বিজনেস মডেল কি? এটি কত প্রকার?  কিভাবে বিজনেস মডেল তৈরি করবেন?

কথায় আছে, “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না”।  সকালে একটা ব্যবসার আইডিয়া মাথায় এলেই কেউ বিকালে সেটা শুরু করতে পারে না।  সেই আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে কতটা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব, সেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ কেমন হতে পারে, লোকবল, মুনাফা, রিস্ক, অন্যদের সাথে প্রতিযোগীতা, সেবার মানসহ বিভিন্ন বিষয় মিলিয়ে একটা রোডম্যাপ তৈরি না করলে টিকে থাকার প্রশ্নই আসে।  আর এই টিকে থাকার বিষয়টিকেই সহজ করে দেয় একটা Business Model.

বিজনেস মডেল বা Business Model কি?

যেকোনো ব্যবসায় শুরু করার আগে একটি সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়।  প্রতিটি ব্যবসার মূল লক্ষ্য থাকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা।

Business Model বা ব্যবসায়িক মডেল বলতে কোনো একটি কোম্পানির মুনাফা অর্জনের জন্য যাবতীয় পরিকল্পনাকে বুজায় যা দ্বারা কোম্পানিটি তার পণ্য বা সেবা বিক্রি করার পরিকল্পনা, সঠিক বাজার চিহ্নিত করণ এবং প্রত্যাশিত খরচের হিসাব করে থাকে। 

বিজনেস অর্থাৎ ব্যবসা আর মডেল অর্থাৎ রূপরেখা, তার মানে বিজনেস মডেল হচ্ছে যেকোনো ব্যবসার ব্লুপ্রিন্ট বা পূর্ব-পরিকল্পনার রূপরেখা, যা ঐ ব্যবসাকে সামনে এগিয়ে যেতে, গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এবং মুনাফা অর্জন করতে সাহায্য করে।  

বিজনেস মডেল এবং বিজনেস প্ল্যানের মধ্যে পার্থক্যঃ

ব্যবসায়ের সাথে জড়িত অনেক টার্ম শুনতে খুব কাছাকাছি মনে হয়।  তবে বিষয়গুলো একটার সাথে আরেকটা সম্পর্কযুক্ত হলেও ধারণাগত দিক থেকে একেবারেই আলাদা হয়ে থাকে।  ঠিক সেরকমভাবে বিজনেস মডেলের সাথে বিজনেস প্ল্যান গুলিয়ে ফেলতে পারেন অনেকে। 

বিজনেস প্ল্যান (Business Plan) বা ব্যবসায় পরিকল্পনা হচ্ছে কোনো ব্যবসার নির্ধারিত ও আনুষ্ঠানিক লিখিত নথি।  এই নথির মাধ্যমে সেই ব্যবসাটির লক্ষ্য, লক্ষ্য অর্জনে কার্যকরী ভূমিকা বা পদ্ধতি এবং সময়সীমা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। 

কোন ধরনের Business Model নিয়ে আপনি কাজ করতে যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার সেই ব্যবসার পরিকল্পনা কি হওয়া উচিত।  সেক্ষত্রে বলা যায়, বিজনেস মডেল প্রস্তুত করার পরবর্তী ধাপ হিসেবে কাজ করে একটি বিজনেস প্ল্যান।  

আরো পড়ুন: বিনা পুঁজিতে শুরু করতে পারবেন এমন ২৫টি ব্যবসার আইডিয়া

Business Model-এর প্রকারভেদ:

একটি ব্যবসায় বড় নাকি ছোট অথবা সেই ব্যবসাটির সেবা, বাজারমূল্য বা পরিমাণের উপর নির্ভর করে Business Model বিভিন্ন রকম হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে বিজনেস মডেল ২ ধরনের বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে।  

১. নির্মাতা বা মেনুফেকচারার

এ ধরণের মডেল থেকে ব্যবসার মূল পণ্য বা সেবা সরাসরি প্রস্তুত হয়।  নির্মাতারা সাধারণত কোনো পণ্যের উৎপাদনের বিষয়টিকে মূল হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।  খুব কম ক্ষত্রে তারা সরাসরি পণ্য বান্ডেল আকারে বিক্রি করে।  বেশিরভাগ নির্মাতা বা মেনুফেকচারারের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।   

২. খুচরা বা রিটেইলার

যারা ব্যবসায় পরিচালনা করছে নির্মাতাদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে তাদেরকে খুচরা বা রিটেইলার বলা হয়।  এরা সরাসরি নির্মাতা থেকে পণ্য নিয়ে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।  অর্থাৎ, ক্রেতার সাথে এই বিজনেস মডেলের সম্পর্ক থাকে সরাসরি।   

এর ভেতরেই উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট অনেক রকম ভাগে একটি  Business Model ভাগ হয়ে যেতে পারে। 

বিভিন্ন হাইব্রিড মডেলের উদাহরণ হিসেবে কয়েকটির কথা উল্লেখ করা যাক

১. সাবস্ক্রিপশন মডেল

২. ই-কমার্স মডেল

৩. ফ্রিমিয়াম মডেল

৪. ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল

৫. অ্যাফিলিয়েট মডেল

৬. মার্কেটপ্লেস মডেল

৭. বান্ডেল মডেল

৮. পে অ্যাজ ইউ গো মডেল

৯. ব্রোকারেজ মডেল 

উপরের মডেলগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো-

১. সাবস্ক্রিপশন মডেলঃ

সাবস্ক্রিপশন মডেল হলো একটি ব্যাবসায় পরিচালনার অন্যতম কৌশল।  এই মডেলের মাধ্যমে কোনো গ্রাহক নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবাতে নির্দিষ্ট বিরতির মাধ্যমে অংশ নিতে পারে।  এককালীন বা বহুকালীন সময়সীমা নির্ধারণের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে এই মডেল সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হয়। 

বিভিন্ন ক্যাবল টেলিভিশন, স্যাটেলাইট চ্যানেল, মিউজিক সেলস ক্লাবের মতো বিজনেসগুলো এই মডেলের আওতায় পড়ে। 

২. ই-কমার্স মডেলঃ

ই-কমার্স মডেল এমন একটি বিজনেস মডেল যেখানে ইন্টার্নেটের মাধ্যমে কাজকে সহজ করা হয়।  অর্থাৎ, ইন্টার্নেট সুবিধা ব্যবহার করে এই মডেলের মাধ্যমে গ্রাহকেরা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন পণ্য বিনিময় করে মুনাফা অর্জনের সুযোগ পায়। 

ই-কমার্স বিজনেস মডেলের উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে দারাজ, রকমারি, অ্যামাজনের মতো কোম্পানিকে।  বর্তমান বিশ্বে অনেক ব্যবসায় মডেল ই-কমার্স ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে।  এটি মূলত ৬ ধরণের হয়ে থাকে।  সেগুলো হলো-

  • ব্যবসায় থেকে ব্যবসায় (Business to Business) 
  • ব্যবসায় থেকে গ্রাহক (Business to Consumer)
  • গ্রাহক থেকে গ্রাহক (Consumer to Consumer)
  • গ্রাহক থেকে ব্যবসায় (Consumer to Business)
  • ব্যবসায় থেকে প্রশাসন (Business to Administration)
  • গ্রাহক থেকে প্রশাসন (Consumer to Administration)

এই ই-কমার্স Business Model এর ৬টি মাধ্যম সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা বলা যাক। 

১।  ব্যবসায় থেকে ব্যবসায় (Business to Business)- এখানে বোঝায় যাচ্ছে যে একটি ব্যবসার সাথে অন্য আরেকটি ব্যবসার মেলবন্ধনকে বলা হয় ব্যবসায় থেকে ব্যবসায়।  ইংরেজিতে Business to Business এবং সংক্ষেপে B2B বলা হয়ে থাকে।  

সাধারণত, এ ব্যবসায়ের লেনদেন ভলিউম বা খরচের মাত্রা উচ্চ স্কেলের হয়ে থাকে।  ‘আলিবাবা’ একটি B2B মডেলের উদাহরণ।  

২।  ব্যবসায় থেকে গ্রাহক (Business to Consumer)- যে ব্যবসায়গুলো সরাসরি গ্রাহক বা ভোক্তাদের সাথে তাদের পণ্য বা সেবা সরবরাহ করে থাকে তাদেরকেই মূলত ব্যবসায় থেকে গ্রাহক বলে।  ইংরেজিতে Business to Consumer বলে।  এর সংক্ষিপ্ত নাম B2C ।  

এ ধরণের ব্যবসায়ের সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হলো, ওয়েবসাইটে সাজানো সকল পণ্য বা সেবা থেকে গ্রাহক বা ভোক্তারা খুব সহজেই তাদের কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি বেছে নিতে পারেন।  অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা কাপড়ের ব্যবসায় B2C এর আওতায় পড়ে। 

৩।  গ্রাহক থেকে গ্রাহক (Consumer to Consumer)- একটি ইলেক্ট্রনিক লেনদেনের মাধ্যমে এ ধরণের ব্যবসায় প্রসারিত হয় গ্রাহক থেকে গ্রাহকের মধ্যে।  অর্থাৎ, একজন ভোক্তা তার নিজস্ব যেকোনো পণ্য তার মতোই আরেকজন ভোক্তার কাছে বিক্রি করতে পারেন এ ধরণের ব্যবসার মাধ্যমে।  

ইংরেজি ভাষার Consumer to Consumer কে সংক্ষেপে C2C ও বলা হয়ে থাকে।  একজন মানুষের একটি গাড়ি আছে, তিনি যদি ই-কমার্স ব্যাবসার মডেল ভিত্তিক আরেকজন ভোক্তার কাছে তা বিক্রি করতে পারে তবেই সেটা C2C এর উদাহরণ হতে পারে।  

৪।  গ্রাহক থেকে ব্যবসায় (Consumer to Business)- উপরের উদাহরণগুলোর মতোই একইভাবে যখন কোনো ভোক্তা তার পণ্যকে ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়ে যেতে পারেন তখন সেটা গ্রাহক থেকে ব্যবসায় বা Consumer to Business হয়ে থাকে।  সংক্ষেপে একে বলা হয় C2B।  

এ ধরণের ব্যবসার আওতায় পড়ে বিভিন্ন মিউজিক বা ফটো সেলিং কোম্পানিগুলো।  এরা নিজেদের তৈরি জিনিস কোনো কোম্পানিকে সরবরাহ করে থাকে।  ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মও এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। 

৫।  ব্যবসায় থেকে প্রশাসন (Business to Administration)- এখানে ব্যবসায়ীদের সাথে এডমিন তথা সরকারী সংশ্লিষ্টতার মতো বিষয়ের কথা বোঝানো হচ্ছে।  এখানে ব্যবসায়ীরা তাদের সেবাকে সরকারী বিভিন্ন সংস্থা বা ফার্মকে সরবরাহ করে থাকে।  একে ব্যবসায় থেকে প্রশাসন বা সরকার বলা হয়।  ইংরেজিতে Business to Administration বা Business to Government বলে।  সংক্ষেপে B2A আবার B2G বলা হয়। 

বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানি, কর্মসংস্থান এজেন্সি বা সামাজিক নিরাপত্তাজনিত কাজ এই B2A মডেলের আওতায় পড়ে। 

৬।  গ্রাহক থেকে প্রশাসন (Consumer to Administration)- এ মডেলের মাধ্যমে গ্রাহক সরাসরি সরকারের সাথে বিনিময় করে থাকে।  যদিও এ ধরনের লেনদেনের সংখ্যা অনেক কম এবং এই প্রকল্পে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করা হয়ে থাকে।  ইংরেজিতে এটিকে Consumer to Administration বা Consumer to Government ও বলা হয়।  অর্থাৎ, সংক্ষেপে একে কখনো C2A আবার কখনো C2G বলা হয়।   

স্টেকহোল্ডার (Stakeholder) ও ডিস্টেন্স লার্নিং (Distance Learning) বা দূরত্ব শিক্ষার মতো প্রোজেক্টগুলো এই মডেলের উদাহরণ। 

৩. ফ্রিমিয়াম মডেলঃ

ফ্রিমিয়াম মডেলটিকে ভাগ করলে পাওয়া যায় ‘ফ্রি’ (Free) এবং ‘প্রিমিয়াম’ (Premium)।  বলা যায়, একজন গ্রাহক নির্ধারিত সেবার কোনো মূল ফিচার যখন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফ্রি ব্যবহার করার সুযোগ পায় তখন সেটাকে ফ্রিমিয়াম মডেল বলে।  

লিংকড ইন (Linked in) বা স্পটিফাই (Spotify) কোম্পানি এ ধরণের মডেল ব্যবহার করে ব্যবসায় পরিচালনা করে।   

৪. ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলঃ

এই মডেলটি হলো একটা নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবসায় তার প্রসার বাড়িয়ে নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে এর প্রশাখা বিস্তার করে।  বিস্তারিত প্রশাখাগুলোতে তখন সেই স্থানের পরিবেশগত বিবেচনায় পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়।  

প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় খাবার, হার্ডওয়্যার, ফিটনেস টুলস বা ইলেকট্রনিক্স পণ্যগুলো এই মডেলের অন্তর্ভূক্ত হয়।  অন্য দেশের কোনো রেস্টুরেন্ট যখন তার দেশের বাইরে কোনো শাখা খোলে সেটা এই মডেল অনুসরণ করে যেমন, KFC।  একইভাবে মোবাইল ফোন বা ইলেক্ট্রিক পণ্যের ফ্রাঞ্চাইজি মডেল রয়েছে অনেক।  

৫. অ্যাফিলিয়েট মডেলঃ

এই ধরণের বিজনেস মডেল নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা স্বত্ত্বার বিপণন ক্ষমতা ও বিস্তারের উপর নির্ভর করে।  কোনো একটি পণ্য বাজারে প্রচারের জন্য যখন কোন নির্দিষ্ট স্বত্ত্বাকে তা প্রদান করা হয়, সেই ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিক্রয়জনিত বিষয়টির দায়িত্বে থাকে এবং সে অনুযায়ীই লভ্যাংশ নির্ধারণ করা হয়। 

বিভিন্ন ব্লগিং (Blogging) বা প্রোডাক্ট রিভিউ (Product Review) এর পাশাপাশি বাংলাদেশের বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ বা ইন্টার্ন্যাশলান ভিত্তিক এনভাটো (Envato) এ ধরনের মডেলের উদাহরণ।   

৬. মার্কেটপ্লেস মডেলঃ

এই মডেলটিতে একজন ব্যক্তি হোস্ট হিসেবে তার পণ্যকে ক্রেতার কাছে বিনিময় করে থাকে যা অন্যান্য মডেলের সাথে তুলনা করলে কয়েক ধাপে সহজ, নিরাপদ ও সময় উপযোগী লেনদেন ব্যবস্থা। 

ফ্রিল্যান্সিং মাধ্যম এই মার্কেটপ্লেস মডেলের সবচেয়ে বড় উদাহরণ যেমন, ফাইভার (Fiverr) বা আপ ওয়ার্ক (Up Work) 

৭. বান্ডেল মডেলঃ

কখনো কখনো কোম্পানি একক গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রয়কে নিজেদের ব্যবসার উদ্বিগ্ন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।  সেক্ষেত্রে পণ্য বা সেবাকে মুষ্টিমেয় আকারে প্রচার করার উদ্দেশ্যে এই ধরণের বিজনেস মডেল তৈরি হয়ে থাকে।  যেটাকে সাধারণ ভাষায় বাল্ক (Bulk Sell) সেল বলা হয়।  

যেকোনো ধরণের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা কৃষি ভিত্তিক ফার্ম এ ধরণের Business Model অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে।

৮. পে অ্যাজ ইউ গো মডেলঃ

এই মডেলটি একটি নির্দিষ্ট ফি বা পেমেন্ট নেয়ার মাধ্যমে পরিষেবা গ্রহণের প্রস্তাবনা দিয়ে থাকে।  বিনিময়কৃত চার্জ কত হবে তা নির্ভর করে কতটা সেবা কত সময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর, যা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবর্তনও হতে পারে।  

ফিটনেস, পার্লার বা ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যবসায়গুলো এ ধরণের বিজনেস মডেলের মধ্যে পড়ে। 

৯. ব্রোকারেজ মডেলঃ

এই মডেলগুলো ক্রেতা এবং বিক্রেতার সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে গড়ে ওঠে।  শেয়ার করা অংশের নির্দিষ্ট পরিমাণ চুক্তির মাধ্যমে উঠে আসাকে লক্ষ্য করে এই মডেল সেট করা হয়ে থাকে। 

এ ধরণের বিজনেস মডেলের উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে রিয়েল স্টেট বা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে। 

উপরে আলোচনা করা মডেলগুলো ছাড়াও Business Model আরও অনেক রকম হতে পারে।  যেমন, Leasing model, Razor Model, Distribution Model, Crowdsourcing, Drop Shipping, Data Monetization, Licensing, Advertising ইত্যাদি।   

বিজনেস মডেল তৈরির নিয়মঃ 

যেহেতু একটি বিজনেস মডেল সেই নির্দিষ্ট ব্যবসার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে তাই বিভিন্ন সূক্ষ্ম বিষয়ের উপর খেয়াল রেখে বিজনেস মডেল প্রস্তুত করা আবশ্যক।  

ব্যবসার ধরণের উপর ব্যবসার পরিকল্পনা নির্ভর করায় কখনো কখনো Business Model মৌখিক হয়ে থাকে, চিত্রগ্রাফির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে, এবং লিখিত পরিকল্পনার মাধ্যমেও এর নকশা তৈরি করা হয়।  

Business Model তৈরির খেতে কিছু সাধারণ নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- 

টার্গেট অডিয়েন্সঃ 

একটি ব্যবসার সেবা বা পণ্যকে কার কাছে পৌঁছানো হবে সেটা নির্ধারণ করে নেয়া একটি শক্তিশালী বিজনেস মডেলের প্রধান অংশ।  বেশিরভাগ ব্যবসায়ের পরিকল্পনাগুলো এই সমস্যাটিকে মূখ্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।  

যখনই সেবা গ্রহণকারী কোন ক্যাটাগরির হবে সেটা সমাধানে আনা সম্ভব হবে ঠিক তখন থেকেই পরিকিল্পনার অন্যান্য অংশ তুলনামূলক গোছানো ও সহজ হতে শুরু করে।  এই টার্গেট অডিয়েন্স নির্ভর করতে পারে ক্রেতার জেন্ডার, বয়স, পেশা, অবস্থান অথবা রুচির মতো সেন্সিটিভ বিষয়ের উপর।  

মার্কেট অ্যানালাইসিসঃ 

যদিও এটা আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে একটি বিজনেস মডেলের প্রথম কাজ।  কারণ, কি সেবা প্রদান করা হবে তা সম্পর্কে ধারণা নিয়েই তো ব্যবসার শুরু হয়ে থাকে।  কিন্তু, এক্ষেত্রে এটিকে দ্বিতীয় স্থানে রাখার কারণ হলো, একটা ব্যবসার অডিয়েন্স সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকার পরই সেই ব্যবসার পণ্যকে সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়।  

বাজারে যা ইতিমধ্যেই আছে সেই একই জিনিস যদি কোনো পরিবর্তন ছাড়া আবার সামনে আনা হয় তা ক্রেতাদের চোখ এড়িয়ে যাবে।  কিন্তু, একই জিনিসের উপস্থাপন যদি আর সবগুলো থেকে আলাদা হয় তখন সেটা আস্তে আস্তে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করে।  

আবার বাজারে কোন জিনিসটার কতটা চাহিদা সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় এনেই পরবর্তী ধাপে আগানো উচিত।  আর এই কাজটা সহজ হয়ে যায় বাজারকে সঠিকভাবে অ্যানালাইসিসের পর। 

রিস্ক ম্যানেজমেন্টঃ 

পণ্য নির্বাচনের পরেই একটি বিজনেস মডেলের অংশ হওয়া উচিত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো একত্রিত করা।  ব্যবসাটিকে এগিয়ে নিতে কি ধরণের নেতিবাচক সম্ভাবনার সম্মুখীন হতে পারে তা সম্পর্কে আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখা।  পণ্যের ধরণের উপর নির্ভর করে এর উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং সরবরাহে কী ধরণের চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে তা লিপিবদ্ধ করা এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

ফান্ড এন্ড ইনকামঃ 

একটা ব্যবসায় যখন মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়েই শুরু হচ্ছে তখন এই বিষয়টি যে একটি বিজনেস মডেলের মূল আলোচ্য বিষয় হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।  কতটা ব্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কতটা উঠে আসছে, কতদিনে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া যাচ্ছে, ভবিষ্যতে কী ধরণের পদক্ষেপ এই ব্যবসার গতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিনিয়োগের পরিমাণ কতটা নির্ধারণ করতে হবে সেগুলো ভালোভাবে ধাপে ধাপে সাজানো এ অংশের কাজ।  এমনকি ব্রেক-ইভেন অর্থাৎ বিনিয়োগকৃত মূল অর্থ কতদিনে উঠে আসছে সেটা বিবেচনায় রাখা আবশ্যক। 

পেমেন্ট সিস্টেমঃ 

এটি একটি ব্যবসার মডেলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা প্রথমেই চোখে পড়ে না।  কিন্তু, পেমেন্ট সিস্টেম কিরকম হবে এটার উপর ক্রেতাদের সুবিধা-অসুবিধা অনেকাংশে নির্ভর করে।  দেখা যায়, Business Model এ  সবকিছু ভালোভাবে সাজিয়ে নিয়েও এই ছোট্ট বিষয়টি আসল সময়ে এসে বড় রকমের ঝামেলা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রফিট শেয়ারঃ 

উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনার পর বিজনেস মডেলের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় প্রফিট শেয়ারকে।  একটা কোম্পানির লভ্যাংশ আসলে কাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে তা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা।  উদ্যোক্তা একজন নাকি বহুজন শুধু মাত্র এ বিষয়টিই একমাত্র আলোচ্য নয়; যে জনবল এই পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে পণ্য গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়া পর্যন্ত কাজ করে তাদের পারিশ্রমিকসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা একটা সাবলীল বিজনেস মডেলের উদাহরণ।  

একটি বিজনেস মডেল ব্যবসার সঠিক মানদণ্ড দাঁড় করাতে সক্ষম।  কোম্পানির কাজ শুধুমাত্র পণ্য বিক্রয় করা নয়, এটি ব্যবসায়ীক কমিউনিটির অভ্যন্তরিণ ও বাহ্যিক সিস্টেমগুলো বজায় রাখতে অনেক দায়িত্ব পালন করে।  Business Model সেই সিস্টেমকে একটা শক্ত রূপ দিতে সাহায্য করে।একটি বিজনেস মডেল যেকোনো ব্যবসার বেড়ে ওঠা, দাঁড়িয়ে থাকা, এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাবার গতিকে নির্ধারণ করে।