায় রেখে কোথায় কতটা ব্যয় সংকোচন করা যেতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া যায়।  এতে করে অর্থের অতিরিক্ত অপচয় রোধ করা সম্ভব।   

৩. বিনিয়োগের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন

সংগৃহীত মূলধনের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হলো Financial Management এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মূলধনের অর্থ কীভাবে বিনিয়োগ করা হবে, কোন প্রকল্পে ব্যবহার করা লাভজনক হবে, ব্যয়ের খাতগুলো কেমন হবে তা পরিকল্পনা করা হয় এই ব্যবস্থাপনায়। 

সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করার পর সেই অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা যাতে এটি নিশ্চিত হয় যে বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া সম্বব হচ্ছে।

৪. ক্যাশ বা নগদ অর্থ-প্রবাহ ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক নিয়ন্ত্রণ

ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট এ নগদ অর্থ-প্রবাহের কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। এর মধ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলি তাদের দৈনন্দিন লেনদেনের রেকর্ড সমূহ সঠিকভাবে সংগ্রহ এবং স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী দায় গুলো পরিশোধ ব্যবস্থাপনা করা হয়। এটি নগদ আয় এবং ব্যয়ের উপর নিয়মিত নজরদারি করে।

এই ব্যবস্থাপনায় আর্থিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমস্ত আর্থিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে অর্থ সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং অপচয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে।

৫. বাজেট তৈরি করা

বাজেট হলো একটি কোম্পানি বা ব্যবসার জন্য ভবিষ্যতের আয় ও ব্যয়ের বিস্তারিত পরিকল্পনা। বাজেট তৈরি করা এবং তার ভিত্তিতে খরচ পরিচালনা করা আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি অপরিহার্য অংশ। এটি ভবিষ্যতের আয় ও ব্যয়ের পূর্বাভাস প্রদান করে এবং পরিকল্পিত ব্যয়ের সাথে বাস্তব ব্যয়ের তুলনা করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে। 

এক একটা কোম্পানি এক এক রকম ভাবে বাজেট তৈরি করে থাকে।  এক্ষেত্রে, অবন্তরীণ সম্ভাব্য ব্যয়কৃত অর্থ এবং প্রচারণার খাতে সম্ভাব্য খরচের আলাদা আলাদা বাজেট পরিকল্পনা থাকতে পারে।  কোম্পানির এক বছরে কতটা অর্থ ব্যয়ের অবস্থা তৈরি হচ্ছে তা লিপিবদ্ধ করা থাকলে পরবর্তীতে তা হিসাব রাখতে সাহায্য করে।  

৬. আর্থিক প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণ

আর্থিক বিশ্লেষণ হলো ব্যবসায়ের আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ের শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ এবং হুমকি চিহ্নিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি এবং তা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের কৌশল নির্ধারণ।

ব্যবসার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত বিশ্লেষণ করা উচিত। এর মাধ্যমে ব্যবসার আর্থিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং প্রয়োজনে নীতিগত পরিবর্তন করা সম্ভব হয়।

৭. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

ব্যবসায় পরিচালনায় রিস্ক বিষয়টা মাথায় রেখে আগানো গুরুত্বপূর্ণ।  যে কোনো রকম উৎপাদনে বিপর্যয়, বাজারের সাথে প্রতিযোগীতা, পণ্য সরবরাহে অসাবধানতা বিবিধ কারণে অর্থ লগ্নি হতে পারে।  সম্ভাব্য এসব হুমকি সম্পর্কে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আর্থিক বণ্টন সহজ হয়।  

ব্যবসাকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট অতীব গুরুত্বপূর্ণ।  যেমন, অনেক কোম্পানি তাদের এসব ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে ইন্স্যুরেন্স পরিকল্পনা করে থাকে।  অর্থের একটা বড় অংশ এই হুমকি বাবদ ধরে রাখা Financial Management এর অন্যতম কাজ।  

জরুরি তহবিল ব্যবসার একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা।  এর মাধ্যমে ঝুঁকি সম্পর্কিত করণীয় যেমন নির্ধারণ করা যায় তেমনি খরচের আশঙ্কা কমে গেলে তা ভবিষ্যতের পুঁজি হিসেবে কাজে আসে।  

আর্থিক ব্যবস্থাপনার Functions বা কার্যাবলী:

ছোট কোম্পানিগুলিতে একজন ব্যক্তি বা একটি ছোট টিম ব্যবসার জন্য সমস্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী সম্পাদন করতে পারে। বড় আকারের কোম্পানিগুলিতে সাধারণত নির্দিষ্ট কার্যাবলীর জন্য আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট থাকে। 

কোনো কোম্পানির আর্থিক ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী এবং এগুলো সম্পাদনের জন্য দায়ীদের বিষয় নিম্নে দেওয়া হলো:

১. হিসাবরক্ষণ (Accounting): 

কোম্পানি বা ব্যবসার সমস্ত আর্থিক লেনদেনের সনাক্তকরণ, লিপিবদ্ধকরণ, সংরক্ষণ এবং যাচাইকরণ অন্তর্ভুক্ত। Accountant বা হিসাবরক্ষণ ডিপার্টমেন্ট উক্ত কাজের জন্য দায়ী থাকে।

২. প্রকল্প ব্যবস্থাপনা (Project Management): 

কোম্পানির আয় ও ব্যয়ের প্রধান ক্ষেত্র হল চলমান প্রজেক্ট সমূহ যা ইঞ্জিনিয়ার, পরামর্শদাতা এবং আইনজীবীদের পেশাদার পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ফিনান্স ডিপার্টমেন্ট প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ করা এবং এর থেকে আয় তদারকি করার জন্য দায়ী থাকে।

৩. ক্রয় (Procurement):

কোম্পানির পণ্য তৈরির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ এবং কাঁচামাল সরবরাহকারীদের নিকট থেকে সরাসরি ক্রয় করা হয়। সাপ্লাই চেইন অথবা অপারেশন ডিপার্টমেন্ট এই ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য দায়ী থাকে।

এছাড়াও দৈনন্দিন কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত বিষয়গুলো যেমন অফিসের আসবাবপত্র, ল্যাপটপ এবং স্টেশনারি ক্রয়ের উদ্যোগ ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুমোদন এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

৪. আর্থিক পরিকল্পনা ও বিশ্লেষণ:

বড় কোম্পানিগুলিতে মাসিক বা বাৎসরিক আর্থিক পরিকল্পনা এবং বাজেট তৈরি করার জন্য পৃথক টীম থাকে। যারা কোন একটি পরিস্থিতিতে উদ্ভূত সবচেয়ে খারাপ এবং ভালো অবস্থানের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।

এরা কোম্পানির অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বিক্রয় পরিকল্পনা, শ্রম পরিকল্পনা এবং অপারেশনাল পরিকল্পনার পূর্বাভাস এবং বাজেট তৈরি করে থাকে।

৫. কর বা Tax:

প্রত্যেক কোম্পানিকে তার নিজ নিজ দেশের নিয়ম অনুযায়ী সরকারকে আয়কর কর জমা দিতে হয়। ছোট এবং মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলো সাধারণত বিভিন্ন অডিট ফার্মের মাধ্যমে আয়কর জমা দিয়ে থাকে। তবে বড় কোম্পানিগুলির জন্য এই প্রক্রিয়া জটিল হওয়ার কারণে তাদের নিজস্ব টিম থাকে যারা করের বিষয়গুলো তদারকি করে থাকে।

বড়ো কোম্পানি গুলোতে ট্রেজারি বিভাগ থাকে যারা ব্যাংকের সাথে কোম্পানির মূলধন, ঋণ গ্রহণ, দেনা এবং নগদ প্রবাহের ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

উপরে উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলো সঠিকভাবে গ্রহণের ফলে একটি কোম্পানি বা ব্যবসার আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে এবং সর্বোপরি ব্যবসার মূল গন্তব্যে এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়।