বাজেট কাকে বলে? ব্যবসায় বাজেট কত প্রকার ও কি কি? বাজেট তৈরির গুরুত্ব

বাজেট শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু এটি কি বা কত প্রকারের হতে পারে সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই খুব বেশি জানি না। প্রচলিত অর্থে বাজেট হচ্ছে একটি দেশের এক বছরের সম্ভাব্য সব আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব-নিকাশের বিবরণী। একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য সরকারের সম্ভাব্য ব্যয়, রাজস্ব ও অন্যান্য আয়ের পূর্বাভাস। কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে কতটুকু আয় প্রাপ্তির আশা করে এবং বিভিন্ন খাতে কী পরিমাণ ব্যয় করতে চায়, তার সুবিন্যস্ত হিসাবকে প্রচলিত অর্থে Budget বলে থাকি।

তবে সার্বিকভাবে জীবনের প্রতিটি কাজে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বরাদ্দ রাখা এবং সেই অর্থ কোন খাতে কতটুকু পরিমাণ খরচ তা নির্ধারণ করাকে বাজেট বলতে পারি।

বাজেট কাকে বলে?

ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মূলত বাজেট বা Budget হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঐ ব্যবসার আয় ও ব্যয়ের পূর্বাভাস। এটি একটি পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে ব্যবসাটি পরিচালনা, আয় বাড়ানো এবং খরচ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য থাকে। ব্যবসার ক্ষেত্রে এটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণ, মূলধন বিনিয়োগ, অপারেশনাল খরচ এবং সম্ভাব্য মুনাফার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এটি সঠিকভাবে তৈরি ও পরিচালনা করা হলে ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য অর্জন করা সহজ হয়। 

Budget দুইটি মূল স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে থাকে: আয় এবং ব্যয়। আয় বলতে বোঝায় যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কত অর্থ উপার্জন করবে। ব্যয় বলতে বোঝায় যে, সেই সময়ের মধ্যে কতটা অর্থ ব্যয় করা হবে। 

বাজেট একটি বিশদ পরিকল্পনা দেয়, যা নিশ্চিত করে যে আয় ব্যয়ের তুলনায় বেশি থাকবে বা ব্যয় এমনভাবে করা হবে যাতে ভবিষ্যতে অর্থের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়। 

ব্যবসায় বাজেট কত প্রকার ও কি কি?

Budget এর  অনেক ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। একেক খাতের বাজেটের ধরন ও বৈশিষ্ট্যও একেক রকম। তবে আজকের আলোচনায় ব্যবসায় এটি কত ধরনের হয়ে থাকে শুধুমাত্র  সে সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হবে।

ব্যবসায় বিভিন্ন প্রকার বাজেট তৈরি করা হয়ে থাকে। এগুলি সাধারণত নির্দিষ্ট লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে দারুণ সহায়তা করে। সাধারণত ব্যবসায়ে নিম্নলিখিত প্রকারের দেখা যায়:

১. অপারেটিং বা Operating Budget

অপারেটিং বাজেট হলো কোম্পানির নিয়মিত কার্যক্রমের জন্য আয় ও ব্যয়ের পূর্বাভাস। এতে মূলত বিক্রয়, উৎপাদন খরচ, পরিচালন খরচ, বেতন ইত্যাদির স্পষ্ট হিসাব বর্ণিত থাকে।

অপারেটিং বাজেটের মাধ্যমে একটি কোম্পানি তাদের সাধারণ কার্যক্রম কিভাবে চলবে তা নির্ধারণ করতে পারে।

২. ক্যাপিটাল বা Capital Budget

যখন দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য করা হয় তখন এটিকে বলা হয় ক্যাপিটাল বাজেট

বড় বড় প্রকল্প যেমন যন্ত্রপাতি ক্রয়, নতুন শাখা খোলা বা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য ব্যয়ের পূর্বাভাস এখানে থাকে। এটি ব্যবসায়ের প্রসার এবং উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩. ক্যাশ ফ্লো বা Cash Flow Budget

ক্যাশ ফ্লো বাজেট একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কী পরিমাণ নগদ অর্থ আসবে এবং ব্যয় হবে তার পরিকল্পনা করে।

এই বাজেটের মাধ্যমে একটি কোম্পানি নিশ্চিত হতে পারে যে তাদের নগদ অর্থের প্রবাহ কতদিন স্থিতিশীল থাকবে এবং কতদিনে তারা তাদের আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে।

৪. স্ট্যাটিক বা Static Budget

স্ট্যাটিক বাজেট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থিরভাবে তৈরি করা হয় এবং সাধারণত পরিবর্তন করা হয় না। এটি বড় প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থায় বেশি ব্যবহৃত হয় যেখানে পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী খরচ হয়।

৫. ফ্লেক্সিবল বা Flexible Budget

ফ্লেক্সিবল বাজেট অপারেটিং পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তনশীল। এটি বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয় যখন আয় বা উৎপাদন লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ, যদি বিক্রয়ের লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়, তখন এটিও পরিবর্তন করা হয়।

৬. মাস্টার বা Master Budget

মাস্টার বাজেট হলো একটি সমন্বিত Budget যা একটি কোম্পানির সবকিছুকেই মোটামুটি কভার করতে পারে। এটি অপারেটিং, ক্যাপিটাল, ক্যাশ ফ্লো সহ অন্যান্য বাজেটের সাথে মিলিত হয়ে একটি সামগ্রিক আর্থিক পরিকল্পনা গঠন করে।

৭. বিক্রয় বা Sales Budget

বিক্রয় বাজেট হলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানির কতটা বিক্রয় হবে তার সুস্পষ্ট ধারণা সম্বলিত পরিকল্পনা।

এটি ব্যবসায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিক্রয় থেকেই কোম্পানির আয়ের মূল উৎস আসে। এই ধরণের ভিত্তিতে উৎপাদন এবং অন্যান্য খরচ নির্ধারিত হয়।

৮. উৎপাদন বা Production Budget

এই  ধরণের মাধ্যমে কতটা পণ্য উৎপাদিত হবে এবং উৎপাদন খরচ কতটা হবে তার পরিকল্পনা করা হয়।

উৎপাদন বাজেট বিক্রয় বাজেটের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এবং এর মাধ্যমে কোম্পানি তাদের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে।

আরো পড়ুন: একাউন্টিং এবং বুককিপিং কাকে বলে? এদের মধ্যে পার্থক্য

ব্যবসায় বাজেট কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ব্যবসা শুরু করার আগেই বেশ অনেকগুলো কাজ করতে হয়, এর মধ্যে ব্যবসায়ের Budget করাটাও অন্যতম। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট ব্যবসাগুলো ব্যর্থ হওয়ার পেছনে অন্যতম কিছু কারণ হলো – দাম এবং খরচে অসামঞ্জস্যতা, লক্ষ্য স্থির না থাকা এবং বাজেট শেষ হয়ে যাওয়া! ব্যবসার এই সমস্যা গুলো পরিকল্পিত ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বাজেট প্রস্ততের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। 

একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, Budget করার পূর্বেই, আপনার ব্যবসার লক্ষ্য ঠিক করে নিতে হবে। সে অনুযায়ী আপনি এটি তৈরি করলে ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। এটি শুধুমাত্র একটি আর্থিক পরিকল্পনা নয়, বরং এটি একটি প্রক্রিয়া যা ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে। বাজেট ছাড়া কোনো ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ এর মাধ্যমে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, আয় বাড়ানো এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিকল্পনা করা যায়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:

খরচ নিয়ন্ত্রণ

বাজেটের মাধ্যমে কোম্পানি তাদের খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অনুযায়ী ব্যয় নির্ধারিত হলে কোন খাতে কতটা খরচ করতে হবে তা স্পষ্ট হয়ে যায়, ফলে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়ানো যায়। এটি ছাড়া খরচ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না, যা কোম্পানির আর্থিক সংকটে ফেলার কারণ হতে পারে।

আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ

বাজেট তৈরির মাধ্যমে কোম্পানি তাদের ভবিষ্যৎ আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। এটি কোম্পানিকে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা করার সুযোগ দেয়। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের সঠিক দিক নির্দেশনা পাওয়ার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।

সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার

বাজেটের মাধ্যমে একটি কোম্পানি তাদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। উৎপাদন, বিপণন, এবং পরিচালনার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিভাবে সম্পদ ব্যয় হবে তা এটি দ্বারা পরিকল্পনা করা হয়। এর ফলে অপচয় এড়ানো যায় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব হয়।

নগদ প্রবাহের স্থিতিশীলতা

ক্যাশ ফ্লো বাজেটের মাধ্যমে কোম্পানি তাদের নগদ অর্থ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি কোম্পানির নগদ অর্থের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কোম্পানিকে আর্থিক ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে।

পারফরম্যান্স মূল্যায়ন

Budget একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল যা কোম্পানির পারফরম্যান্স মূল্যায়নে সাহায্য করে। এটিতে নির্ধারিত লক্ষ্য এবং ফলাফল তুলনা করে কোম্পানি বুঝতে পারে তাদের কোন খাতে উন্নতি দরকার এবং কোন খাতে তারা সফলতা অর্জন করছে।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

Budget তৈরির মাধ্যমে কোম্পানি তাদের ঝুঁকি নির্ধারণ এবং তা মোকাবিলা করার কৌশল তৈরি করতে পারে। নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় বৃদ্ধি বা আয় হ্রাসের সম্ভাবনা থাকলে এইটকে সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায় এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির জন্য প্রস্তুতি নেয়া যায়।

ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ

বাজেট একটি কোম্পানির জন্য ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগের ব্যয় এবং আয়ের পূর্বাভাস দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যক্তিরা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। 

কোম্পানির আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা

বাজেট কোম্পানির আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি নিশ্চিত করে যে কোম্পানির আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য থাকবে এবং তারা অতিরিক্ত ঋণগ্রস্ত হবে না।

কর্মীদের দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি

একটি স্পষ্ট Budget কর্মীদের দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করে। বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী কর্মীরা তাদের কাজের প্রতি সচেতন থাকে এবং প্রতিটি বিভাগের কর্মীরা নিজেদের ভূমিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা পায়।

বাজেটিং মেথড, বাজেট ফোরকাস্টিং পরিকল্পনা

বাজেটিং মেথড, বাজেট ফোরকাস্টিং এবং পরিপূর্ণ পরিকল্পনা প্রতিটি ব্যবসা, পরিবার বা ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এগুলো শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবিষ্যতের আর্থিক প্রস্তুতি নয়, বরং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ কীভাবে সঠিক ও সফলভাবে পরিচালনা করতে হবে তার একটি পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা দেয়। চলুন এবার বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। 

বাজেটিং মেথড কি?

বাজেটিং হল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সম্পদ বা মূলধন পরিচালনার পরিকল্পনা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক আয়ের একটি সঠিক হিসাব তৈরি করে, কীভাবে অর্থ ব্যয় করা হবে তা নির্ধারণ করা হয়। এটি খরচ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় এবং আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করে।

যেমন ধরা যাক 'ক' ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের Budget ধরা হয়েছে 'খ' টাকা। এখন প্রতিষ্ঠানটি এই অর্থকে সব কিভাবে ব্যবহার করে তা দিয়ে মুনাফা ধরে রেখে ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করতে পারবে তাই হলো বাজেটিং ম্যাথড বা Budgeting Method.

বাজেটিংয়ের মেথডের ধরনণসমূহ

বাজেট তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে এবং প্রতিটি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক চাহিদা অনুযায়ী আলাদা হতে পারে। এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু বাজেটিং পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হল।

১. শূন্য-ভিত্তিক বাজেট (Zero-based Budget)

এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি আয়ের টাকা কোন কাজে খরচ করা হবে তা আগে থেকে নির্ধারণ করা হয় এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, যেখানে মাস শেষে আপনার ব্যালান্স থাকবে শূন্য। এর মানে, আপনি আয়ের প্রতিটি টাকাই সঠিক কাজে লাগাচ্ছেন, যা সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ঋণ পরিশোধ, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচে ব্যবহৃত হবে।

২. ৫০/৩০/২০ বাজেট নিয়ম (50/30/20 Budget Rule)

এই পদ্ধতিতে আপনার আয়ের ৫০% প্রয়োজনীয় খরচের জন্য বরাদ্দ করা হয় যেমন বাড়ি ভাড়া, খাদ্য এবং পরিবহন; ৩০% চাহিদার জন্য, যেমন বিনোদন, অবকাশ, এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ; এবং বাকি ২০% সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য।

৩. ইনক্রিমেন্টাল বাজেটিং (Incremental Budgeting)

এটি বাজেট প্রণয়নের একটি সহজ পদ্ধতি যেখানে আগের বছরের বাজেটের উপর নির্ভর করে নতুন Budget করা হয়। বলাই বাহুল্য, নতুন বাজেটে সামান্য পরিবর্তন করা ছাড়া আর তেমন কিছুই নতুনভাবে যোগ করা হয় না। অর্থাৎ, পূর্ববর্তী বাজেটের উপরে কিছু শতাংশ যোগ বা বিয়োগ করে বর্তমান বাজেট তৈরি করা হয়। এটি বিশেষভাবে সুবিধাজনক যেসব প্রতিষ্ঠান স্থায়ী আয়ের মধ্যে থাকে এবং ব্যয় খুব একটা পরিবর্তন হয় না।

৪. প্রায়োরিটি-ভিত্তিক বাজেটিং (Priority-based Budgeting)

এই পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য এবং প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে Budget তৈরি করা হয়। অর্থাৎ আপনার ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্যটি আসলে কী, তা বিবেচনায় রেখে এই ধরণ করা হয়। এটি ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যাপক কার্যকর এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী বা সৃষ্টিশীল কাজের জন্য দারুণ সহায়ক।

বাজেট ফোরকাস্টিং কি?

বাজেট ফোরকাস্টিং হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে কীভাবে আর্থিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে তা অনুমান করা হয়। এটি ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নির্ভর করে বিভিন্ন আর্থিক তথ্য, প্রবণতা এবং পরিস্থিতির বিশ্লেষণের উপর।

বাজেট ফোরকাস্টিংয়ের গুরুত্ব

ফোরকাস্টিং অর্থাৎ পূর্বাভাস দেওয়া ব্যবসায়িক এবং ব্যক্তিগত জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে পারি।

নিচে এটির ফোরকাস্টিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

খরচ নিয়ন্ত্রণ

বাজেট ফোরকাস্টিংয়ের মাধ্যমে আপনি ভবিষ্যতের খরচের ধরণ সম্পর্কে অনুমান করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। এটি আপনাকে অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে রক্ষা করবে এবং খরচের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

ফোরকাস্টিং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়ক। আপনি ভবিষ্যতের সঞ্চয় বা বিনিয়োগ পরিকল্পনা করতে পারেন, পাশাপাশি ঋণ পরিশোধ বা অন্যান্য আর্থিক চাহিদা মোকাবেলা করতে পারবেন।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

আর্থিক পূর্বাভাসের মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য ঝুঁকির মোকাবেলার কৌশল তৈরি করতে পারেন। এটি ব্যবসা বা ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।

বাজেট পরিকল্পনা কি?

বাজেট পরিকল্পনা হল একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আয় এবং ব্যয়ের পরিকল্পনা। এটি আপনাকে আপনার আর্থিক লক্ষ্যগুলি নির্ধারণ এবং অর্জন করতে সাহায্য করবে। এটি দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য স্থাপন, খরচ নিয়ন্ত্রণ, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের জন্য অপরিহার্য।

বাজেট পরিকল্পনার গুরুত্ব

বাজেট পরিকল্পনা শুধুমাত্র বর্তমানের আর্থিক স্থিতি বজায় রাখতে নয়, ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়ক।

আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ - বাজেট পরিকল্পনা আপনাকে সুনির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। এটি ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যেমন বাড়ি কেনা, উচ্চশিক্ষা বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ব্যয় নিয়ন্ত্রণ - খরচের বিভিন্ন ধরণ বিশ্লেষণ করে বাজেট পরিকল্পনা করার মাধ্যমে আপনি কোন খরচ কমাতে পারেন এবং কোথায় বিনিয়োগ করতে পারেন তা নির্ধারণ করতে পারবেন।

সঞ্চয় বাড়ানো - Budget পরিকল্পনা ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের একটি মূল হাতিয়ার। এটি আপনার সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ায়, যার ফলে ভবিষ্যতে আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হয়।

দুর্যোগের প্রস্তুতি -আর্থিক সংকট বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে Budget পরিকল্পনা আপনাকে প্রস্তুত থাকতে সহায়তা করে। যদি আপনার পূর্ব পরিকল্পনা করা থাকে, তবে আপনি এমন পরিস্থিতির জন্য আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন।

আরো পড়ুন: ব্যবসা পরিকল্পনা কাকে বলে? ব্যবসা পরিকল্পনার ধাপ সমূহ এবং ১২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় 

বাজেট পরিকল্পনার ধাপসমূহ

বাজেট পরিকল্পনা একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া যা ধাপে ধাপে পরিচালনা করতে হয়।

  1. আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন: প্রথম ধাপে আপনাকে আপনার বর্তমান আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন করতে হবে। আপনার বর্তমান আয়, খরচ, ঋণ, এবং সঞ্চয়ের বিবরণ মূল্যায়ন করুন।
  2. লক্ষ্য নির্ধারণ: পরবর্তী ধাপে আপনাকে আপনার আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য উভয়ই নির্ধারণ করতে হবে।
  3. ব্যয়ের হিসাব তৈরি: বাজেট পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ব্যয়ের হিসাব তৈরি করা। এটি আপনার নিয়মিত খরচের তালিকা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে খরচ কমানো যায় তা দেখাবে।
  4. পরিকল্পনা বাস্তবায়ন: অবশেষে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। এটি আপনার দৈনন্দিন খরচের উপর নজরদারি করা এবং আপনার বাজেটের মধ্যে থাকাকে নিশ্চিত করে।

বাজেটিং, বাজেট ফোরকাস্টিং এবং পরিকল্পনা আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে Budget তৈরির মাধ্যমে আপনি শুধুমাত্র বর্তমানের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন না, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি সুরক্ষিত আর্থিক পরিকল্পনাও তৈরি করতে পারবেন।

বাজেট করার মাধ্যমে ব্যবসায়িক লক্ষ্যে পৌঁছাতে কেমন অর্থ প্রয়োজন এবং বিভিন্ন অনাকাঙ্খিত সমস্যা সমাধানের সময় যাতে হাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকে তা নিশ্চিত করে। ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ১ বছরের Budget করা কঠিন ব্যাপার, সেক্ষেত্রে ২/৩ মাসের Budget  করা ব্যবসার জন্য ফলপ্রসূ।