অনলাইন মার্কেটিং কি? কিভাবে অনলাইন মার্কেটিং শিখবেন এবং শুরু করবেন

বলা হয়ে থাকে মার্কেটিং করে হাওয়াও বিক্রি করা যায়। তাই মার্কেটিং যেকোনো ব্যবসার সফলতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। Marketing এর সফলতা নির্ভরকরে একটি সঠিক এবং যুগোপযোগী মার্কেটিং প্ল্যান এবং বিপণন কৌশল তৈরী করার এর উপর। যে পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে অনলাইন মার্কেটিং। 

অনলাইন মার্কেটিং বা Online Marketing কাকে বলে?

অনলাইন মার্কেটিং বা ইন্টারনেট মার্কেটিং হলো এমন একটি মার্কেটিং প্রক্রিয়া যাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা পরিষেবা প্রচার ও বিপণন করা হয়। এটি পণ্য ও সেবা প্রচার করার একটি আধুনিক পদ্ধতি, যা সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। 

সহজ কথায়, কোনো পণ্য বা সেবা কে কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর জন্য যে সব প্রচার প্রচারণা চালানো হয় তার সব কিছুই মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু যখন মার্কেটিং করার জন্য অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম কে বেঁছে নেয়া হয় তখন সেটা হয় অনলাইন মার্কেটিং বা Online  Marketing.

উদাহরণস্বরূপ:  সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM), কন্টেন্ট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO), ব্লগিং, পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ইত্যাদি।

অনলাইন মার্কেটিং VS ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর পার্থক্য

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটিং কৌশল হলো অনলাইন মার্কেটিং। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের জন্য প্ররোচনা বা উৎসাহ দেওয়ার অনন্য কৌশলের নাম হলো অনলাইন মার্কেটিং বা ই-মার্কেটিং

সুবিধা-অসুবিধা:

  • টার্গেটেড অডিয়েন্স এর নিকট পৌছাঁনো যায়।
  • এই ধরণের মার্কেটিং করতে বেশ টেকনিক্যাল জ্ঞানের দরকার হয়।

অন্যদিকে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং হলো ঐতিহ্যগত পদ্ধতিতে তথা রেডিও, টেলিভিশন, ম্যাগাজিন ইত্যাদির মাধ্যমে পণ্য বা সেবা প্রচার করা। 

সুবিধা-অসুবিধা:

  • এর মাধ্যমে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পণ্য বা সেবার প্রচার পৌছাঁনো সম্ভব।
  • বিজ্ঞাপন তৈরি ও প্রচারের খরচ অনেক বেশি।

নিচে Online Marketing  এবং  ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর মাঝে কিছু পার্থক্য তুলে ধরা হলঃ

বিষয়

অনলাইন মার্কেটিং

ট্রেডিশনাল মার্কেটিং

মাধ্যম

সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল, গুগল অ্যাড, ব্লগ, এবং ওয়েবসাইট ইত্যাদি ব্যবহার করে করা হয়।

টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, বিলবোর্ড, নিউজলেটার, ফ্লায়ার ইত্যাদি ব্যবহার করে করা হয়।

খরচ

কম খরচে বিজ্ঞাপন প্রচার করা সম্ভব।

বিজ্ঞাপনের জন্য প্রচুর বাজেট প্রয়োজন। বড় ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি কার্যকর।

অডিয়েন্স

এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট অডিয়েন্স এর নিকট পন্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দেয়া সম্ভব।

এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট অডিয়েন্স এর নিকট বিজ্ঞাপন দেয়ার সুযোগ নেই। সকলের জন্যই বিজ্ঞাপন তৈরি করতে হয়। 

ROI পরিমাপ

Return of Investment পরিমাপ করা সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী।

সহজে Return of Investment পরিমাপ করা যায় না, পরিমাপ করা গেলেও তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

যোগাযোগ

গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব।

এটি একমুখী যোগাযোগের মাধ্যম। গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া জানার সুযোগ সীমিত। 

ডাটা বিশ্লেষণ

ডাটা বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত বা কৌশল গ্রহন করা যায়।

ডাটা বিশ্লেষণের সুযোগ সীমিত।

আস্থা

গ্রাহকদের আস্থা অর্জন কঠিন।

গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা তৈরি সহজ।

প্রযুক্তিগত জ্ঞান

প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজন পরে।

তেমন প্রযুক্তিগত জ্ঞান লাগে না।

ডিজিটাল মার্কেটিং VS অনলাইন মার্কেটিং এর পার্থক্য

ডিজিটাল মার্কেটিং বা Digital Marketing বলতে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি ব্যবহার করে কোন পণ্য বা সেবার  প্রচার-প্রচারণাকে বুঝায় | বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও  ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে | ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এর চাহিদা দিন দিন খুব বেশি হচ্ছে | 

অনলাইন মার্কেটিং ছাড়াও মোবাইল মার্কেটিং, অ্যাপস, ডিজিটাল সাইনেজ ইত্যাদি ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত।

সুবিধা-অসুবিধা:

  • অনলাইন এর পাশাপাশি অফলাইনেও মার্কেটিং করা যায়।
  • টিভি, রেডিও, এবং বিলবোর্ড ব্যবহার করে বিশাল জনগোষ্ঠীর নিকট পৌছাঁনো যায়।
  • খরচ বেশি এবং টেকনিক্যাল জ্ঞানের প্রয়োজন পরে।

এইখানে Online এবং Traditional Marketing এর পার্থক্য দেওয়া হলো:

বিষয়

অনলাইন মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং

মাধ্যম

শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও মার্কেটিং করা যায়।

প্ল্যাটফর্ম

ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল অ্যাড ইত্যাদি।

টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, বিলবোর্ড, নিউজলেটার, ইত্যাদি ব্যবহার করে করা হয়।

ডাটা বিশ্লেষণ

ডাটা বিশ্লেষণ করা তুলনামূলক সহজ। 

ডাটা বিশ্লেষণ করা তুলনামূলক কঠিন।

টার্গেট

শুধুমাত্র অনলাইন সংশ্লিষ্ট ভোক্তাদের জন্য প্রচার করতে হয়।

অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ধরণের ভোক্তাদের টার্গেট করে প্রচার করা যায়।

খরচ

তুলনামূলক কম। 

তুলনামূলক বেশি।

পরিধি

তুলনামূলক কম। 

ব্যাপক।

Online Marketing এর ধরন বা পদ্ধতি বা প্রকার:

মার্কেটিং এর কথা উঠে আসলে বেশিরভাগ সময়ই সর্বপ্রথম মাথায় আসে সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ এর কথা। তারা দোকান বা বিভিন্ন কোম্পানিতে যাবে, পণ্যে বা সেবার প্রচার করবে, অর্ডার নিবে এই সব। কিন্তু ইন্টারনেট এর দুনিয়ায় নিজের পণ্য বা সেবা ছড়িয়ে দেবার কাজটি হয়ে উঠেছে অনেক বেশি সহজ। শুধুমাত্র অফলাইনেই এখন ব্যবসা সীমাবদ্ধ নেই। অনলাইনে মার্কেটিং এর মাধ্যমেও কম পরিশ্রমে প্রচুর মানুষের কাছে নিজের পণ্যকে পরিচিত করাবার বিরাট সুযোগ রয়েছে।

এই ধরণের মার্কেটিং এর বেশ কিছু কৌশল বা পদ্ধতি রয়েছে। নিচে তা তুলে ধরা হলোঃ

  1. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  2. পেইড অ্যাডভার্টাইজিং
  3. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)
  4. ই-মেইল মার্কেটিং
  5. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
  6. কন্টেন্ট মার্কেটিং
  7. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

অনলাইন মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  অন্যতম।  বর্তমানে বড় বড় কোম্পানিও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের মার্কেটিং করে থাকেন।  অনলাইন বিসনেসের সফলতা ও ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এর উপর। বাংলাদেশে ব্যবহৃত বেশ কিছু জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবসার প্রচারের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয় তা হচ্ছে,- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব, পিনটারেস্ট, টেলিগ্রাম ইত্যাদি। 

কিভাবে কাজ করে?

অডিয়েন্স তৈরি: প্রথমে বুঝতে হবে কার কাছে পৌঁছাতে চাওয়া হচ্ছে। বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, আগ্রহ ইত্যাদির ভিত্তিতে অডিয়েন্স তৈরি করা হয়।

আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি: ছবি, ভিডিও, ব্লগ পোস্ট ইত্যাদি তৈরি করে Target Audience দের আকর্ষণ করা হয়। এই কন্টেন্টগুলো ব্র্যান্ডের মূল্য এবং সুবিধাগুলোকে তুলে ধরে।

পোস্ট শিডিউলিং: কন্টেন্টগুলো কখন পোস্ট করতে হবে, সেটি নির্ধারণ করে একটি শিডিউল তৈরি করা হয়।
গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ: কমেন্টের জবাব দেওয়া, মেসেজের উত্তর দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়।

ডেটা বিশ্লেষণ: প্রতিটি ক্যাম্পেইনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করা হয়।

সুবিধা:

  • কম খরচে বিশাল সংখ্যক Target Audience এর কাছে ব্র্যান্ড পরিচিতি বাড়ানো যায়।
  • গ্রাহকদের সাথে সরাসরি ইন্টারএকশন করা যায়।
  • এনালিটিক্সের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ভাবে ক্যাম্পেইনের কার্যকারিতা নিরূপণ করা যায়।

ব্যবহৃত টুলস:

  • এড এবং ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্য Facebook Ads Manager, Google Ads.
  • ছবি এবং ভিডিও ডিজাইনের জন্য Canva, Adobe Photoshop বা Illustrator, Adobe Spark ইত্যাদি। 
  • বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে পোস্ট শিডিউল এবং বিশ্লেষণ করার জন্য Hootsuite.
  • কন্টেন্ট ম্যানেজ করতে Buffer.
  • সোশ্যাল মিডিয়া এনালাইটিক্স এবং ম্যানেজমেন্ট টুল হিসেবে Sprout Social.

পেইড অ্যাডভার্টাইজিং

পেইড অ্যাডভার্টাইজিং হল একটি Online Marketing এর একটি কৌশল। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন,- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদিতে পেইড সিস্টেমে তাদের প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করানো যায়। এর মাধ্যমে খুব দ্রুত টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছানো যায়। পেইড অ্যাড অন্যান্য কম্পিটিটরদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে সার্চ ইঞ্জিন এর মাধ্যমে।

কিভাবে কাজ করে?

  • বিজ্ঞাপনদাতাকে প্রথমে কি উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন দিবে তা ঠিক করতে হবে। যেমন,- Brand Awarness, Sales, Website Traffic ইত্যাদি।
  • ইন্টারেস্ট, বয়স, পেশা, স্থান, লিঙ্গ এসব নিয়ে Audience তৈরি করতে হবে।
  • বিজ্ঞাপনের জন্য একটি বাজেট নির্ধারণ করা অর্থ্যাৎ কত দিন Ad চলবে, কতজনের কাছে পৌঁছাবে এই সব।
  • প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করা। যেমন, Facebook Ads, Youtube Ads, Google Ads ইত্যাদি।
  • বিজ্ঞাপন চালানোর পর তার তথ্য বিশ্লেষণ করা এবং ফলাফল অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ।

সুবিধা:

  • দ্রুত Target Audience এর নিকট পৌঁছানো যায় এবং ফলাফল পাওয়া যায়।
  • সহজেই বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা ট্র্যাক করা যায়।
  • যেকোন সময় বিজ্ঞাপন শুরু বা বন্ধ করে দেয়া যায়।

ব্যবহৃত টুলস:

  • ওয়েবসাইট ভিজিট করা গ্রাহকদের Retarget করার জন্য AdRoll, Perfect Audience:.
  • ডিজপ্লে অ্যাড টুলস হিসেবে Taboola, Outbrain.
  • এনালিটিক্স হিসেবে Google Analytics:, Facebook Pixel.
  • সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডভার্টাইজিং টুলস এর জন্য Facebook Ads Manager, LinkedIn Ads, Twitter Ads ইত্যাদি।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)

এসইও হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিনের কিছু কৌশল যার মাধ্যমে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের (যেমন : Google, Bing, Yahoo, Yandex) প্রথম দিকে একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজে (SERP) র‍্যাঙ্ক করানো যায়। 

উচ্চ র‌্যাঙ্কিংয়ের ফলে ওয়েবসাইটে আরও বেশি পরিমাণে অর্গানিক ট্রাফিক আসে। যার ফলে প্রোডাক্ট বা সেবাকে অধিক গ্রাহকদের কাছে প্রচার করা সম্ভব হয়।

এসইও কিভাবে কাজ করে?

এসইও মূলত সার্চ ইঞ্জিনের কাজের ধরন, কীওয়ার্ড, এবং ব্যবহারকারীদের আচরণ বিশ্লেষণ করে ওয়েবসাইটকে আরও কার্যকর এবং ব্যবহারবান্ধব করে তোলে।

SEO সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদম এই ডাটাবেজকে বিশ্লেষণ করে এবং কিওয়ার্ড, কন্টেন্টের কোয়ালিটি, ব্যাকলিংক, স্পিড ইত্যাদির উপর বিবেচনা করে সার্চ রেজাল্ট তৈরি করে। 

সুবিধা:

  • এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে ভালো ফলাফল দিতে পারে।
  • এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে অনেক বেশি ট্রাফিক আনা যায়।
  • উপরের দিকে র‍্যাঙ্ক করা ওয়েবসাইটগুলোকে গ্রাহকরা আরো বেশি বিশ্বাস করে। ফলে গ্রাহকের মনে আস্থার সৃষ্টি হয়।

SEO তে ব্যবহৃত টুলস

  • ওয়েবসাইটের ভিজিটর এবং পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের জন্য Google Analytics, Google Search Console, Hotjar ইত্যাদি।
  • কিওয়ার্ড রিসার্সের জন্য Ahrefs, SEMRush, Google Keyword Planner, SEMRush ইত্যাদি।
  • ব্যাকলিংক চেক করার জন্য Moz , Ahrefs, Majestic SEO ইত্যাদি।
  • টেকনিক্যাল SEO এর জন্য Screaming Frog, GTmetrix, SEO Spider.
  • এসইও র‍্যাংকিং ট্র্যাকিং টুলস হিসেবে SERPWatcher, SEOquake, Rank Tracker ইত্যাদি জনপ্রিয়।

ই-মেইল মার্কেটিং

ই-মেইল মার্কেটিং হচ্ছে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করার একটি কার্যকরী মাধ্যম। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের অফার, পণ্য আপডেট এবং নিউজলেটার পাঠানো হয়। 

সুবিধা:

অন্যান্য মার্কেটিং মাধ্যমের তুলনায় ই-মেইল মার্কেটিং সাধারণত কম খরচে করা যায়। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অটোমেশন ব্যবহার করে একইসাথে নির্দিষ্ট সময়ে এবং বিপুল সংখ্যক টার্গেটেড অডিয়েন্সকে ইমেইল পাঠিয়ে পন্যের প্রচার করা যায়।

ই-মেইল মার্কেটিং কিভাবে করতে হয়?

এর জন্য প্রথমে লিড জেনারেশন বা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ইমেইল ঠিকানা সংগ্রহ করে একটি ই-মেইল তালিকা তৈরি করতে হবে। এরপর মেইল পাঠানোর জন্য একটি ই-মেইল প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করতে হবে। 

এরপর আকর্ষণীয় কন্টেন্ট, ছবি, টেমপ্লেট বা নিউজলেটার ইত্যাদি তৈরি করে পাঠাতে হবে। সবশেষে, ইমেইল ক্যাম্পেইনের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে হবে।

ই-মেইল মার্কেটিং এ ব্যবহৃত টুলস

Mailchimp: ই-মেইল ক্যাম্পেইন তৈরি ও পরিচালনার জন্য এবং একসাথে অনেকজনকে এক সাথে মেইল পাঠানোর সহজ এবং জনপ্রিয় টুল।

Constant Contact: ই-মেইল মার্কেটিং এবং অটোমেশন সেবা প্রদান করে।

HubSpot: একটি অল-ইন-ওয়ান টুল যা ই-মেইল মার্কেটিংসহ অন্যান্য মার্কেটিং সেবা দেয়।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হল এমন একটি মার্কেটিং কৌশল যেখানে সেলিব্রেটি বা অনলাইনে প্লাটফর্মে জনপ্রিয়, তাদের ব্যবহার করে কোনো পণ্য বা সেবার প্রচার করা হয়। এই ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের দর্শকদের কাছে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে রিভিউ প্রদান করে এবং তাদের কেনার জন্য উৎসাহিত করে।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ে ব্যবহৃত টুলস

  • ইনফ্লুয়েন্সার খোঁজার জন্য Upfluence, BuzzSumo, HypeAuditor ইত্যাদি।
  • AspireIQ, Traackr ক্যাম্পেইন ম্যানেজমেন্ট টুলস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • ক্যাম্পেইনের ফলাফল জানার জন্য Heepsy, Social Blade জনপ্রিয়।

কন্টেন্ট মার্কেটিং

কন্টেন্ট মার্কেটিং হল এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করে গ্রাহকদের আকর্ষণ, সম্পৃক্ততা এবং বিশ্বাস তৈরি করা হয়। এটি বিজ্ঞাপনের চেয়ে বেশি গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার উপায়।

কন্টেন্ট মার্কেটিং করার জন্য কিছু কাজ করতে হয়। যেমনঃ-

  • প্রথমে এই মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে। যেমন, - Lead Generation, Sales, Brandawarness, Website Traffic ইত্যাদি।
  • Buyer Persona অনুযায়ী Target Audience নির্ধারণ।
  • তথ্যবহুল এবং প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট তৈরি।
  • কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি তৈরি এবং পাবলিশ করা।
  • পারফরম্যান্স এনালাইসিস করা।

সুবিধা:

  • কন্টেন্ট গ্রাহকদের ক্রয় সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
  •  কন্টেন্ট মার্কেটিং খরচ কম এবং এর ফল দীর্ঘমেয়াদী।
  • মানসম্পন্ন কন্টেন্ট সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাংক করতে সহায়তা করে।

কন্টেন্ট মার্কেটিং এ ব্যবহৃত টুলস

  • কন্টেন্ট আইডিয়া পেতে এবং রিসার্চ সহায়তা পেতে Google Trends, AnswerThePublic, BuzzSumo টুলসগুলো ব্যবহৃত হয়।
  • লেখার গুণগত মান উন্নত এবং স্পেলিং ঠিক করার জন্য Grammarly, Hemingway Editor.
  • কন্টেন্ট তৈরি, ম্যানেজ এবং ট্র্যাক করার জন্য HubSpot, Wordpress.
  • ব্যবহারকারীদের কন্টেন্ট ইন্টারঅ্যাকশন বোঝার জন্য Hotjar ব্যবহৃত হয়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কমিশনের বিনিময়ে আপনার পণ্য প্রচার করতে দেওয়া। এটা অনেকটা বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার মতো, তবে এতে কোনো পণ্য সরবরাহ করতে হয় না বা কোনো স্টক রাখতে হয় না।

কিভাবে কাজ করে?

প্রথমে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে সাইন আপ করা বা Amazon Associates, ClickBank এই ধরণের অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে হয়। যোগদানের পর সেই সব কোম্পানি অ্যাফিলিয়েটদের একটি ইউনিক লিংক প্রদান করে।

অ্যাফিলিয়েটরা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে, বিভিন্ন মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন বা রিভিউ দিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণ করে। যখন কেউ এই লিঙ্ক ব্যবহার করে কোনো পণ্য কেনে, তখন অ্যাফিলিয়েটরা এই বিক্রয়ের উপর একটি নির্দিষ্ট কমিশন পেয়ে থাকে।

সুবিধা:

  • এক লিংক প্রচাররের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী ইনকাম আসতে পারে।
  • নিজের পণ্য বা স্টোর থাকার দরকার হয় না।
  • যেকোনো স্থান থেকে কাজ করা যায়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ ব্যবহৃত Tracking Tools

Tracking Tools গুলো আপনাকে বিস্তারিত তথ্য দিবে যে কোন লিঙ্ক থেকে কতজন ক্লিক করেছে, সেল কত এবং কত আয়।

১. Voluum: লিঙ্ক ট্র্যাকিং এবং পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের জন্য জনপ্রিয়।

২. ClickMeter: ক্লিক ট্র্যাকিং, কনভার্সন মনিটরিং এবং লিঙ্ক অপ্টিমাইজেশনের জন্য ব্যবহৃত।

৩. Post Affiliate Pro: অ্যাফিলিয়েট কার্যক্রমের ট্র্যাকিং এবং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।

৪. Bitly: লিঙ্ক শর্টনার এবং ক্লিক ট্র্যাকিং টুল।

কিভাবে অনলাইন মার্কেটিং শিখবেন?

বর্তমানে নিজের ব্যবসা বা অন্যের ব্যবসাকে বৃদ্ধির জন্য অথবা ক্যারিয়ার হিসেবে গড়তে অনলাইন মার্কেটিং হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শিখতে হলে সঠিক গাইডলাইন, কৌশল, এবং ধারাবাহিক প্র্যাকটিসের প্রয়োজন।

১। অনলাইন মার্কেটিং এর বিভিন্ন সেক্টর যেমন, - SEO, SMM, E-mail Marketing, Content Marketing ইত্যাদি সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম Facebook, Google Ads, Instagram ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।

২। অনলাইন মার্কেটিং বিষয়ক বিভিন্ন বই, ব্লগ পড়তে হবে।

৩। অনেক ফ্রি এবং পেইড কোর্স পাওয়া যায়। সেগুলো দেখে এবং নিজের জন্য একটি ব্লগ বা সোশ্যাল মিডিয়া পেজ তৈরি করে প্র্যাকটিস শুরু করুন। এছাড়াও এ বিষয়ে পারদর্শীদের সাথে সরাসরি শিখতে পারেন।

৪। কোনো মার্কেটিং এজেন্সিতে ইন্টার্নশিপ বা ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।

৫। Online Marketing এ ব্যবহৃত টুলসগুলোর যথাযথ ব্যবহার শিখতে হবে।

৬। বিভিন্ন মার্কেটিং ইভেন্টে যোগ অথবা বিভিন্ন কমিউনিটি বিল্ডআপ করতে হবে। এতে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।

৭। বিভিন্ন মার্কেটিং এক্সপার্টদের ফলো করতে হবে। এতে তারা নতুন নতুন কৌশল এবং ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

কিভাবে অনলাইন মার্কেটিং শুরু করবেন?

সঠিকভাবে অনলাইন মার্কেটিং শুরু করতে হলে কিছু সুপরিকল্পিত ধাপ এবং কার্যকর কৌশল অনুসরণ করতে হয়। এটি কেবল পণ্য বা সেবা প্রচারের জন্যই নয়, গ্রাহকদের সাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন মার্কেটিং কার্যকরভাবে শুরু করার ধাপগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:

১. একটি সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করুন

অনলাইন মার্কেটিংয়ের প্রথম ধাপ হলো একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা তৈরি করা। আপনার ব্যবসার লক্ষ্য, পণ্য বা সেবার ধরণ, নির্ধারিত বাজেট এবং কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবেন তা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করুন। আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা, তাদের বয়স, অবস্থান এবং পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করুন। এগুলো বিশ্লেষণ করে একটি কার্যকরী মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করুন।

২. মানসম্পন্ন কন্টেন্ট তৈরি করুন

আপনার কন্টেন্টই হলো অনলাইন মার্কেটিংয়ের প্রাণ। একটি আকর্ষণীয় এবং তথ্যবহুল কন্টেন্ট গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে এবং তাদের বিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করে। ব্লগ, ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ইনফোগ্রাফিক, বা ই-বুক যেকোনো ধরনের কন্টেন্ট তৈরির সময় নিশ্চিত করুন যে সেটি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের জন্য মানানসই ও উপকারী।

৩. পেইড বিজ্ঞাপন ব্যবহার করুন

আপনার ব্যবসার প্রসার ঘটানোর জন্য পেইড বিজ্ঞাপন (Google Ads, Facebook Ads, Instagram Ads) একটি কার্যকরী পদ্ধতি। বিজ্ঞাপন চালানোর আগে নির্দিষ্ট অডিয়েন্স সেগমেন্ট (যেমন এলাকা, বয়স, পছন্দ) নির্বাচন করুন। সঠিক টার্গেটিংয়ের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনগুলো আরও কার্যকরী হবে এবং আপনার বিনিয়োগের যথার্থ ফলাফল পাওয়া যাবে।

৪. ওয়েবসাইট SEO অপ্টিমাইজ করুন

একটি কার্যকর অনলাইন মার্কেটিংয়ের জন্য ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO) করতে হবে। কীওয়ার্ড রিসার্চ, মেটা ট্যাগ, ব্যাকলিঙ্ক এবং টেকনিক্যাল SEO কৌশল ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে উপরের দিকে নিয়ে আসুন। একটি SEO-ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট আপনাকে অর্গানিক ট্রাফিক আনতে সাহায্য করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনার ব্যবসাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেবে।

৫. ইমেইল মার্কেটিং ব্যবহার করুন

ইমেইল মার্কেটিং একটি পুরনো তবে কার্যকর অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি। একটি ইমেইল লিস্ট তৈরি করুন এবং নিয়মিত আপনার গ্রাহকদের কাছে পণ্য, অফার, বা অন্যান্য আপডেট পাঠান। কাস্টমাইজড ইমেইল গ্রাহকদের ব্যক্তিগতভাবে আপনার ব্র্যান্ডের সাথে সংযুক্ত করে এবং তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।

৬. পারফরম্যান্স ট্র্যাকিং এবং অ্যানালাইসিস করুন

আপনার অনলাইন মার্কেটিং কার্যক্রমের ফলাফল বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Google Analytics, Facebook Insights, বা অন্যান্য ডেটা-ট্র্যাকিং টুলস ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন, কন্টেন্ট বা অন্যান্য মার্কেটিং প্রচেষ্টার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করুন। যদি কোনো কৌশল কাজ না করে, তাহলে তা পরিবর্তন করে নতুন এবং উন্নত কৌশল প্রয়োগ করুন।

৭. কাস্টমারের সাথে সংযোগ বজায় রাখুন

সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য চ্যানেলের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখুন। রেগুলার পোস্টিং, কাস্টমার ইনকোয়ারির উত্তর দেওয়া, এবং কাস্টমারদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করুন। এটি কেবল গ্রাহক ধরে রাখতেই সাহায্য করবে না, বরং নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করতেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

টিপস:

  • সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডের সাথে আপডেট থাকুন।
  • কন্টেন্টের ভিন্নতা রাখুন, যেমন ভিডিও, রিলস, এবং লাইভ সেশন।
  • মার্কেটিংয়ের নতুন টুলস এবং টেকনোলজি সম্পর্কে জানুন এবং প্রয়োগ করুন।