কোনো একটি কোম্পানি বা ব্যবসা যখন শুরু হয় তখন নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বা সেবাকে ভোক্তার কাছে বিক্রি করাই এর মূল উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু, কোম্পানি নতুন বা পুরাতন হোক না কেন, একটা পণ্যকে ভোক্তা নিকট বিক্রি করা খুবই চ্যালেন্জিং এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার হতে পারে।
আবার, শুধুমাত্র কিছু পণ্য বিক্রি করেই কোনো ব্যবসা একটি প্রতিযোগীতামূলক বাজারে টিকে থাকা সম্ভব হয় না। তার পাশাপাশি জানতে হয় বিক্রি বাড়ানো বিভিন্ন কার্যকরী কৌশল সমূহ। একটি কোম্পানিকে এমন কিছু কৌশল এবং উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে সেই কোম্পানিকে সফল এবং লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে হয়।
সেলস বৃদ্ধির বা বিক্রয় বাড়ানোর কৌশল বা উপায় সমূহ
পণ্য বা সেবাকে বিক্রি করার মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেবার বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। এমন কিছু কৌশল এবং উপায় হতে পারে:
- গ্রাহককে জানা এবং বোঝা
- ভালো সম্পর্ক তৈরি ও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা
- ব্যতিক্রমী অফার বা ডিসকাউন্ট প্রদান
- পণ্যের মান ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা
- বিভিন্ন রকম পেমেন্ট অপশন প্রদান
- বিপণন পরিকল্পনা এবং প্রচারণার কৌশল ঠিক রাখা
- শক্তিশালী Sales and Support প্ল্যাটফরম তৈরি করা
- রেফারেল (Referral) প্রোগ্রাম তৈরি করা
- ই-কমার্স-এ মনোযোগ দেওয়া
- কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধি করা
- বিক্রয় কৌশলে নতুনত্ব নিয়ে আসা
- বিক্রয় ফানেল মডেল তৈরি করা
আরো পড়ুন: মার্কেটিং প্ল্যান কি? বিভিন্ন ধরনের মার্কেটিং এর পদ্ধতিসমূহ
বিক্রয় বাড়িয়ে তোলার এরকম সাধারণ কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
১. গ্রাহককে বোঝাঃ
ব্যবসায় করতে গেলে গ্রাহক বা ভোক্তাকে বুঝতে পারা একটা ব্যবসার অনেক সমস্যা সমাধানের পথ। ভোক্তার রুচি, চাহিদা, কোন সেবাটি পছন্দ করছে বা কোনটি সম্পর্কে ধারণা খারাপ এসব বিষয় গবেষণা করে দেখতে হবে। তাদের এই প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্ব দেয়া এ অংশের মূল কাজ।
সেক্ষত্রে, কথা শোনার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। একজন ভোক্তা কী বলতে চায় সে সুযোগ করে দেয়া এবং তা ভালো করে বোঝার মাধ্যমে একটি কোম্পানির পণ্য বিক্রয় কৌশল সম্পর্কে ধারণা আসতে শুরু করবে।
কিছু ক্ষত্রে প্রশ্ন করে অনেক বিষয় নিজেই জেনে নেয়ার চেষ্টা করা যায়। এ পদ্ধতিকে স্পিন সেলিং (Spin Selling) বলে। পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বললে বিষয়টা হয় এমন-
- S- Situation: পরিস্থিতি অনুযায়ী একজন ভোক্তা কি চাচ্ছে তা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সেই চাওয়ার সাথে মিল রেখেই নিজের পণ্যকে সামনে আনতে হবে।
- P-Problem: প্রশ্ন করার মাধ্যমে কিছু সমস্যা উঠে আসবে। সেই সমস্যাকে সমাধান করতে করণীয় সকল বিষয়ের উপর তখন দৃষ্টি দিতে হবে
- I-Implication: সমাধান কিভাবে হবে তা বের করা সম্ভব হলেই কাজে নেমে পড়তে হবে। এমন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাজেশন (Suggestion) দিয়েও সাহায্য করতে হবে।
- N-Need Payoff: প্রশ্ন এমনভাবে করতে হবে যাতে করে ভোক্তা নিজেই তার সমস্যার বিষয়বস্তু নিয়ে আপনার কাছে আসে।
একেকজন গ্রাহক একেক রকম হবে, তাই তাদের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হয়। তাদের কথা বুঝতে না পারলে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের চাহিদা সম্পর্কে জেনে নেয়া উত্তম। এতে করে কোম্পানিটির প্রতি ওই গ্রাহকের একটি ভরসা তৈরি হয় যার ফলে বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে।
২. ভালো সম্পর্ক তৈরি করা ও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা
গ্রাহকের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করা একটি কোম্পানির বিক্রি বৃদ্ধির দারুণ কার্যকর পদ্ধতি। ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহককে সন্তুষ্ট রাখা উচিত। নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপনও এর মধ্যে একটি হতে পারে।
সেটা মেইলে নিউজলেটার দিয়ে, অনলাইনে চ্যাট চালিয়ে বা ব্যক্তিগতভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কাজকে সহজ করা যায়। তবে, একজন বিক্রেতার ভালো ব্যবহারই একটি কোম্পানির ভাবমূর্তিকে করে তোলে অনন্য।
গ্রাহকের সকল জিজ্ঞাসার সঠিক উত্তর দিতে হবে। দূর্ঘটনাবসত কোনো খারাপ পণ্য বা সেবা সামনে চলে আসলে তার জন্য নমনীয়তা দেখাতে হবে। এতে করে কাস্টমার একই জায়গায় বারবার যেতে ও তাদের পণ্য কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
৩. ব্যতিক্রমী অফার বা ডিসকাউন্ট প্রদান
যে পণ্য বিক্রি করা হবে তার সাথে বিভিন্ন অফার প্রদান করলে পণ্য কেনার প্রতি গ্রাহকদের আকর্ষণ তৈরি হয়। এতে করে কখনো কখনো পণ্য কেনার উদ্দেশ্যে বের না হয়েও শুধু অফার পেয়ে কেনার আগ্রহ বেড়ে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটা কিনলে একটা ফ্রি অফারে গ্রাহক বেশ আকর্ষণ বোধ করে। তাদের কাছে মনে হয় একটার দামে দুটি জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। আবার গিফট অফার করে বা কুপনের মাধ্যমে কিছু পাওয়ার আশায় গ্রাহক একটা পণ্যের প্রতি আগ্রহী হতে শুরু করে।
কোনো পণ্যে মূল্য ছাড় বা ডিসকাউন্ট দেয়ার বিষয়টাও বেশ আকর্ষণীয়। কোনো উৎসবকে ঘিরে সাধারণত এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে। এরকম ব্যতিক্রমী অফার প্রদানের মাধ্যমে নিজের ব্যবসাকে অন্যদের থেকে যেমন আলাদা করে তোলা যায় তেমন মুনাফা অর্জনের হার বৃদ্ধিও ঘটে।
আরো পড়ুন: Sales Promotion কি? সেলস প্রমোশনের প্রকার এবংকৌশল সমূহ
৪. পণ্যের মান ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা
যে পণ্যটিকে বিক্রি করার চেষ্টা করা হচ্ছে তা অনেক বেশি বিক্রি তখনই সম্ভব যখন পণ্যটি কিনে গ্রাহক নিজে মনে করবে যে তার লাভ হয়েছে। আর এক্ষেত্রে বিক্রয় বাড়ানোর কৌশল হিসাবে পণ্যের মান ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
বিভিন্ন অফার দেখে বা হঠাত করে মূল্য হ্রাস পাওয়ায় কেউ কেউ হয়তো একটি পণ্য পরীক্ষামূলকভাবে কিনে দেখলো। পণ্যের মান ভালো না হলে সে ওরম জিনিস দ্বিতীয়বার কিনবে না। আবার কেউ কিনতে গেলেও তাকে নিরুৎসাহিত করবে।
তাই, পণ্যের মান সম্পর্কে একবার কাস্টমারের ভরসা আদায় করা সম্ভব হলে সে পণ্য বিক্রির হার আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। বিক্রির বিভিন্ন কৌশল তখনই কার্যকর হয়।
কোম্পানির যারা ভোক্তা তাদের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলা একটা কোম্পানির জন্য অনেক বড় পাওয়া। পণ্য থেকে শুরু করে ব্যবসার বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করার মাধ্যমে ব্যবসাকে স্বচ্ছ করে তোলা জরুরি।
কখনো দেখা যায়, ওয়েবসাইটে এক রকম দাম দেখা যায় কিন্তু কেনার সময় বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে দামের পরিমাণ পরিবর্তন করে দেয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। পুনরায় এমন পণ্য কেনা থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
আবার কখনো কিছু পণ্যের উপর হিডেন চার্জ বসিয়েও গ্রাহককে কনফিউজড (Confused) করা হয়। এরকম পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
তাই, পণ্য সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখার মাধ্যমে কোম্পানির বিক্রির হার বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এককালীন বিক্রি হয়তো এসব পদ্ধতিতে করা সম্ভব, তবে এতে কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু (Brand Value) কমতে থাকে।
৫. কয়েক রকম পেমেন্ট অপশন প্রদান
কাস্টমারের সুবিধার্থে বিভিন্ন রকম পেমেন্ট মেথড একটা কোম্পানি যখন প্রদান করে তখন বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একেক জন ভোক্তা একেক রকমভাবে পেমেন্ট করতে পছন্দ করে।
কোনো একটা প্রতিষ্ঠান থেকে ভোক্তা যখন পণ্য ক্রয় করতে যায় তখন সে তার সুবিধামতো পেমেন্ট করার অপশন আশা করে। কেউ ক্যাশ, কেউ কার্ড কেউ বা অনলাইন মাধ্যমকে বেছে নেয়। এমতাবস্থায়, সকল ধরনের অপশন প্রদান করা গেলে ভোক্তার হয়রান হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৬. বিপণন পরিকল্পনা এবং প্রচারণার কৌশল ঠিক রাখাঃ
সঠিক বিপণন পরিকল্পনা (Marketing Plan) এবং প্রচারণার কৌশল (Marketing Strategy) তৈরী করার মাধ্যমে একটি কোম্পানি তার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ভোক্তাকে জানাতে সক্ষম হয়। প্রচারণা তথা বিজ্ঞাপন যে কোনো ব্যবসার খুব আদি একটি মাধ্যম। এই প্রচারণা সঠিক হওয়ার উপর নির্ভর করে বিক্রয় বৃদ্ধি।
অনেক ভাবেই বিজ্ঞাপন দেয়া হয়ে থাকে আজকাল। টেলিভিশন, পত্রিকা বা প্রচারণাপত্র তো আছেই; এর সাথে অনলাইন মার্কেটিং এখন খুব বেশি জনপ্রিয়। মানুষ এখন বেশিরভাগ সময় অনলাইনেই কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই যে কোনো পণ্য সম্পর্কে অনলাইনে খোঁজ খবর নেয়ার মাত্রা বেড়ে চলেছে।
তবে, কার কাছে পণ্য বিক্রি করতে চান অর্থাৎ আপনার টার্গেট অডিয়েন্স এবং কোন উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে এর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। যার আপনার পণ্য প্রয়োজন নেই এমন গ্রাহকের সামনে পণ্যের প্রচারণা করা বৃথা চেষ্টা।
প্রথম থেকেই বিক্রয়ের সঠিক পরিকল্পনা দাঁড় করানো উচিত। একটি কোম্পানির পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছে দেবার বিষয়টা ভালো করে পর্যালোচনা করলে এর একটা ধারণা পাওয়া যায়।
কার কাছে বিক্রি করবেন, কিভাবে বিক্রি করবেন, বাজার যাচাই করে মূল্য কতটা নির্ধারণ করবেন এসব বিবেচ্য বিষয়। এমনকি, পণ্য বিক্রির মাধ্যমে আপনি কতটা লাভ করতে পারছেন তা নির্ধারণ করে এগিয়ে গেলে পণ্য বিক্রয়ের প্রতি ধারণা বাড়ে।
এরকম সময় নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখা জরুরি। বাজারের পণ্য সরবরাহ ট্যাক (Track) রাখা থেকে শুরু করে নিজের কোম্পানির বিভিন্ন ডেটা (Data) পর্যবেক্ষণ করে এই পরিকল্পনা প্রস্তুত করে নেয়া ভালো।
৭. শক্তিশালী Sales and Support প্ল্যাটফরম তৈরি করাঃ
আপনার কোম্পানির পণ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে গ্রাহককে সহজ পথ তৈরি করে দিতে হবে। ব্র্যান্ডের পরিচয়কে এক্ষেত্রে করে তুলতে হবে শক্তিশালী। নাম না জানা কোনো জায়গা থেকে জিনিস কিনতে আপনার নিজেরও মন টানবে না। আপনি চাইবেন এমন কোথাও থেকে পণ্য ক্রয় করতে যে জায়গার প্রতি অনেক মানুষের আস্থা আছে।
একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যদি আপনি কোনো পণ্য বিক্রয় করে থাকেন সেটা সব দিক থেকে পরিপূর্ণ হতে হবে। ভোক্তা যা চাচ্ছে তা খুঁজে পেতে যেন তার বেগ পোহাতে না হয়।
সরাসরি দোকান থেকেই কিনুক বা অনলাইন থেকে, একজন ভোক্তা চাইবে গ্রহনযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান। ভোক্তার কাছে ওই কোম্পানি সম্পর্কে যদি শক্তিশালী ধারণা তৈরি হয় তবে সেটা রিপিট হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
ক্রেতা যদি সকল ক্ষেত্রে সঠিক সাপোর্ট পেয়ে থাকে সে কেনাকাটা করতে আরামবোধ করে। এতে করে বিক্রয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ওই কাস্টমারের ধারাবাহিক কেনাকাটা নিশ্চিত করা যায়।
৮. রেফারেল (Referral) প্রোগ্রাম তৈরি করা
এই কৌশলটি বিক্রয় বৃদ্ধির আরও একটি কার্যকর মাধ্যম। অফার বা ডিসকাউন্ট প্রদান করে যেমন গ্রাহককে অনেকটা আকর্ষণ করা সম্ভব হয়, তেমনি গ্রাহকের দ্বারাই অন্য গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাতে এ কৌশল সাহায্য করে।
কেনাকাটায় একজন গ্রাহককে পরিতৃপ্ত করতে পারলে সে তার পরিমণ্ডলের মানুষকে আপনার পণ্য সম্পর্কে প্রশংসা করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার পণ্য ক্রয় করা গ্রাহকের আশপাশের সকল মানুষকে আপনি সহজেই নিজস্ব গ্রাহকে রূপান্তর করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট ওই গ্রাহকের প্রতি আপনাকে একটু বেশি দৃষ্টি প্রদান করা প্রয়োজন। তার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো ধরনের অফার বা সুবিধা পেলে সে সহজেই ক্রয়কৃত পণ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হয়।
৯. ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তৈরীতে গুরুত্ব দেওয়া
আপনার ব্যবসার Online Presence তৈরি করা এখনকার দিনে বিক্রয় বৃদ্ধির বড় কৌশল। বেশিরভাগ ক্রেতাই এখন অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আপনার পণ্যটি যত বেশি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে থাকবে ততটাই তার দৃষ্টি আকর্ষণ হবার সম্ভাবনা বাড়বে।
এক্ষেত্রে, বিভিন্ন রকম অনলাইন কন্টেন্ট তৈরি করে আপনি বিক্রয় বাড়াতে পারেন। পণ্যের ভিজ্যুয়াল পেজেন্টেশন সে ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা যদি একজন ক্রেতা ডেসক্রিপশন পড়ে, ছবি ও ডিডিও দেখে পায় তবে পণ্যটি দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পায়।
অনলাইনে ভোক্তা ভিডিও দেখে পণ্যের মান বা ম্যাটেরিয়াল সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। নানা রকম ভিডিওর পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ায় লাইভ করা বা রিল ভিডিও প্রচারের মাধ্যমেও এ ধরনের বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল শক্তিশালী করে তোলা যায়।
১০. কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধি করা
কোনো কাজকে খুব সহজভাবে পরিচালনার জন্য মনোবল রাখা জরুরি। এই মনোবল তখনই আসে যখন সেই কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা একজনের থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শুধু মনোবলের উপর ভিত্তি করেই একেবারে না জানা সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
একজন বিক্রেতা যখন কোনো কাস্টমারকে তার পণ্য সম্পর্কে বলবে তখন সে বিষয়ে তার মনোবল থাকা বাঞ্ছনীয়। ভোক্তা কোনো পণ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তা যদি সুন্দর উত্তরের মাধ্যমে সে বুঝতে না পারে তখন ভোক্তার মনে এক ধরণের সন্দেহ তৈরি হতে পারে।
আবার, কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় বিক্রেতা পণ্য সম্পর্কে বেশি কথাই বলতে পারছে না। ওই মুহূর্তে ভোক্তার সেই স্থান থেকে পণ্য ক্রয়ের আগ্রহ কমতে থাকে। এমতাবস্থায় কোম্পানির কর্মচারীদের বিভিন্ন ট্রেইনিং বা মোটিভেশনের মাধ্যমে প্রস্তুত করা যায়।
১১. বিক্রয় কৌশলে নতুনত্ব নিয়ে আসা
যত ধরনের বিক্রির কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে তা সব সময় এক রকম থাকে না বা রাখা উচিত না। একঘেয়েমী প্রচারণা কখনো কখনো ভোক্তার আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে। বাজারে অন্যান্য পণ্য যেভাবে বিক্রি হচ্ছে তা থেকে একটু আলাদা চিন্তা করতে হবে নিজেদের কৌশলে।
সময়ের সাথে সাথে ভোক্তার কিছু দিক পরিবর্তন হয়ে যায়। মনে করুন, কোনো একটা মুভিকে কেন্দ্র করে সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। এমন সময় ভোক্তার ওই ধরনের আগ্রহকে ফোকাস করে যদি একেবারে অন্য রকম ঘারানার বিক্রয় কৌশল আপনি সামনে আনতে পারেন তা তৎক্ষণাৎ ভোক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
১২. বিক্রয় ফানেল মডেল তৈরি করা
বিক্রয় ফানেল বা Sales Funnel (Purchase Funnel) এক ধরনের বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল। এর মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে এক ধরনের ফ্রেমওয়ার্ক প্রদান করা হয়, যাতে ভোক্তা তার কেনাকাটার জার্নিটা উপভোগ করে। যাতে করে ভোক্তা কোন পণ্যটি ক্রয় করবে সে সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সেলস বৃদ্ধিতে করনীয় ও বর্জনীয় বিষয়ঃ
ব্যবসায় পরিচালনা করতে গেলে বিক্রয় কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে সবার খেয়াল থাকে। অনেক সময় সঠিকভাবে না জেনে পণ্য বিক্রয় করতে শুরু করলে মাঝপথে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই সেলস বৃদ্ধির কথাকে মাথায় রেখে জানতে হবে কী কী করা উচিত এবং কোন কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সেলস বৃদ্ধিতে এরকম কিছু করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সেলস বৃদ্ধিতে করণীয়ঃ
- পণ্যকে বিক্রি করতে হবে সেটা যেভাবেই হোক, এমন চ্যালঞ্জ প্রথমেই চলে আসলে তা অনেকাংশে বিক্রিয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই বিক্রয় বৃদ্ধির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কোম্পানির প্রতিটা সদস্যের সাথে এসব বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে যাতে করে সঠিক জ্ঞানটা প্রথম থেকেই জানা থাকে।
- বাজারজাতকরণ এবং বিক্রয় এই দুটি বিষয়কে পর্যালোচনা করে কোম্পানির পণ্যকে সঠিক সময়ে কতটা গ্রহনযোগ্য করে তোলা যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- বিক্রয় বৃদ্ধি করতে করণীয় নানান কাজের মধ্যে একটি হলো কোম্পানির কোন পণ্যের চাহিদা বাজারে এগিয়ে আছে তা সম্পর্কে জানা। মনে করুন, আপনার কোম্পানিতে তিন ধরনের পানীয় আছে। যেটির চাহিদা বেশি সেটির বৃদ্ধি বাড়াতে চাইলে বেশি চাহিদার পণ্যটির দিকে লক্ষ্য দিতে হবে।
- কিছু ক্ষেত্রে কোনো পণ্যের প্রোডাকশন বন্ধ করেও অন্য পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অনেক সময় দেখা যায় অনেক জনপ্রিয় কোনো পণ্য হঠাত করে মার্কেট আউট হয়ে যায়। এটিও পরিস্থিতি অনুযায়ী এক ধরনের করণীয় হতে পারে।
- পণ্য বিক্রয় বৃদ্ধিতে কখনো কখনো পণ্যটি একেবারে পরিবর্তন করে নতুনভাবে সামনে আনা যেতে পারে। দেখা গেল, একটি বাটার বানের চাহিদা অনেক কম। সেটাকে আবার অন্যান্য জেলি বা সুস্বাদু উপাদান দিয়ে নতুন করে বাজারে আনলে তার গ্রহণযোগ্যতা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেল। এমন করণীয় বিষয়গুলোর দিকেও খেয়াল রাখা যেতে পারে।
- শুনতে হবে বেশি তারপর বলতে হবে। সেলস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুটোই জরুরি। বিক্রয় বৃদ্ধিতে করণীয় কাজের মধ্যে এটি অনেক গুরুত্ব বহণ করে।
- প্রচারণার জন্য নানা রকম কৌশল খাটিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে আউট-অব-দ্য-বক্স (Out of the Box) চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সেলস বৃদ্ধিতে বর্জনীয়ঃ
- শুধুমাত্র কিভাবে পণ্য বিক্রয় করা হবে এদিকে ফোকাস দিয়ে রাখা ঠিক নয়। তাতে করে অন্যান্য বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখা কঠিন হয়ে যায়। ভালো জিনিস দেবার মাধ্যমেই মুনাফা উঠে আসবে কিভাবে সেদিকটা খেয়াল করতে হবে।
- অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দেয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনি যতটা দিতে পারবেন এর বাইরে যদি আপনি বেশি বলে ফেলেন তা সঠিক নয়। এতে করে কাস্টমার আস্থা হারায়।
- পণ্য ডেলিভারিতে বিলম্ব হলে ভোক্তার আগ্রহ কমতে থাকে। সঠিক সময় বজায় রাখা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রথমে দেয়ার চেষ্টা করুন, ফিডব্যাক আপনাআপনি উঠে আসবে। পণ্য বিক্রি করেই যদি তার ফিডব্যাক নিয়ে ভোক্তাকে বলতে থাকেন তাহলে বিরক্ত বাসা বাঁধতে পারে।
- একজন গ্রাহক আপনার পণ্যটি নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা তা ফলোআপ করুন। এ বিষয়ে অবহেলা বিক্রয় বৃদ্ধিতে এক ধরনের প্রভাব ফেলে।
- আপনার পণ্যটি কেনার জন্য এমন কোনো চাপ প্রয়োগ করা যাবে না যাতে ভোক্তার মাঝে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অনেক সময় একই জিনিস সম্পর্কে অনেক শুনলেও কিছুটা অবজ্ঞা সৃষ্টি হতে পারে।
- ভোক্তাকে কখনও ঠকানোর চিন্তা করবেন না। এতে সাময়িকভাবে আপনার পণ্য বিক্রয় হলেও পরবর্তীতে কাস্টমার হারিয়ে ফেলবেন।
- ভোক্তা হয়রানি হয় এমন বিষয়কে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, সেলস বৃদ্ধি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একদিনেই লাভবান হয়ে যাবেন এমন চিন্তা মাথায় আনা যাবে না। বাজার পর্যালোচনার মাধ্যমে আপনার সঠিক পণ্যটি সঠিক মানুষ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া গেলেই বিক্রয়ে উন্নতি হয়। তাই, ভালো উদ্দেশ্যকে লক্ষ্য করে আপনার পণ্যকে বিক্রয় করার জন্য সঠিক কৌশলগুলো অবলম্বন করা উচিত।